Sunday, July 2, 2017

মানুষের উৎপত্তি – প্রাচীন সুমেরীয় গ্রন্থানুসারে (মিথলজি)



খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০০ অব্দে মেসোপটেমিয়া অর্থাৎ বর্তমান আধুনিক ইরাকে গড়ে ওঠে সুমের সভ্যতা তথা সভ্য রাজাদের ভূমি। সুমেরীয়’রা তাদের সুসম্পন্ন ভাষা-লেখনী, স্থাপত্য-শিল্পকলা, জ্যোতির্বিদ্যা-গণিত ইত্যদি নিজস্ব ধারা গঠনের মাধ্যমে একটি উন্নত সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। শত শত দেবতাদের সমারোহে তাদের ধর্ম ব্যবস্থাটা ছিল জটলা পাকানো। পুরাণ মতে, প্রতিটি সুমেরীয় শহরের দেবতারা তাদের নিজ নিজ শহরের রক্ষাকর্তা ছিল, মানুষ আর দেবতারা একত্রে বসবাস করতো যেখানে মানুষ ছিল দেবতাদের দাস।

সুমেরীয়দের সৃষ্ট পৌরাণিক কাহিনী কল্প পাওয়া যায় নিপ্পুতে, একটি ফলকের উপরে। নিপ্পু হচ্ছে ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে গড়ে ওঠা একটি প্রাচীন মেসোপটেমিয়ান শহর।

সুমেরীয় ফলকগুলোর (Enuma Elish) মতে পৃথিবীর উৎপত্তি যেভাবে শুরু হয়ঃ
যখন উচ্চতায় স্বর্গের কোনো নাম দেয়া হলো না,
এবং মর্তের অভ্যন্তরের নাম এখন অব্দি অজানা,
এবং আদিতম ঈশ্বর “অপ্‌সু”, যিনি সৃষ্টি করেছিলেন ওদের
উত্তেজিত ঈশ্বর তিয়ামুত, তিনি হচ্ছেন মা উভয়ের
তাদের জল একত্রে মেশানো হলো
এবং কোনো মাঠ ছিল না, দেখা যেত না কোনো আবাস, জলাভূমি;
তখনো দেয়া হয়নি কোনো দেবতাদের, এক খণ্ড অস্তিত্বের জমি;
এবং না পেল কেউ নাম, আর না হলো নির্ধারণ কারুর নিয়তির দাম;
অতঃপর স্বর্গ মাঝে দেবতা হলো সৃষ্টি,
“লাহ্‌মু” আর “লাহামু” পেল মনুষ্যের কৃষ্টি।।

সুমেরীয় পুরাণে বলা আছে সৃষ্টির শুরুতে মানুষ সদৃশ দেবতারা পৃথিবী শাসন করতো। যখন তারা পৃথিবীতে আসে, তাদের হাতে অনেক কাজের দায়িত্ব ছিল এবং এই দেবতারা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মাটি খুঁড়ে আশপাশ বসবাসযোগ্য করে তুলে। আর ভূগর্ভস্থ থেকে খনিজ উত্তোলন করে।

পুরাণে এমনটা বলা আছে যে একটা পর্যায়ে গিয়ে দেবতারা তাদের এই পরিশ্রমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ আরম্ভ করে দিলো।

যখন দেবতারা মনুষ্য সমতুল্য
কাজ ভাগ করে নিয়েছিল আর বিনিময়ে মাসুলও দিতে হয়েছে
দেবতাদের মেহনত অবশ্য প্রশংসনীয় ছিল
অনেক ভারী কাজ ছিল এটা; আর অনেক পীড়াদায়কও ছিল বটে।

আনু ছিলেন দেবতাদের দেবতা, তিনি বুঝতে পারলেন যে দেবতাদের এই খাটুনিগুলো সত্যিই অনেক বেদনাদায়ক ছিল। আনুর ছেলে “এন্‌কি” বা “ই.এ” প্রস্তাব করেন মানুষ বানানোর জন্যে যাতে করে পরবর্তীতে পরিশ্রমটা মানুষের কাঁধে গিয়ে বর্তায়, আর তাই সে তার সৎ বোন “নিন্‌কি’র” সাহায্য নিয়ে তা ক’রে। একজন দেবতাকে এর জন্য মেরে ফেলা হয় এবং তার শরীর আর রক্তের সাথে কাদামাটি মিশিয়ে একটি দ্রব্য তৈরি করা হয় যা থেকে প্রথম মানুষ সৃষ্টি করা হয়, অনেকটা দেবতাদের সাদৃশ্যে।

তোমরা একইসাথে একজন দেবতার প্রাণনাশ করেছো
তার ব্যক্তিত্বের কসম
আমি তোমাদের উপর থেকে ভারী কাজের দায়িত্ব সরিয়ে নিলাম
আমি তোমাদের মেহনত এখন মানুষের উপর আরোপ করেছি
…..
…..
মাটির মধ্যেই দেবতা এবং মানুষ
সারাজীবন বাঁধা থাকবে
একতা’কে একই সুতোয় গেঁথে দিয়েছি
যাতে ক’রে দিন শেষে
রক্ত মাংস আর আত্মা
যেখানে দেবতারা সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ
সেই আত্মার মাঝেই যেন একটা রক্তের আত্মীয়তা গড়ে ওঠে।

প্রথম মানুষ’কে সৃষ্টি করা হয়েছিল ইডেনে, ইডেন একটা সুমেরীয় শব্দ যার অর্থ হলো ‘সমতল ভূখণ্ড’। Epic of Gilgamesh এ বর্ণিত আছে ইডেন ছিল দেবতাদের বাগান এবং এটার অবস্থান ছিল মেসোপটেমিয়ার কোনো এক জায়গায় মূলত জায়গাটা ছিল টিগ্রিস আর ইউফ্রেটস্‌ নদীর মাঝে।



সৃষ্টি নিয়ে প্রাচীন পুরাণের সুমেরীয় লিপিফলকে এন্‌কি। (world-myth.com)

শুরুর দিকে মানুষ’রা তাদের বংশবৃদ্ধি করতে পারছিল না, কিন্তু পরবর্তীতে এন্‌কি আর নিন্‌কি’র সাহায্যে এর সমাধান ঘটে। এভাবে ‘আদাপা’ সৃষ্টি হয়, যিনি কিনা একজন সম্পূর্ণ কার্যক্ষমতার অধিকারী এবং স্বাধীন মানুষ। এই ঘটনা’টা ঘটানো হয় এন্‌কি’র ভাই এন্‌লিলের অমতে এবং শুরু হয়ে যায় দেবতাদের ভেতর দ্বন্দ্ব। এভাবে এন্‌লিল মানুষের শত্রু হয়ে ওঠে এবং সুমেরীয় লিপিফলকে আরো বলা আছে যে মানুষ এরপর থেকে দেবতাদের পূজা করতে লাগলো আর অনেক কষ্ট আর দুর্ভোগ পোহাতে থাকলো।

এন্‌কি’র সাহায্যে আদাপা ‘আনু’র কাছে যায় এবং সেখানে আদাপা ‘জীবনের রুটিরুজি আর জল’ সম্বন্ধীয় একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি।

বাইবেলে বর্ণিত স্বর্গের এডাম আর ইভের  কাহিনীর সাথে এই সুমেরীয়’দের মনুষ্য সৃষ্টির গল্পের কিছু সাদৃশ্য পাওয়া যায় ।

উৎস ঃhttp://onubadokderadda.com/human_origin_sumerian_myth/

0 comments:

Post a Comment