শুরু হয়েছে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি — শেষ হয়ে যেতে পারে মানবসভ্যতা!
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের বিলুপ্তি শুরু হয়েছে, মানুষ হয়ত টিকে থাকবে না।
বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জীবনের খুব স্বাভাবিক একটি অংশ। প্রতি শতাব্দীতেই কোনো না কোনো নতুন প্রজাতি খুঁজে পাওয়া যায়, আবার কোনো প্রজাতির অস্তিত্ব একদম হারিয়ে যায়।
কিন্তু ব্যাপক হারে বিলুপ্ত হওয়ার ঘটনা এ রকম স্বাভাবিক কোনো বিষয় না। আজ পর্যন্ত পৃথিবী এই গণহারে বিলুপ্ত হওয়ার ব্যাপারটি মোট ৫বার দেখেছে। শেষবার হয়েছিল ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে এবং সেই সময় ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞানীদের একটি দল সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখেছে, আমরা এখন ৬ নাম্বার গণবিলুপ্তি বা ব্যাপক হারে বিলুপ্তির একেবারে মাঝখানে আছি। এবং মানুষই হয়ত প্রথম প্রাণী যে এই গণবিলুপ্তিতে শেষ হয়ে যাবে।
দূষণ, প্রাণীদের বাসস্থান ধ্বংস, এবং ফলাফল হিসেবে মানুষের দিন শেষ—এইসব বিষয়ের গল্প নতুন না।
কিন্তু এই গবেষণাটি পৃথিবী শেষ হওয়ার ব্যাপারে অসংখ্য ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আলাদা কারণ এটি একদম নিখুঁত ও কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যাবে না এমন বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে হয়েছে।
ফসিল রেকর্ড ব্যবহার করে এই গবেষকদের দল বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিলুপ্তির হারের মধ্যে তুলনা করেছেন, এবং শেষপর্যন্ত কিছু অস্বাভাবিক ফলাফল দেখেছেন।
ফলাফল থেকে দেখা যায়, খুব রক্ষণশীলভাবে হিসাব করলেও এখন যে হারে কিছু প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটছে তা গণবিলুপ্তির মধ্যবর্তী সময়ের স্বাভাবিক হারের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি গতিতে ঘটছে। গবেষকরা প্রতিবেদনে লিখেছেন, আমরা এমনভাবে হিসাব করেছি যে আমাদের হিসাব এই বিলুপ্তি বিপর্যয়কে ছোট করে দেখে, কারণ আমাদের লক্ষ্য ছিল জীববৈচিত্র্যের উপরে মানুষের যে প্রভাব তার একটি নিম্নসীমা নির্ধারণ করা।
গবেষকদের একজন ড. পল এহরলিকের মতে, বড় কোনো সন্দেহ ছাড়াই নিশ্চিত করে বলা যায় আমরা এখন ৬ নাম্বার গণবিলুপ্তিতে প্রবেশ করছি।
গণবিলুপ্তি বা ব্যাপক হারে বিলুপ্তি কী?
ডাইনোসরদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া গণবিলুপ্তিগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। কিন্তু এটি পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া অন্য ৫টি গণবিলুপ্তির একটি।
অস্বাভাবিক বা গড় সংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সময়কালকে ম্যাস এক্সটিংশন বা গণবিলুপ্তি বলা হয়। যেমন, বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪৮ মিলিয়ন বছর আগে পার্মিয়ান গণবিলুপ্তিতে পৃথিবীর প্রায় ৯৬ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনভার্সেশন অব নেচার বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা প্রাণীদের একটি লিস্ট রাখে, তারা মনে করে খুব নিকট ভবিষ্যতেই উভচর বা অ্যানিলিডা প্রাণীদের ৪১ শতাংশ, ২৬ শতাংশ ম্যামাল বা স্তন্যপায়ী এবং ১৩ শতাংশ বার্ডস বা পাখি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
গণবিলুপ্তি থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পৃথিবীর কয়েক মিলিয়ন বছরের প্রয়োজন হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনের সিনিয়র লেখক জেরাল্ডো কেবালস প্রেস রিলিজে বলেছেন, আমাদের প্রজাতি সম্ভবত আরো আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। একটি ভিডিও ক্লিপে এহরলিক বলেন, এটা ঘটবে কারণ অন্য প্রজাতিদের দেওয়া ‘প্রাকৃতিক সুবিধা বা ন্যাচারাল সার্ভিস’-এর ওপর আমরা নির্ভর করি। যেমন ফসলের পরাগায়ণ বা আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আমাদের অন্য প্রজাতির ওপর নির্ভর করতে হয়।
এহরলিক বলেন, প্রজাতি হিসেবে মৌমাছিকে আমরা এখনই হারাচ্ছি না, কিন্তু যেখানে মৌমাছি গুরুত্বপূর্ণ তার অনেক জায়গায়ই ইতোমধ্যে আমরা মৌমাছি হারিয়ে ফেলেছি। যেমন ধরুন, আপনার বাদামের বাগানে।
অতীতের বিলুপ্তিগুলি ঘটেছিল অনিয়ন্ত্রণযোগ্য কিছু বিষয়ের কারণে, যেমন, আবহাওয়ার পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, এবং সম্ভবত কোনো বড় ধরনের গ্রহাণুর আঘাতে।
এ থেকে একটা ব্যাপার চিহ্নিত করা যায় যে, অন্য বিলুপ্তিগুলির চেয়ে এই বিলুপ্তি আলাদা শুধুমাত্র মানুষসৃষ্ট সেই কারণে নয়, সঠিক পদক্ষেপ নিলে হয়ত এই বিলুপ্তি এড়ানো সম্ভব হতে পারে।
গবেষকদের দলটি লিখেছে কৃষিজমি ও বসবাসের জন্য বৃক্ষনিধন, ক্ষতিকর প্রজাতি তৈরি, কার্বন নিঃসরণ এবং পরিবেশে আমাদের বিষাক্ত উপাদান ছড়ানো বাস্তুসংস্থানকে স্থায়ীভাবে ধ্বংস করছে।
বিলুপ্তি বা বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে কোনো বাংকা র অথবা নিরাপদ স্থান তৈরি করা শুরু করলে তা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। সক্রিয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে আমরা এখনো হয়ত পৃথিবীর ইকোসিস্টেম বা বাস্তুসংস্থান রক্ষা করতে পারি। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, রক্ষা করার যে সুযোগ এখনো রয়েছে তা দ্রুত কমে আসছে।
গবেষকদের দল প্রতিবেদনটিতে লিখেছেন, অবশ্যম্ভাবী ৬ নাম্বার গণবিলুপ্তি এড়াতে ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতিগুলিকে বাঁচানোর জন্য এবং তাদের ওপর চাপ কমাতে দ্রুত কিছু কার্যকরী উদ্যোগ প্রয়োজন। তাদের বাসস্থান ধ্বংস করা, অর্থনৈতিক লাভের জন্য তাদের ব্যাপকভাবে ধ্বংস করা ও আবহাওয়ার পরিবর্তন এই ব্যাপারগুলির ওপর তা নির্ভর করে।
গণবিলুপ্তির তালিকা
অর্ডোভিসিয়ান-সিলুরিয়ান গণবিলুপ্তি
পৃথিবীর ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ বড় গণবিলুপ্তি। অর্ডোভিসিয়ান-সিলুরিয়ান গণবিলুপ্তিতে কয়েকশ হাজার বছর ধরে অনেক প্রাণী মারা যায়।
অর্ডোভিসিয়ান আমলে অধিকাংশ জীব সমুদ্রে ছিল। ফলে ট্রিলোবাইটস, ব্রাকিওপডস এবং গ্র্যাপোলাইটসের মত সামুদ্রিক প্রাণী ব্যাপক হারে হ্রাস পায়। সব মিলিয়ে ৮৫ শতাংশ প্রাণী মারা যায়।
এই বিলুপ্তির কারণ ছিল বরফ যুগ। দক্ষিণ গোলার্ধে প্রচুর বরফের আস্তরণের ফলে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয় এবং সমুদ্রের স্তর নিচে নেমে যায়। এতে সাগরের বাস্তুসংস্থান তছনছ হয়ে যায়।
পরবর্তী ডেভোনিয়ান গণবিলুপ্তি
এই গণবিলুপ্তিতে পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ প্রাণী মারা যায়।
এটি সামগ্রিভাবে একটি মাত্র ঘটনা নয়, কয়েক মিলিয়ন ধরে চলা কয়েকটি বিলুপ্তির সিরিজ এটি।
ডেভোনিয়ান পিরিয়ডের বৈশিষ্ট্য ছিল গাছেদের উপনিবেশ। অর্থাৎ, অধিকাংশ ফাঁকা জমিগুলিতেই প্রচুর গাছ গজিয়ে উঠে, গাছ দিয়ে ভর্তি হয়ে যায়। বড় কোনো তৃণভোজী প্রাণী না থাকায় বড় বড় বন তৈরি হয়।
অগভীর সমুদ্রের প্রাণীরা এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাগরের নিচের পাহাড়গুলি ধসে যায়। সেগুলি আর আগের অবস্থায় ফেরে নি।
১০০ মিলিয়ন বছর ধরে নতুন ধরনের প্রবাল গঠিত হয় সাগরের তলদেশে। সাগরের তলদেশে অধিকাংশ স্থানই অক্সিজেন শূন্য হয়ে পড়ে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী বসবাসের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
এই বিলুপ্তিগুলির কারণ ছিল সাগরের স্তরের পরিবর্তন, গ্রহাণুর আঘাত, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং মাটিতে নতুন ধরনের উদ্ভিদের মিশে যাওয়া।
পার্মিয়ান গণবিলুপ্তি
পার্মিয়ান গণবিলুপ্তিতে ৯৬ শতাংশ প্রাণী মারা যায়। এখনকার পৃথিবীতে যত প্রাণী, সব টিকে যাওয়া ৪ শতাংশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
এই বিলুপ্তিটি অনেক জটিল ছিল। কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে দুটি ধাপে এই এটি ঘটে।
বিশেষভাবে সামুদ্রিক প্রাণীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং একমাত্র এই বিলুপ্তির সময়ই পোকা প্রজাতি গণবিলুপ্তির মুখোমুখি হয়েছিল।
গ্রহাণুর আঘাত, আগ্নেয়গিরি থেকে লাভার বন্যা, হঠাৎ করে মিথেন নির্গমন, অক্সিজেন হ্রাস পাওয়া, সমুদ্রের স্তরের পরিবর্তন ইত্যাদি ছিল এই গণবিলুপ্তির কারণ।
ট্রায়াসিক-জুরাসিক গণবিলুপ্তি
ট্রায়াসিক আমলে ১৮ মিলিয়ন বছর ধরে দুই অথবা তিন ধাপে ট্রায়াসিক-জুরাসিক গণবিলুপ্তি ঘটে।
আবহাওয়ার পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরির লাভার বন্যা এবং বড় ধরনের একটি গ্রহাণুর আঘাতের ফলে প্রচুর প্রাণী মারা যায়।
এ সময় সামুদ্রিক সরীসৃপ, বড় আকারের উভচর প্রাণী, সমুদ্রের তলদেশে প্রবাল-প্রাচীর তৈরি করে যেসব প্রাণী, শুড়বিশিষ্ট শামুকসহ অনেক ধরনের প্রাণী মারা যায়।
পৃথিবীর অর্ধেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায় এ সময়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই বিলুপ্তিতে উদ্ভিদের তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি।
ক্রেটাসিওয়াস টেরিটারি গণবিলুপ্তি
এই গণবিলুপ্তিকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হওয়ার কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ডাইনোসর ছাড়া আরো অনেক প্রাণী ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন, অ্যামোনাইটস, অনেক সপুস্পক উদ্ভিদ।

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের বিলুপ্তি শুরু হয়েছে, মানুষ হয়ত টিকে থাকবে না।
বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জীবনের খুব স্বাভাবিক একটি অংশ। প্রতি শতাব্দীতেই কোনো না কোনো নতুন প্রজাতি খুঁজে পাওয়া যায়, আবার কোনো প্রজাতির অস্তিত্ব একদম হারিয়ে যায়।
কিন্তু ব্যাপক হারে বিলুপ্ত হওয়ার ঘটনা এ রকম স্বাভাবিক কোনো বিষয় না। আজ পর্যন্ত পৃথিবী এই গণহারে বিলুপ্ত হওয়ার ব্যাপারটি মোট ৫বার দেখেছে। শেষবার হয়েছিল ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে এবং সেই সময় ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞানীদের একটি দল সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখেছে, আমরা এখন ৬ নাম্বার গণবিলুপ্তি বা ব্যাপক হারে বিলুপ্তির একেবারে মাঝখানে আছি। এবং মানুষই হয়ত প্রথম প্রাণী যে এই গণবিলুপ্তিতে শেষ হয়ে যাবে।
দূষণ, প্রাণীদের বাসস্থান ধ্বংস, এবং ফলাফল হিসেবে মানুষের দিন শেষ—এইসব বিষয়ের গল্প নতুন না।
কিন্তু এই গবেষণাটি পৃথিবী শেষ হওয়ার ব্যাপারে অসংখ্য ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আলাদা কারণ এটি একদম নিখুঁত ও কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যাবে না এমন বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে হয়েছে।
ফসিল রেকর্ড ব্যবহার করে এই গবেষকদের দল বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিলুপ্তির হারের মধ্যে তুলনা করেছেন, এবং শেষপর্যন্ত কিছু অস্বাভাবিক ফলাফল দেখেছেন।
ফলাফল থেকে দেখা যায়, খুব রক্ষণশীলভাবে হিসাব করলেও এখন যে হারে কিছু প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটছে তা গণবিলুপ্তির মধ্যবর্তী সময়ের স্বাভাবিক হারের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি গতিতে ঘটছে। গবেষকরা প্রতিবেদনে লিখেছেন, আমরা এমনভাবে হিসাব করেছি যে আমাদের হিসাব এই বিলুপ্তি বিপর্যয়কে ছোট করে দেখে, কারণ আমাদের লক্ষ্য ছিল জীববৈচিত্র্যের উপরে মানুষের যে প্রভাব তার একটি নিম্নসীমা নির্ধারণ করা।
গবেষকদের একজন ড. পল এহরলিকের মতে, বড় কোনো সন্দেহ ছাড়াই নিশ্চিত করে বলা যায় আমরা এখন ৬ নাম্বার গণবিলুপ্তিতে প্রবেশ করছি।
গণবিলুপ্তি বা ব্যাপক হারে বিলুপ্তি কী?
ডাইনোসরদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া গণবিলুপ্তিগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। কিন্তু এটি পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া অন্য ৫টি গণবিলুপ্তির একটি।
অস্বাভাবিক বা গড় সংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সময়কালকে ম্যাস এক্সটিংশন বা গণবিলুপ্তি বলা হয়। যেমন, বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪৮ মিলিয়ন বছর আগে পার্মিয়ান গণবিলুপ্তিতে পৃথিবীর প্রায় ৯৬ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনভার্সেশন অব নেচার বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা প্রাণীদের একটি লিস্ট রাখে, তারা মনে করে খুব নিকট ভবিষ্যতেই উভচর বা অ্যানিলিডা প্রাণীদের ৪১ শতাংশ, ২৬ শতাংশ ম্যামাল বা স্তন্যপায়ী এবং ১৩ শতাংশ বার্ডস বা পাখি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
গণবিলুপ্তি থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পৃথিবীর কয়েক মিলিয়ন বছরের প্রয়োজন হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনের সিনিয়র লেখক জেরাল্ডো কেবালস প্রেস রিলিজে বলেছেন, আমাদের প্রজাতি সম্ভবত আরো আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। একটি ভিডিও ক্লিপে এহরলিক বলেন, এটা ঘটবে কারণ অন্য প্রজাতিদের দেওয়া ‘প্রাকৃতিক সুবিধা বা ন্যাচারাল সার্ভিস’-এর ওপর আমরা নির্ভর করি। যেমন ফসলের পরাগায়ণ বা আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আমাদের অন্য প্রজাতির ওপর নির্ভর করতে হয়।
এহরলিক বলেন, প্রজাতি হিসেবে মৌমাছিকে আমরা এখনই হারাচ্ছি না, কিন্তু যেখানে মৌমাছি গুরুত্বপূর্ণ তার অনেক জায়গায়ই ইতোমধ্যে আমরা মৌমাছি হারিয়ে ফেলেছি। যেমন ধরুন, আপনার বাদামের বাগানে।
অতীতের বিলুপ্তিগুলি ঘটেছিল অনিয়ন্ত্রণযোগ্য কিছু বিষয়ের কারণে, যেমন, আবহাওয়ার পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, এবং সম্ভবত কোনো বড় ধরনের গ্রহাণুর আঘাতে।
এ থেকে একটা ব্যাপার চিহ্নিত করা যায় যে, অন্য বিলুপ্তিগুলির চেয়ে এই বিলুপ্তি আলাদা শুধুমাত্র মানুষসৃষ্ট সেই কারণে নয়, সঠিক পদক্ষেপ নিলে হয়ত এই বিলুপ্তি এড়ানো সম্ভব হতে পারে।
গবেষকদের দলটি লিখেছে কৃষিজমি ও বসবাসের জন্য বৃক্ষনিধন, ক্ষতিকর প্রজাতি তৈরি, কার্বন নিঃসরণ এবং পরিবেশে আমাদের বিষাক্ত উপাদান ছড়ানো বাস্তুসংস্থানকে স্থায়ীভাবে ধ্বংস করছে।
বিলুপ্তি বা বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে কোনো বাংকা র অথবা নিরাপদ স্থান তৈরি করা শুরু করলে তা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। সক্রিয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে আমরা এখনো হয়ত পৃথিবীর ইকোসিস্টেম বা বাস্তুসংস্থান রক্ষা করতে পারি। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, রক্ষা করার যে সুযোগ এখনো রয়েছে তা দ্রুত কমে আসছে।
গবেষকদের দল প্রতিবেদনটিতে লিখেছেন, অবশ্যম্ভাবী ৬ নাম্বার গণবিলুপ্তি এড়াতে ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতিগুলিকে বাঁচানোর জন্য এবং তাদের ওপর চাপ কমাতে দ্রুত কিছু কার্যকরী উদ্যোগ প্রয়োজন। তাদের বাসস্থান ধ্বংস করা, অর্থনৈতিক লাভের জন্য তাদের ব্যাপকভাবে ধ্বংস করা ও আবহাওয়ার পরিবর্তন এই ব্যাপারগুলির ওপর তা নির্ভর করে।
গণবিলুপ্তির তালিকা
অর্ডোভিসিয়ান-সিলুরিয়ান গণবিলুপ্তি
পৃথিবীর ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ বড় গণবিলুপ্তি। অর্ডোভিসিয়ান-সিলুরিয়ান গণবিলুপ্তিতে কয়েকশ হাজার বছর ধরে অনেক প্রাণী মারা যায়।


অর্ডোভিসিয়ান গণবিলুপ্তি

৪৪৩-৪১৯ মিলিয়ন বছর আগের সিলুরিয়ান পিরিয়ডের প্রাণী।
অর্ডোভিসিয়ান আমলে অধিকাংশ জীব সমুদ্রে ছিল। ফলে ট্রিলোবাইটস, ব্রাকিওপডস এবং গ্র্যাপোলাইটসের মত সামুদ্রিক প্রাণী ব্যাপক হারে হ্রাস পায়। সব মিলিয়ে ৮৫ শতাংশ প্রাণী মারা যায়।
এই বিলুপ্তির কারণ ছিল বরফ যুগ। দক্ষিণ গোলার্ধে প্রচুর বরফের আস্তরণের ফলে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয় এবং সমুদ্রের স্তর নিচে নেমে যায়। এতে সাগরের বাস্তুসংস্থান তছনছ হয়ে যায়।
পরবর্তী ডেভোনিয়ান গণবিলুপ্তি
এই গণবিলুপ্তিতে পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ প্রাণী মারা যায়।
এটি সামগ্রিভাবে একটি মাত্র ঘটনা নয়, কয়েক মিলিয়ন ধরে চলা কয়েকটি বিলুপ্তির সিরিজ এটি।
ডেভোনিয়ান পিরিয়ডের বৈশিষ্ট্য ছিল গাছেদের উপনিবেশ। অর্থাৎ, অধিকাংশ ফাঁকা জমিগুলিতেই প্রচুর গাছ গজিয়ে উঠে, গাছ দিয়ে ভর্তি হয়ে যায়। বড় কোনো তৃণভোজী প্রাণী না থাকায় বড় বড় বন তৈরি হয়।

ডেভোনিয়ান পিরিয়ড, ৪১৯.২-৩৫৮.৯ মিলিয়ন বছর আগে।

ডেভোনিয়ান পিরিয়ড
অগভীর সমুদ্রের প্রাণীরা এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাগরের নিচের পাহাড়গুলি ধসে যায়। সেগুলি আর আগের অবস্থায় ফেরে নি।
১০০ মিলিয়ন বছর ধরে নতুন ধরনের প্রবাল গঠিত হয় সাগরের তলদেশে। সাগরের তলদেশে অধিকাংশ স্থানই অক্সিজেন শূন্য হয়ে পড়ে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী বসবাসের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
এই বিলুপ্তিগুলির কারণ ছিল সাগরের স্তরের পরিবর্তন, গ্রহাণুর আঘাত, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং মাটিতে নতুন ধরনের উদ্ভিদের মিশে যাওয়া।
পার্মিয়ান গণবিলুপ্তি
পার্মিয়ান গণবিলুপ্তিতে ৯৬ শতাংশ প্রাণী মারা যায়। এখনকার পৃথিবীতে যত প্রাণী, সব টিকে যাওয়া ৪ শতাংশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
এই বিলুপ্তিটি অনেক জটিল ছিল। কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে দুটি ধাপে এই এটি ঘটে।

পার্মিয়ান পিরিয়ডের শুরু ২৯৯ মিলিয়ন বছর আগে।
বিশেষভাবে সামুদ্রিক প্রাণীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং একমাত্র এই বিলুপ্তির সময়ই পোকা প্রজাতি গণবিলুপ্তির মুখোমুখি হয়েছিল।
গ্রহাণুর আঘাত, আগ্নেয়গিরি থেকে লাভার বন্যা, হঠাৎ করে মিথেন নির্গমন, অক্সিজেন হ্রাস পাওয়া, সমুদ্রের স্তরের পরিবর্তন ইত্যাদি ছিল এই গণবিলুপ্তির কারণ।
ট্রায়াসিক-জুরাসিক গণবিলুপ্তি
ট্রায়াসিক আমলে ১৮ মিলিয়ন বছর ধরে দুই অথবা তিন ধাপে ট্রায়াসিক-জুরাসিক গণবিলুপ্তি ঘটে।
আবহাওয়ার পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরির লাভার বন্যা এবং বড় ধরনের একটি গ্রহাণুর আঘাতের ফলে প্রচুর প্রাণী মারা যায়।



এ সময় সামুদ্রিক সরীসৃপ, বড় আকারের উভচর প্রাণী, সমুদ্রের তলদেশে প্রবাল-প্রাচীর তৈরি করে যেসব প্রাণী, শুড়বিশিষ্ট শামুকসহ অনেক ধরনের প্রাণী মারা যায়।
পৃথিবীর অর্ধেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায় এ সময়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই বিলুপ্তিতে উদ্ভিদের তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি।
ক্রেটাসিওয়াস টেরিটারি গণবিলুপ্তি
এই গণবিলুপ্তিকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হওয়ার কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ডাইনোসর ছাড়া আরো অনেক প্রাণী ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন, অ্যামোনাইটস, অনেক সপুস্পক উদ্ভিদ।


আগে থেকেই ঝুঁকিতে থাকা অনেক প্রজাতি এই বিলুপ্তির সময়ে একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়।
আগ্নেয়গিরির লাভার বন্যার কারণে আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের হঠাৎ করে নিচে নেমে যাওয়ার ফলে এই গণবিলুপ্তি শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
এরপরে বড় একটি গ্রহাণু বা ধূমকেতু মেক্সিকোর ইয়ুকাতান পেনিনসুলার নিকটে সমুদ্রের তলদেশে আঘাত করলে এই বিলুপ্তি চূড়ান্ত মাত্রা পায়।
উৎস ঃ এখানে ক্লিক করুন ...
0 comments:
Post a Comment