বিরিয়ানির যত কথা – উৎপত্তি ও ইতিহাস
বিরিয়ানি পছন্দ করেনা এমন মানুষ ক’জন আছে বলুন? পুরনো ঢাকার কাচ্চি কিংবা তেহারীর নাম শুনেছেন অথচ জিভে জল চলে আসেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। এই চিত্র যে শুধু আমাদের দেশে তা কিন্তু নয়। গোটা ভারতবর্ষের প্রতিটি আনাচে কানাচে সেই চারশ বছর আগের মুঘল আমল থেকে আজ অবধি এতটুকুও কমেনি বিরিয়ানির আবেদন। তাই বিখ্যাত রম্যসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় বলতে হয় “একি ভানুমতি! একি ইন্দ্রজাল”। হাজারো ভাষা, বর্ণ, গোত্র, জাতি ও ধর্মে বিভক্ত ভূ ভারতবাসীকে এক টেবিলে বসাতে পারে বোধ হয় দুটি জিনিস। তার মধ্যে একটি হল ক্রিকেট আর অন্যটি বোধহয় বিরিয়ানি। এই ঐন্দ্রজালিক বিরিয়ানির জানা অজানা নানা দিক নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি।
যেভাবে শুরুটা হয়েছিল বিরিয়ানির
ভারতবর্ষের ইতিহাসে মুঘল সম্রাজ্ঞী মুমতাজ মহল শুধু তাজমহলের কারণে অমর হয়ে আছেন এমন কিন্তু নয়। তাজমহল ছাড়াও ভারতবর্ষের মানুষ আরও একটি আশ্চর্য জিনিস লাভ করেছে তাঁরই সুবাদে। সেই জিনিসটি হল আমাদের সকলের প্রিয় খাবার বিরিয়ানি। জনশ্রুতি আছে একবার মুমতাজ মহল মুঘল সৈন্যদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যারাকে গেলেন। কিন্তু সম্রাজ্ঞী অত্যন্ত দুঃখের সাথে দেখলেন সৈনিকদের স্বাস্থ্যের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তাই মিলেটারি মেসের বাবুর্চিকে তিনি স্বয়ং নির্দেশ দিলেন চাল ও গোশত সমৃদ্ধ এমন একটা পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে যেটা সৈনিকদের ভগ্ন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করে দিতে পারবে। সম্রাজ্ঞী মুমতাজ মহলের আদেশে বাবুর্চি যে খাবারটি তৈরি করলেন সেটাই আজকের দিনের বিরিয়ানি নামে পরিচিত। পরে ভোজন রসিক মুঘলদের খাবার টেবিলে জয়গা পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি সুস্বাদু বিরিয়ানির। মুঘলরাই ভারতে যেখানে যেখানে গিয়েছেন সেখানেই জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিরিয়ানির স্বাদ। সেটা আবার স্থানীয়দের হাতে পেয়েছে এককটি নতুন মাত্রা। আর তাই তো পূর্বে ঢাকা থেকে পশ্চিমে পেশোয়ার অবধি বিরিয়ানির এত রকমফের! এত বৈচিত্র্য!
বিরিয়ানি শব্দের উৎপত্তি যেভাবে
বিরিয়ানি শব্দের উৎপত্তি ফারসি বিরিয়ান শব্দ থেকে। ফারসিতে বিরিয়ান শব্দের অর্থ রান্নার আগে ভেজে নেওয়া। বাস্তবেও বিরিয়ানি রান্নার আগে সুগন্ধি চাল ঘি দিয়ে ভেজে নেওয়া হয়। তাই এই নামকরণ। জেনে রাখা ভাল আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিং অঞ্চলে যে “বিরন করা” শব্দটি ব্যবহৃত হয় সেটা এই ফারসি শব্দেরই পরিবর্তিতরূপ।
কাচ্চি বিরিয়ানি
আমাদের দেশে বিশেষত পুরান ঢাকায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হল কাচ্চি বিরিয়ানি। কাচ্চি শব্দটা এসেছে উর্দু কাচ্চা শব্দটি থেকে যার বাংলা অর্থ কাঁচা। যেহেতু সুগন্ধি চালের সাথে গোশত সরাসরি রান্না করা হয় তাই এর নাম হয়েছে কাচ্চি। এটি হিন্দি এবং উর্দুতেও একই নামে পরিচিত। সেদ্ধ ছাড়া খাসির গোশত টকদই দিয়ে মাখিয়ে তার উপর আলু আর চালের আস্তরণ দিয়ে রান্না করা হয় কাচ্চি বিরিয়ানি। অন্যদিকে সেদ্ধ বা পাক করা গোশত চালের সাথে মিশিয়ে তৈরি করা হয় পাক্কি বিরিয়ানি।
0 comments:
Post a Comment