পরশুরামের গল্প ---(চিঠি-বাজি)
সুকান্ত দত্ত অতি ভালো ছেলে, এম.এস-সি পাস করার কিছুদিন পরেই পি-এইচ.ডি. ডিগ্রি পেয়েছে একটি। ভালো চাকরি জোগাড় করে প্রায় বছরখানিক সিন্দ্রির সার-কারখানায় কাজ করছে। তার বাপ-মা নেই, মামাই তাকে মানুষ করেছেন। আজ সকালের ডাকে মামার কাছ থেকে সুকান্ত একটি চিঠি পেয়েছে। তিনি লিখেছেন : সুনন্দার সঙ্গে। বনেদি বংশ, বিজয়বাবু আমাদের কাছাকাছি শাখারিপাড়াতে থাকেন। মেয়েটি সুগ্ৰী, খুব ফরসা, বি,এস-সি পাস করতে পারে নি, তবে বেশ চালাক। ফোটাে পাঠলুম। তোমারই উচিত ছিল নিজে দেখে পাত্রী পছন্দ করা, কিন্তু একালের ছেলে হয়ে কেন-যে তুমি আমার ওপর ভার দিলে তা বুঝতে পারি না। যাইহােক, আমি যথাসাধ্য দেখেশুনে এই পাত্রী স্থির করেছি, আশা করি তোমারও পছন্দ হবে। তেইশ ফাল্গুন বিবাহ, পাঁচ সপ্তাহ পরেই। তুমি এখন থেকে চেষ্টা কর যাতে পনেরো দিনের ছুটি পাও| বিবাহের অন্তত দুদিন আগে তোমার আসা চাই। সুকান্ত মামার চিঠিটা মন দিয়ে পড়ল, ফোটােটাও ভালো করে দেখল। কিছুক্ষণ ভেবে সে তার রঙের বাক্স থেকে তিন-চার রকম রঙ নিয়ে এক-টুকরো কাগজে লাগাল এবং নিজের বঁ-হাতের কবজির উপর কাগজখানা রেখে বারবার দেখল তার গায়ের রঙের সঙ্গে মিল হয়েছে কিনা। তারপর আরও খানিকক্ষণ ভেবে এই চিঠি লিখল : শ্ৰীযুক্ত সুন্দা ঘোষ সমীপে। আমার সঙ্গে আপনার বিবাহের সম্বন্ধ স্থির হয়েছে। মামাবাবুর চিঠিতে জানলুম। আপনি খুব
ফরসা। আমার রঙ কিন্তু খুব ময়লা। হয়তো আপনি শুনেছেন শ্যামবর্ণ, কিন্তু তাতে অনেক রকম শেড বোঝায়। আমার গায়ের রঙ ঠিক কীরকম তা আপনাকে জানানাে কর্তব্য মনে করি, সেজন্যে একা-টুকরো কাগজে রঙ লাগিয়ে পাঠাচ্ছি, আমার বা-হাতের কবজির উপর পিঠের সঙ্গে মিল আছে। এইরকম গাঢ় শ্যামবর্ণ স্বামীতে যদি আপনার আপত্তি না-থাকে। তবে দয়া করে একলাইন লিখবেন-আপত্তি নেই। আমার ঠিকানা লেখা খাম পাঠলুম। যদি আপত্তি থাকে। তবে চিঠি লেখবার দরকার নেই। পাঁচদিনের মধ্যে আপনার উত্তর না-পেলে বুঝব আপনি নারাজ। সেক্ষেত্রে আমি মামাবাবুকে জানাব যে এই সম্বন্ধ আমার পছন্দ নয়, অন্য পাত্রী দেখা হােক। ইতি সুকান্ত। চারদিন পরে উত্তর এল। —ডক্টর সুকান্ত দত্ত সমীপে। আপত্তি নেই। কিন্তু প্রকৃত খবর আপনি পাননি, আমার গায়ের রঙ আপনার চাইতে ময়লা, কনে দেখবার সময় আমাকে পেন্ট
করে আপনার মামাবাবুকে ঠকানাে হয়েছিল। কিন্তু আপনার মতোন সত্যবাদী ভদ্রলোককে আমি ঠকাতে চাই না। আমার কাছে ছবি আঁকবার রঙ নেই। আপনি যে-নমুনা পাঠিয়েছেন সেই কাগজ থেকে এক-টুকরো কেটে তার উপর একটু ব্ৰক্ল্যাক কালি লাগিয়ে আমার হাতের রঙের সমান করে পাঠলুম। পুরুষের কালো রঙে কেউ দােষ ধরে না, কিন্তু সবাই ফরসা মেয়ে খোজে, যে জোক-কালো সেও অপসারী বিদ্যাধরী বউ চায়। আপনি সংকোচ করবেন না, আমার কালো রঙে আপত্তি থাকলে সম্পবিন্ধ বাতিল করে দেবেন। আর আপত্তি না থাকলে দয়া করে। পাচ দিনের মধ্যে একলাইন লিখে জানাবেন। ইতি। সুন্দা। চিঠি পেয়েই সুকান্ত উত্তর লিখলা। —আপনার রঙ আমার চাইতে একর্পোেচ বেশি ময়লা হলেও আমার আপত্তি নেই। তবে সত্য কথা বলব। প্রথমটা মন খুঁতখুঁত করেছিল কারণ সুন্দরী বউ একটা সম্পদ, স্বামীর গীেরব আর প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে। কিন্তু পরেই মনে হল, এরকম ভাবা নিতান্ত মূর্থিতা। ফোটাে দেখে বুঝেছি আপনার সৌষ্ঠবের অভাব নেই। তাই যথেষ্ট। রঙ ময়লা হলেই মানুষ কুৎসিত হয় না। আমার একটা বদভ্যাস আছে, জানানাে উচিত মনে করি। রোজ পনেরো-কুড়িটা সিগারেট খাই। আমার এক বউদিদি বলেন, সিগারেটখোরদের নিশ্ববাসে একটা বিশ্ৰী মুখপােড়া গন্ধ হয়, তাদের বউরা তা পছন্দ করে না, কিন্তু চক্ষুলজ্জায় কিছু বলতে পারে না। দু-চারটি বাঙালির মেয়ে যারা মেমব্দের দেখাদেখি সিগারেট ধরেছে তাদের অবশ্য আপত্তি হতে পারে না, কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই সে-দলের নন। আপনার আপত্তি থাকলে একলাইন লিখে জানাবেন, আমি সম্বন্ধ বাতিল করে দেব। সুকান্ত। চার দিন পরে সুন্দার উত্তর এল। —মুখপােড়া গন্ধে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু শুনেছি সিগারেট খেলে নাকি ক্যানসার হয়। আপনি ওটা ছেড়ে দিয়ে খুঁকো ধরুন না কেন? তার গন্ধেও আমার আপত্তি নেই। আমারও একটা বিশ্ৰী অভ্যাস আছে, রোজ বিশ-পাঁচিশ খিলি পান আর দােক্তা খাই। দাঁতের অবস্থা বুঝতেই পারছেন। যারা পান-দোক্তা খায় তাদের নিশ্বাসে নাকি অ্যামােনিয়ার গন্ধ থাকে। আমার ছােটভাই লম্বাবুর নাক অত্যন্ত সেনসিটিভ, কুকুরের চাইতেও। রেডিওতে যখন কৃষ্ণসোহাগিনী দেবীর কীর্তন হয় তখন লম্বাবু অ্যামোনিয়ার গন্ধ পায়। আবার গ্রামোফোনে যখন ওস্তাদ বড়ে গোলাম মওলার দরবারি কানাড়ার রেকর্ড বাজে তখন লস্বৰুরশুনের গন্ধ পায়। আমার বদভ্যাসে আপনার আপত্তি না থাকলে একলাইন লিখে জানাবেন, নতুবা সম্বন্ধ ভেঙে দেবেন। ইতি। সুন্দা। সুকান্ত উত্তর লিখলা। —আপনি যখন সিগারেটের দুৰ্গন্ধ সইতে রাজি আছেন তখন আপনার পান-দোক্তায় আমার আপত্তি নেই। তাছাড়া আমাদের এই কারখানায় অজস্র অ্যামোনিয়া তৈরি হয়, তার ঝাজ আমার সয়ে গেছে। আপনার ইকোর প্রস্তাবটি বিবেচনা করে দেখব । কোনো বিষয়ে আমি আপনাকে ঠকাতে চাই না, সেজন্য আমার আর একটি ক্রটি আপনাকে জানাচ্ছি। পুরুষেরা যেমন অনন্যপূর্ব পত্নী চায়, মেয়েরাও তেমনি এমন স্বামী চায়
যে পূর্বে কখনাে প্রেমে পড়ে নি। আমি স্বীকার করছি আমি অক্ষতহাদয় নই। ডেপুটি কমিশনার লালা তোপচাদ ঝোপড়ার মেয়ে সুরঙ্গীর সঙ্গে আমার প্রেম হয়েছিল। তার বাপ-মায়ের তেমন আপত্তি ছিল না, কিন্তু শেষটায় সুরঙ্গই বিগড়ে গেল। সম্প্রতি সেকমার্স তবে মাইনে আমার প্রায় তিনগুণ। আমার হৃদয়ের ক্ষত এখন অনেকটা সেরে গেছে, আপনার সঙ্গে বিবাহের পর একেবারে বেমালুম হবে। আশা করি। সুরঙ্গীর একটা ফোটাে আমার কাছে আছে, আপনার সামনেই সেটা পুড়িয়ে ফেলব। সুরঙ্গীর বিবাহ হয়ে যাবার পরে আমার খেয়াল হল যে আমারও শীঘ্ৰ বিবাহ হওয়া দরকার। অবসরকালে আমি ছবি আঁকি, ফোটাে তুলি, নানারকম বৈজ্ঞানিক গবেষণা করি। গৃহস্থলির ঝঞ্চােট পোহানোর জন্যে একজন গৃহিণী থাকলে আমি নিশ্চিত হয়ে নিজের শখ নিয়ে অবসর যাপন করতে পারি। এখন আমার জ্ঞান হয়েছে, হঠাৎ প্রেমে পড়া বোকামি, একত্র বাস করার ফলে একটু একটু করে স্ত্রী-পুরুষের যে ভালোবাসা জামায় তাই খাটি জিনিস। সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার আগে তাকে তো দেখবার উপায় নেই, তথাপি মা-বাপের স্নেহের অভাব হয় না। সেইরকম বিবাহের আগে পাত্রী না-দেখলেও কিছুমাত্র ক্ষতি নেই। সেইজন্যেই মামাবাবুর ওপর সব ছেড়ে দিয়েছি। আমার স্বভাব্যচরিত্র মতামত সবই আপনাকে জানালুম। আপত্তি না থাকলে একটু খবর দেবেন। ইতি। সুকান্ত। সুনন্দার উত্তর এল।—আপনার স্বভাব্যচরিত্র আর মতামতে আমার কোনো আপত্তি নেই। যেসব চিঠি লিখেছেন তা থেকে বুঝেছি আপনি অতি সত্যনিষ্ঠ অকপট সাধুপুরুষ। অতএব আমিও অকপটে আমার গলদ জানাচ্ছি। পবনকুমার পোস্ট গ্র্যাজুয়েটে পড়ত, তার সঙ্গে আমার প্রেম হয়েছিল। কিন্তু সে ভাদুড়ী ব্ৰাহ্মণ, সেকেলে গােঁড়া বাপ-মা আমাকে পুত্রবধু করতে মােটেই রাজি হলেন না। পবন এখন ব্যাংগালোরে আছে, খুব একটা বড় পােস্ট পেয়েছে। তাকে পুরো ভুলতে পারিনি, তবে আপনার মতো মহাপ্ৰাণ স্বামী পেলে একেবারে ভুলে যাব তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। আমি বলি কী, সুরঙ্গী আর পবনের ফোটাে পুড়িয়ে কী হবে, বরং একই ফ্রেমে দুটা ছবি বঁধিয়ে শোবার ঘরে টাঙিয়ে রাখা যাবে। তাতে বিষে বিষক্ষয় হবে, কি বলেন? আপনার অভিপ্রায় জানাবেন। ইতি। সুন্দা। সুকান্ত উত্তর লিখলা। —সুন্দা, তােমাকে আজ নাম ধরে সম্বোধন করছি, কারণ আমাদের দুজনের মধ্যে এখন আর কোনাে লুকোচুরি রইল না, বিবাহের বাধাও কিছু নেই। লোকে বলে আমি একটু বেশি গভীর প্রকৃতির লোক। শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুরা অধিকন্তু বলে আমি একটু বােকা। তােমার চিঠি পড়ে বুঝেছি তুমি আমুদে মানুষ, আর মামাবাবুর চিঠিতে জেনেছি, বি,এস-সি ফেলা হলেও তুমি বেশ চালাক। মনে হচ্ছে তােমার আর আমার স্বভাব পরস্পরের পরিপূরক অর্থাৎ কমপ্লিমেন্টারি। সাইকোলজিস্টদের মতে এই হল আসল রাজযোটক, আদর্শ দম্পতির লক্ষণ। আজ ষোলোই ফাল্গুন, সাত দিন পরেই আমাদের বিবাহ। তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ আলাপের আনন্দ এখনই কলপনায় উপভোগ করছি। তোমার সুকান্ত।
কিছুদিন পরে সুন্দার চিঠি এল।-যাহ ভেস্তে গেল, এমন মুশকিলেও মানুষ পড়ে। পবন ভাদুড়ী এখানে এসেছে। কাল আমার সঙ্গে দেখা করে বলল, দেখ সুন্দা, এখন আমি স্বাধীন, ভালো রোজগার করি, বাপ-মায়ের বশে চলাবার কোনো দরকার নেই। তুমি আমার সঙ্গে চল, ব্যাংগালোরে সিভিল বা হিন্দু ম্যারেজ যা চাও তাই হবে।
এই তো পরিস্থিতি। আমার অবস্থােটা আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। পবন ভাদুড়ীকে হাঁকিয়ে দেওয়া আমার সাধ্য নয়, কালই অর্থাৎ আপনার নির্ধারিত বিবাহের দুদিন আগেই পবনের সঙ্গে আমি পালাচ্ছি। কিন্তু আপনার প্রতি আমার একটা কর্তব্য আছে, আপনার ব্যবস্থা না করে আমি যাচ্ছি না। আমার বোন নন্দা আমার চেয়ে দেড় বছরের ছোট। দেখতে আমারই মতন, তবে রঙ বেশ ফরসা। সেও বি.এস-সি ফেল। ঝকঝকে দাত, পান-দোক্তা খায় না, এ পর্যন্ত প্রোমেও পড়েনি। আপনার সব চিঠিই সে পড়েছে, পড়ে ভীষণ মোহিত হয়েছে, আপনাকে বিয়ে করবার জন্যে মুখিয়ে আছে। ডক্টর সুকান্ত, দােহাই আপনার, কোনাে হাঙ্গামা বাধাবেন না, বাড়ির কাউকেও কিছু বলবেন না। আপনাদের প্রোগ্রাম অনুসারে বরযাত্রী নিয়ে যথাকলে আমাদের বাড়ি আসবেন, পুরুত যে-মন্ত্র পড়াবে সুবোধবালকের মতন। তাই পড়বেন, আমার বাবা নন্দাকেই আপনার হাতে সম্প্রদান করবেন। তাকে পেলে নিশ্চয়ই আপনি সুখী হবেন। আপনি তো গৃহস্থালি দেখবার জন্যে একটি গৃহিণী চান, সুতরাং সুন্দার বদলে নন্দাকে পেলেও আপনার চলবে। নিজের বােনের প্রশংসা করা ভালো দেখায় না, নয়তো চুটিয়ে লিখতুম নন্দা কীরকম চমৎকার মেয়ে। আজ বিদায়, এরপর সুযোগ পেলে আপনার সঙ্গে দেখা করে আমি ক্ষমা চাইব। ইতি। সুন্দা।
সুন্দার চিঠি পড়ে সুকান্ত হতভম্বব হল, খুব রেগেও গেল। কিন্তু সে যুক্তিবাদী র্যাশনাল লোক। একটু পরেই বুঝে দেখল, সুন্দার প্রস্তাব মন্দ নয়। গৃহিণীই যখন দরকার তখন একপাত্রীর বদলে আর-এক পাত্রী হলে ক্ষতি কী? সুকান্ত স্থির করল সে হাঙ্গামা বাধাবে না, কোনােরকম খোজও করবে না, সম্পূর্ণভাবে মামার বশে চলবে, তিনি যেমন ব্যবস্থা করবেন। তাই মেনে নেবে।
সুকান্ত কলকাতায় এলে তার মামার বাড়ির কেউ সুনন্দা সম্বন্ধে কিছুই বলল না, কোনােরকম উদ্বেগও প্রকাশ করল না। যথাকলে বরযাত্রীদের সঙ্গে সুকান্ত বিয়েবাড়িতে উপস্থিত হল। সেখানে গোলযোগের কোনো লক্ষণই তার নজরে পড়ল না।
সুকান্ত দেখল, ষোলো-সতেরো বছরের একটি ছেলে নিমন্ত্রিতদের পান। আর সিগারেট ডেকে সুকান্ত চুপি চুপি প্রশ্ন করল, তুমি সুন্দার ছােটভাই লম্বাবু?
লম্বাবু বলল, আজ্ঞে হ্যা।
—এদিকের খবর কী?
—খবর সব ভালোই। দিদিকে এখন সাজানাে হচ্ছে, একটু পরেই তো বিয়ের লগ্ন।
—সুনন্দা চলে গেছে?
-কী বলছেন। আপনি, বিয়ের কনে কোথায় চলে যাবে? —তোমার আর-এক দিদি নন্দা, তার খবর কী? —বা রে! আমার তো একটি দিদি, তার সঙ্গেই তো আপনার বিয়ে হচ্ছে। সুকান্ত চােখ কপালে তুলে বলল, ও ।
রাত বারোটার পরে বাসর ঘরে অন্য কেউ রইল না । সুকান্ত জিজ্ঞাসা করলো , তুমি
সুনন্দা, না নন্দা ?
—দুই-ই। পােশাকি নাম সুন্দা, আটপৌরে ডাকনাম নন্দা।
-চিঠিতে এত সব মিছে কথা লিখলে কেন?
—কোনাে কুমতলব ছিল না। সত্যবাদী উদার চরিত্র ভাবীবরকে একটু বাজিয়ে দেখছিলুম সইবার শক্তি কতটা আছে।
—তােমার সেই পবননন্দন ভাদুড়ীর খবর কী?
—হাওয়া হয়ে উবে গেছে, তার অস্তিত্বই নেই। আমার কাছে একটি হনুমানজির ভালো ছবি আছে, তোমার সেই সুরঙ্গীর ফোটাের সঙ্গে বাঁধিয়ে রাখলে বেশ হবে না?
—তুমি একটি ভীষণ বখাটে মেয়ে। সেজন্যেই বি,এস-সিতে ফেল করেছ।
—ঝুনি মিত্তির আমার ডবল বখাটে, সে ফাস্ট হল কী করে? আমি অঙ্কে কঁাচা, মাক্সওয়েলের থিওরিটা মােটেই বুঝতে পারি না, আর ওইটেরই কোশ্চেন ছিল।
—কেন, ও তাে খুব সোজা অঙ্ক। বুঝিয়ে দিচ্ছি শোনাে। ভি ইকোয়েল টু রুট ওভার ওআন বাই কাপ্পা মিউ—
—থাক, বাসরঘরে অঙ্ক কষলে অকল্যাণ হয়।
—আচ্ছা কাল বুঝিয়ে দেব।
—কাল তো কালরাত্রি, বর-কনে দেখা হবার জো নেই। সেই পরশু ফুলশয্যায় দেখা হবে।
—বেশ তো, তখন বুঝিয়ে দেব।
—ফুলশয্যায় অঙ্ক কষলে মহাপাতক হয় তা জানাে? ঠাকুমার আবার আড়িপাতা রোগ আছে, যদি শুনতে পান যে নাতজামাই ফুলশয্যায় অঙ্ক কষছে। তবে গােবর খাইয়ে প্রায়শ্চিত্ত করবেন। তাড়া কিসের, আমি তো পালাচ্ছি না। বছরখানিক যাক, তারপর বুঝিয়ে দিও।
—আচ্ছা তাই হবে। এখন ঘুমানাে যাক, কি বল ? দেখ সুন্দা, তুমি খাসা দেখতে।
—তাই নাকি? তোমার দৃষ্টি তো খুব তীক্ষ।
—সুন্দা, আমার কি ইচ্ছে হচ্ছে জানো।
—আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ?
—ঠিক তা নয়। মনে হচ্ছে
—মনে হােক গে, এখন ঘুমোও।
0 comments:
Post a Comment