চারটি মহাজাগতিক প্রশ্ন – কার্ল সেগান (Billions and Billions এর একটি অধ্যায়)
যখন ওপরে কোনো স্বর্গের নামাঙ্কিত হয়নি,
নিম্নের শক্ত ভূমিকেও ডাকা হতো না কোনো নামে,
নলখাগড়ার কোনো কুঁড়েঘর যখন আচ্ছাদিত হয়নি,
যখন কোন ঈশ্বরও আসেননি স্বমূর্তিতে,
নাম দ্বারা অনুল্লেখিত, অনিশ্চিত তাদের গন্তব্য-
তখনই যা অস্তিত্বে এসেছিলো তারাই ঈশ্বর……
– Enuma elish, ব্যাবিলনীয় সৃষ্টি-পুরাণ (খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের শেষে)*
* “Enuma elish” হচ্ছে সব পুরাণের প্রথম শব্দ গুচ্ছ, অনেকটা বুক অব জেনেসিসে যেমন বলা হয়েছে “In the Beginning”- যেটা আবার গ্রীক শব্দ “genesis” এর কাছাকাছি অর্থ।
প্রত্যেক সংস্কৃতিতেই তার নিজস্ব সৃষ্টি-পুরাণের গল্প আছে, যাতে আছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এবং এর অন্তর্নিহিত সবকিছু কোথা হতে এলো, তা বোঝার একটা প্রচেষ্টা। প্রায় সবসময়ই এইসব পুরাণগুলো, মুখে মুখে বলা গল্পকারদের গল্পের থেকে সামান্য বেশি কিছু হয়ে থাকে। আমাদেরও নিজস্ব সৃষ্টি-পুরাণ আছে। কিন্তু এটার ভিত্তি হচ্ছে অকাট্য সব বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ। এই পুরাণটা অনেকটা এরকম……
আমরা একটা সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বে বসবাস করছি, যেটা মানুষের বোঝার ক্ষমতার গণ্ডি পেরিয়েও আরো ব্যাপক এবং প্রাচীন। এটাতে অবস্থানরত ছায়াপথেরা একে অপরের কাছ থেকে দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে। আর এমনটা ঘটছে বিশাল এক বিস্ফোরণের প্রভাব হিসেবে, যাকে বলা হয় বিগ ব্যাং বা বৃহৎ বিস্ফোরণ। কোনো কোনো বিজ্ঞানী ভাবেন – আমাদের এই মহাবিশ্ব আসলে অনেক নিকটবর্তী মহাবিশ্বের মাঝে একটা; আর মহাবিশ্বের সংখ্যাটা অসীমও হতে পারে। কোনোটা হয়তো এক মুহূর্তের মধ্যেই জন্মায় এবং ধ্বংস হয়; প্রাণ পায় এবং মারা যায় এক মুহূর্তের ভিতরেই। বাকিরা হয়তো আজীবন ধরে প্রসারিত হতে থাকে। কিছু হয়তো খুব সূক্ষ্ম একটা সাম্যাবস্থায় উপনীত হয় আর অনেকবার (সম্ভবত অসীম সংখ্যক) সংকোচন এবং প্রসারণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। আমাদের নিজেদের মহাবিশ্বটা অবশ্য তার জন্মের পর থেকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন বছর পথ অতিক্রম করেছে; এখানে জন্ম বলতে বৃহৎ বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে বর্তমান জন্মের কথা বোঝাচ্ছি।
সেই অন্যান্য মহাবিশ্বগুলোতে হয়তো ভিন্ন প্রাকৃতিক নিয়মাবলী এবং ভিন্ন ধরনের পদার্থের অস্তিত্ব আছে। তাদের মাঝে অনেকগুলোতে হয়তো জীবনের বিকাশ অসম্ভব। কারণ, সেখানে হয়তো সূর্য এবং গ্রহ নেই, হয়তো হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের চেয়েও জটিল কোন মৌলিক পদার্থের উপস্থিতি নেই। কোনো কোনো মহাবিশ্বে হয়তো এমন জটিলতা, বৈচিত্র্য, এবং প্রাচুর্য আছে যার সামনে আমাদেরটাকে খাটো দেখাবে। যদি সেই অন্যান্য মহাবিশ্বগুলোর অস্তিত্ব থেকেই থাকে, আমরা সম্ভবত কখনোই তাদের গোপন রহস্যগুলো উদ্ধার করতে পারবো না, সেগুলো ভ্রমণ করা তো দূরের কথা। কিন্তু আমাদের নিজেদেরটায় দখল নেয়ার মত ব্যাপক সুযোগ আছে অন্তত।
আমাদের এই মহাবিশ্বটা কয়েক শত বিলিয়ন ছায়াপথের সমন্বয়ে গঠিত। আকাশগঙ্গা হচ্ছে সেগুলোর মাঝে একটা। এটাকে “আমাদের ছায়াপথ” ডাকতে পছন্দ করলেও এটার উপর আমাদের তেমন কোনো দখল নেই। এটি গ্যাস ও ধূলা এবং ৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র নিয়ে গঠিত। তাদের মাঝে একটা হচ্ছে আমাদের সূর্য। ছায়াপথের একটা অস্পষ্ট সর্পিল বাহুর মাঝে অবস্থিত স্থানীয় এক নক্ষত্র- যেটাকে আমরা খুব বেশি হলে বৈচিত্র্যহীন, একঘেয়ে, অতি সাধারণ বলে উল্লেখ করতে পারি। আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রের চতুর্দিকে ২৫০ মিলিয়ন বছরের যাত্রাপথে, সূর্যের রাজকীয় সফরসঙ্গীদের দল হিসেবে আছে একটা ক্ষুদ্র জগত। এদের কেউ হচ্ছে গ্রহ, কেউ উপগ্রহ, কেউ গ্রহাণু, কেউবা আবার ধূমকেতু। আমরা মানুষেরা ৫০ বিলিয়ন প্রজাতির মাঝে একটা যারা বেড়ে উঠেছি এবং বিবর্তিত হয়েছি ক্ষুদ্র একটা গ্রহে, সূর্য হতে যার অবস্থান তৃতীয়, যেটাকে আমরা বলি পৃথিবী। আমরা নিজেদের সৌর ব্যবস্থার অন্ততপক্ষে ৭০টি জগতে মহাকাশযান পাঠিয়েছি তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্যে। এদের মাঝে চারটির (চাঁদ, শুক্র, মঙ্গল এবং বৃহস্পতি) বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ কিংবা পৃষ্ঠদেশে অবতরণও করেছি । আমরা আত্মনিয়োগ করেছি, এক মহাকাব্যিক সাধনায়।
ভবিষ্যদ্বাণী জিনিসটা হারিয়ে যাওয়া একটি শিল্প। চার্লস ম্যাকেই এর ভাষায় “ভবিষ্যতের গাঢ় অন্ধকারময়তাকে ভেদ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা” থাকা সত্ত্বেও, সত্যিটা হচ্ছে, আমরা কাজটাতে তেমন দক্ষ নই। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যদি বলি, সবচেয়ে ব্যাপক আবিষ্কারগুলো কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। আবিষ্কারগুলো আমাদের জানা থাকা তথ্যগুলো বিচার করে এবং পরের ধাপ আন্দাজ করে পাওয়া নয়, বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু। এর কারণ হলো – প্রকৃতি মানুষের চেয়েও বেশি সৃজনশীল, আরো বেশি সূক্ষ্ম, এবং অনেক বেশি অভিজাত। তাই আগামী কয়েক দশকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কারের মাঝে কী কী থাকতে পারে সেটা কল্পনা করার প্রচেষ্টা, আমাদের সৃষ্টি পুরাণের ভবিষ্যতের আভাস দেয়া এক প্রকার বোকামিই বলা চলে। কিন্তু অন্যদিকে, নিত্যনতুন সব যন্ত্রপাতির উন্নয়নে একটা স্পষ্ট ধারা দেখা যাচ্ছে, যা অন্তত লোম খাড়া করার মত নতুন কিছু আবিষ্কারের সম্ভাব্যতাকে নির্দেশ করে।
কোনো জ্যোতির্বিজ্ঞানীকে সবচেয়ে পছন্দের চারটে আকর্ষণীয় সমস্যা চিহ্নিত করতে বললে, তারা নিজ নিজ স্বভাব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ীই করবেন। আমি জানি, তাদের অনেকের উত্তরই আমারগুলোর চেয়ে ভিন্ন হবে। অনেক অনেক রহস্যের মধ্যে কয়েকটা হচ্ছে – বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ৯০ শতাংশ কী দিয়ে তৈরি (যেগুলো সম্পর্কে আমরা এখনো অবগত নই); সবচেয়ে নিকটবর্তী কৃষ্ণ গহ্বর চিহ্নিতকরণ; ছায়াপথগুলোর মধ্যে অদ্ভুত গুণিতক দূরত্ব (অর্থাৎ, ছায়াপথগুলো একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা এবং/অথবা তার গুণিতক দূরত্বে অবস্থান করে, মাঝামাঝি অংশে নয়); গামা রশ্মির বিস্ফোরণকারীদের প্রকৃতি (এ ধরনের বিস্ফোরণেপুরো সৌরব্যবস্থার সমান এলাকা পর্যায়ক্রমে বিস্ফোরিত হতে থাকে); মহাবিশ্বের বয়স নাকি এর মাঝেই খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে পুরাতন নক্ষত্রের বয়সের চেয়েও কম (অবশ্য হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি দেখা গেছে যে, আমাদের বিশ্ব হচ্ছে প্রায় ১৫ বিলিয়ন বছরের পুরনো, আর তেমন হলে এই ধাঁধার সমাধান হয়ে গেছে); পৃথিবীর গবেষণাগারে ধূমকেতুর সংগৃহীত নমুনার নিরীক্ষণ; আন্তঃনাক্ষত্রিক অ্যামাইনো এসিডের অন্বেষণ; এবং আদি ছায়াপথগুলোর বৈশিষ্ট্যসমূহ।
যদি বিশ্বব্যাপী জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং মহাকাশ অভিযানে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো কাটছাঁট না করা হয় (সম্ভাবনাটা বেদনাদায়ক হলেও খুব বেশিরকম সম্ভব) তাহলে এই চারটা প্রশ্নের মধ্যে বিপুল সম্ভাবনা আছে।
১। মঙ্গলে কি কখনো প্রাণের অস্তিত্ব ছিলো?
মঙ্গল গ্রহ আজ হচ্ছে একটা শুকনো হাড়ের মত শীতল মরুভূমি। কিন্তু পুরো গ্রহ জুড়েই স্পষ্টভাবে প্রাচীন সব নদীর উপত্যকাগুলো সংরক্ষিত আছে। পাশাপাশি সেখানে প্রাচীন লেক এবং সম্ভবত সমুদ্রের চিহ্নও আছে। এর ভূ-পৃষ্ঠ কতটুকু খাঁজবিশিষ্ট, সেটা হতে আমরা মোটামুটি একটা ধারণা নিতে পারি যে কখন মঙ্গল গ্রহ আরো বেশি উষ্ণ এবং সিক্ত ছিলো। এই পদ্ধতিটা সংশোধিত হয়েছে আমাদের চাঁদে পদচারণার মাধ্যমে, এবং অ্যাপোলো এর নভোচারীদের মাধ্যমে আনা চাঁদের নমুনার উপাদানসমূহের অর্ধায়ু হতে তাদের তেজস্ক্রিয়তার কাল নির্ণয় করে। যাই হোক, মঙ্গলের ক্ষেত্রে জবাবটা হচ্ছে প্রায় চার বিলিয়ন বছর আগে। কিন্তু চার বিলিয়ন বছর আগের সময়টাতেই তো পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব ঘটছিলো! এটা কি সম্ভব যে সেখানে একই পরিবেশ বিশিষ্ট পাশাপাশি দুটো গ্রহ ছিলো, এবং একটাতে জীবনের উদ্ভব ঘটলেও অপরটায় তা ঘটেনি? নাকি মঙ্গলে সত্যিই প্রাণের উদ্ভব ঘটেছিলো, কিন্তু পরিবেশের রহস্যজনক পরিবর্তনে বিলীন হয়ে গিয়েছিলো? নাকি সেখানে মরূদ্যান কিংবা উদ্বাস্তু জাতীয় কিছু রয়ে গেছে? সম্ভবত ভূ-পৃষ্ঠের তলে, যেখানে এখনো হয়তো কোনো এক প্রকারের প্রাণ টিকে আছে? মঙ্গল তাই আমাদের জন্যে দুটো প্রাথমিক পর্যায়ের ধাঁধা দাঁড় করিয়েছে – অতীতে কিংবা বর্তমানে সেখানে কোনো প্রাণ ছিলো বা আছে কিনা, এবং পৃথিবীর মতই একটা গ্রহের চিরস্থায়ী বরফ যুগে আটকে পড়ে থাকার উপযুক্ত কারণ কী। শেষের প্রশ্নটাই হয়তো ব্যবহারিক ভাবে আমাদের কাছে বেশি আগ্রহ উদ্দীপক। কারণ, আমরা এমন এক প্রজাতি যারা তার নিজস্ব পরিবেশকে বিরামহীনভাবে টানাহেঁচড়া করে যাচ্ছে, এর পরিণতি সম্পর্কে অত্যন্ত সীমিত জ্ঞান নিয়েই।
ভাইকিং যখন ১৯৭৬ সালে মঙ্গলে অবতরণ করেছিলো, সেটি তার বায়ুমণ্ডল শুঁকে দেখেছিলো; খুঁজে পেয়েছিলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মতই অনেক গ্যাসের অস্তিত্ব – যেমন, কার্বন ডাই অক্সাইড। আবার পৃথিবীতে ব্যাপক পরিমাণে পাওয়া যায়, তেমন কিছু গ্যাসের বেশ অভাব ওখানে- যেমন, ওযোন। এর চেয়েও বড় ব্যাপার হলো, পরমাণুর নির্দিষ্ট প্রকারভেদ, তার আইসোটোপিক গঠন নির্ণয় করা গিয়েছিলো; এবং অনেক ক্ষেত্রেই পৃথিবীতে প্রাপ্ত সমতুল্য পরমাণুদের চেয়ে ভিন্ন আঙ্গিকের আইসোটোপিক গঠন পাওয়া গিয়েছিলো। আমরা মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
বেশ মজার একটা ঘটনা তখন প্রকাশিত হয়েছিলো। অ্যান্টার্কটিকার বরফের পাতে কিছু উল্কাপিণ্ড (মহাশূন্য হতে উড়ে আসা পাথরের টুকরো) পাওয়া গিয়েছিলো, যেগুলো বসে ছিলো জমাট বাঁধা বরফের উপরে। এদের কিছু পাওয়া গিয়েছিলো ভাইকিং এর আমলে, কিছু আরো পরে। এদের সবকটাই পৃথিবীতে এসে পড়েছিলো ভাইকিং মিশনের আগে, মূলত শত-সহস্র বছর আগেই। অ্যান্টার্কটিকার পরিষ্কার বরফের খাঁজ হতে খালি চোখেই সেগুলো আলাদা করা যেতো। সংগৃহীত সেই উল্কাপিণ্ডগুলোর অধিকাংশই নিয়ে আসা হয়েছিলো অ্যাপোলোর আমলে ডাকা সেই হিউস্টনের লুনার রিসিভিং ল্যাবরেটরিতে।
কিন্তু নাসার বাজেট বরাবরই বেশ অল্প ছিলো। বহুবছর যাবত এই উল্কাপিণ্ডগুলোর প্রাথমিক নিরীক্ষণটুকুও করা হয়নি। দেখা গেলো কোনোটা এসেছে চাঁদ হতে – চাঁদে আরেকটা উল্কা কিংবা ধূমকেতুর আঘাতের ফলে, যাতে চাঁদের পাথরগুলো ছিটকে পড়েছিলো মহাশূন্যে, যেগুলোর এক বা একাধিক টুকরো এসে পড়েছিলো অ্যান্টার্কটিকায়। এসব উল্কাপিণ্ডের দুই একটা এসেছিলো শুক্র গ্রহ থেকে। মঙ্গলের খনিজসমূহের মাঝে লুকিয়ে থাকা তার বায়ুমণ্ডলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিচার করে একটা বিস্ময়কর সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় – উল্কাগুলোর কয়েকটা নিশ্চিতভাবেই মঙ্গল হতে এসেছিলো।
১৯৯৫-৯৬ সালে, নাসার জনসন স্পেস ফ্লাইট সেন্টার এর বিজ্ঞানীরা অবশেষে উল্কাগুলোর একটাকে পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পেলেন- ALH84001- যেটা মঙ্গল হতে আসার ব্যাপারটা প্রমাণ করেছিলো। এটা দেখতে কোনোভাবেই অসাধারণ কিছু মনে হচ্ছিলো না, বাদামী আলুর মতো দেখাচ্ছিলো। এর অণুরসায়ন নিরীক্ষণ করে নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু জৈব পদার্থ পাওয়া গেলো, যেগুলো মূলত পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (PAH) ছিলো। এগুলো নিজেরা অবশ্য তেমন একটা চমকপ্রদ কিছু নয়। গঠনগত ভাবে তারা দেখতে বাথরুমের ষড়ভুজাকৃতির (ছয় কোণা বা বাহুযুক্ত) টাইলসের মত, যার প্রত্যেকটা শীর্ষে একটা করে কার্বন অণু আছে। PAH জিনিসটা সাধারণ উল্কায়, মহাকাশের ধূলিকণায় তাদের উপস্থিতির জন্যে পরিচিত; বৃহস্পতি ও টাইটানে তাদের উপস্থিতি আছে বলে সন্দেহ করা হয়। তারা কোনোভাবেই প্রাণের উপস্থিতি নির্দেশ করে না। কিন্তু সেই PAH গুলো এমনভাবে সজ্জিত ছিলো যে অ্যান্টার্কটিকার উল্কাটার যতই ভেতরে যাওয়া যায় ততই তাদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছিলো। আর এটাই নির্দেশ করছিলো যে পৃথিবীর শিলার PAH এর সংস্পর্শে এসে কিংবা যানবাহনের ধোঁয়ার মাধ্যমে এরা দূষিত হয়নি, বরং এরা উল্কাটারই অন্তর্নিহিত অংশ। কোনো কোনো উল্কাপিণ্ডে, পৃথিবীর প্রাণের সাথে সংশ্লিষ্ট আরো কিছু খনিজ পদার্থ পাওয়া গিয়েছিলো। কিন্তু সবচেয়ে উৎসাহব্যাঞ্জক আবিষ্কারটা ছিলো তাদের মধ্যে থাকা অণুজীবাশ্ম (ন্যানো ফসিল), অর্থাৎ একটার সাথে আরেকটা জোড়া লেগে থাকা অনেকগুলো ক্ষুদ্রাকার গোলক, ঠিক অনেকটা পৃথিবীর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়ার কলোনির মত। কিন্তু আমরা কি নিশ্চিত হতে পারি যে মহাবিশ্বে কিংবা মঙ্গলে ঠিক একই আকৃতিবিশিষ্ট কোন খনিজ উপাদান নেই? এই প্রমাণই কি যথেষ্ট? বহু বছর যাবত আমি ইউএফও (UFO = Unidentified Flying Object) সম্পর্কে জোর দিয়ে বলে আসছি যে চোখ ধাঁধানো দাবির জন্য চোখ ধাঁধানো প্রমাণ প্রয়োজন। মঙ্গলে প্রাণের প্রমাণের ক্ষেত্রে এখনো এরা যথেষ্ট পরিমাণে চোখ ধাঁধানো নয়।
কিন্তু এভাবে শুরুটা হলো অন্তত। এটা আমাদেরকে মঙ্গলের এই বিশেষ উল্কাপিণ্ডটির অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের দিকে মনযোগ দিতে ইঙ্গিত দেয়। এটা অন্যান্য মাঙ্গলিক উল্কার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়। এটা আমাদেরকে অ্যান্টার্কটিকার বরফ-ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের কোন উল্কার অনুসন্ধান করার উৎসাহ দেয়। এটা আমাদেরকে অগভীর স্থানের শিলা খোঁজার ইশারা করে, শুধু গভীরে গেঁথে থাকা শিলাখণ্ড নয়। এটা আমাদের তাড়না দেয় ভাইকিং এর জীববিদ্যা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার হেঁয়ালিপূর্ণ ফলাফলগুলোকে পুনর্বিবেচনা করে দেখতে, যেগুলোর কয়েকটাতে প্রাণের উপস্থিতি নিয়ে বিজ্ঞানীরা তর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন। এটা আমাদের প্রস্তাব করে মঙ্গলের সেই অঞ্চলে মহাকাশযান পাঠাতে, যেগুলো নিজেদের উষ্ণতা এবং সিক্ততাকে সবার শেষে সমর্পণ করেছিলো। এটা মঙ্গলের বহিঃজীববিদ্যা (exobiology) নামক ক্ষেত্রকে পুরোপুরি উদ্ভাসিত করে দেয়।
এবং আমরা যদি ভাগ্যবান হই, যদি মঙ্গলে একটা ক্ষুদ্র অণুজীবও খুঁজে পাই, তাহলে আমরা পাবো অভাবনীয় এক পরিস্থিতি; যেখানে থাকবে দুটো পাশাপাশি গ্রহ, যাদের প্রত্যেকটাতেই আদি যুগের একই সময়ে প্রাণের উদ্ভব ঘটেছিলো। এটা সত্যি যে, হয়তো উল্কার আদান-প্রদানের মাধ্যমে প্রাণ এক জগত থেকে অন্য জগতে এসেছিলো। এমন হলে সেটা প্রত্যেক জগতে স্বাধীনভাবে প্রাণের উৎস হয়েছে সেটা বলা যায় না। জৈব রসায়ন এবং প্রাণী-সত্তার অঙ্গসংস্থানবিদ্যাকে যাচাই করে আমরা সেটা নিশ্চিতভাবে বের করতে পারবো। হয়তো এই দুই জগতের শুধুমাত্র একটাতে প্রাণের উন্মেষ ঘটেছিলো, কিন্তু বিবর্তিত হয়েছিলো উভয়ের মধ্যেই, স্বন্তন্ত্রভাবে। তখন, আমাদের হাতে থাকবে কয়েক বিলিয়ন বছরের স্বাধীনভাবে বিবর্তনের উদাহরণ, জীববিদ্যার এক মহামূল্যবান খনি যেটা অন্য কোনো উপায়ে পাওয়া সম্ভব নয়।
আর যদি আমরা সর্বোচ্চ ভাগ্যবান হই, তবে পাবো সত্যিকারের স্বাধীন কিছু প্রাণী-সত্তা। তাদের জেনেটিক কোডিং কি নিউক্লিক এসিড ভিত্তিক হবে? তাদের এনজাইমেটিক অনুঘটন (enzymatic catalysis) কি প্রোটিন ভিত্তিক হবে? কি ধরণের জেনেটিক কোডিং ব্যবহার করবে তারা? এসব প্রশ্নের উত্তর যাই হোক না কেন, জীববিজ্ঞানের মাথায় চূড়ান্ত বিজয়ের মুকুট এসে যাবে। এবং পরিণতি যাই হোক, এর অন্তর্নিহিত ফলাফল দাঁড়াবে এমন – প্রাণ জিনিসটা অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও বেশি । এই প্রশ্নগুলোর জবাব পাবার প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে, পরবর্তী দশকে অনেক জাতিই রোবট পরিক্রমণকারী (robot orbiters), অবতরণকারী (landers), ভ্রমণক্ষম যানবাহন (roving vehicles), এবং ভূ-পৃষ্ঠের নিচে ভেদ করে যেতে সক্ষম মহাকাশযান মঙ্গলে পাঠাবে। এবং সম্ভবত ২০০৫ এর ভেতরেই মঙ্গলের ভূ-পৃষ্ঠ এবং তার নিচের নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্যে রোবটিক অভিযান চালানো হবে।
২। টাইটান কি আসলে প্রাণের উন্মেষের এক গবেষণাগার?
টাইটান হচ্ছে শনির একটা বড় চাঁদ, পৃথিবীর থেকেও দশগুণ ঘনত্বের বায়ুমণ্ডল বিশিষ্ট এক অসাধারণ জগত এবং মূলত নাইট্রোজেন (ঠিক পৃথিবীর মতই) ও মিথেন নিয়ে গঠিত। দুটি আমেরিকান ভয়েজার মহাকাশযান টাইটানের বায়ুমণ্ডলে বেশ কিছু কার্বনভভিত্তিক জৈব অণুর সন্ধান পেয়েছিলো। ঠিক এমন যৌগগুলোই পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তির সাথে জড়িত ছিলো। এই চাঁদটার চারপাশে অস্বচ্ছ লালচে পদার্থের একটা স্তর আছে। পৃথিবীর গবেষণাগারে টাইটানের বায়ুমণ্ডল অনুকরণ করে সেখানে শক্তি চালনা করে দেয়ার পর একটা লালচে-বাদামী নিরেট বস্তু প্রস্তুত করা হয়েছিলো, যার বৈশিষ্ট্য টাইটানের বায়ুমণ্ডলে পাওয়া সেই পদার্থগুলোর মতই। এই বস্তুটা কী দিয়ে তৈরি সেটা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখলাম, পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশে প্রয়োজনীয় উপাদানের অনেকগুলোই আছে সেখানে। যেহেতু টাইটান সূর্য হতে বহু দূরে, তাই সেখানে থাকা যে কোনো পানিই জমাট বেঁধে থাকবে- এবং স্বভাবতই আপনার কাছে মনে হবে, এটা আসলে পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তির সময়ের অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যাই হোক, ধূমকেতুগুলোর সংঘর্ষ এর পৃষ্ঠদেশকে গলিয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে, আর এমন সংঘর্ষ ঘটে মাঝে মাঝেই। এমন হলে, টাইটানের যে কোনো সাধারণ অঞ্চলই তার সাড়ে চার বিলিয়ন বছরের ইতিহাসের মধ্যে কয়েক হাজার বছর ধরে পানির নিচে থাকতে পারে। ২০০৪ এর মাঝে, নাসার “ক্যাসিনি (Cassini)” মহাকাশযান শনির সিস্টেমে গিয়ে পৌঁছুবে; আর ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির তৈরিকৃত “হইগেনস” নামক একটা অনুসন্ধানী যন্ত্র সেই যান হতে নিজেকে মুক্ত করে ধীরে ধীরে টাইটানের বায়ুমণ্ডলভেদ করে এর রহস্যময় ভূপৃষ্ঠে নেমে আসবে। হয়তো তখন আমরা জানতে পারবো টাইটান তার প্রাণের বিকাশের পথে কতদূর এগিয়েছে।
৩। অন্য কোথাও কি বুদ্ধিমান প্রাণসত্তার অস্তিত্ব আছে?
বেতার তরঙ্গ জিনিসটা আলোর গতিতে ভ্রমণ করতে পারে। কিছুই এর চেয়ে দ্রুত চলতে সক্ষম নয়। সঠিক কম্পাংকে তারা পরিষ্কারভাবে আন্তঃনাক্ষত্রিক জগত এবং গ্রহের বায়ুমণ্ডলসমূহ অতিক্রম করতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বেতার/রাডার টেলিস্কোপ যদি অন্য কোনো নক্ষত্রের কোনো গ্রহে বসানোএকই রকম কোনো টেলিস্কোপের দিকে মুখ তাক করে থাকে, তাহলে দুই টেলিস্কোপের মধ্যেকার দূরত্বসহস্র আলোকবর্ষ হলেও তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগে সক্ষম হবে। এ কারণেই, বেতার টেলিস্কোপসমূহকে ব্যবহার করা হয়; এটাই দেখার জন্যে যে কেউ আমাদেরকে কোনো বার্তা পাঠাচ্ছে কিনা। এখন পর্যন্ত আমরা নির্দিষ্ট করে তেমন কিছুই পাইনি, অবশ্য আশাজাগানিয়া কিছু “ঘটনা” ঘটেছে – কিছু সংকেত ধারণ করা হয়েছে যেগুলো মহাজাগতিক বুদ্ধিমত্তার সবগুলো শর্তকেই পূরণ করে, শুধু একটা শর্ত বাদে: আপনি টেলিস্কোপটাকে পুনরায় চালু করেছেন, এবং মহাকাশের সেই নির্দিষ্ট অংশে সেটাকে আবার তাক করে বসে থেকেছেন; মিনিট পেরুলো, মাস গেলো, বছর ঘুরলো; কিন্তু একই সংকেত পুনরায় আর পাওয়া গেলো না। আমরা আমাদের অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার একদম শুরুতে মাত্র। সত্যিকারের একটা বিশদ অনুসন্ধান চালাতে এক কি দুই দশক সময় লাগবে। যদি পৃথিবীর বাইরে বুদ্ধিমত্তা পাওয়া যায়, তাহলে বিশ্বজগৎ এবং আমাদের নিজ সম্পর্কিত সমস্ত দৃষ্টিভঙ্গিই পালটে যাবে। এবং যদি দীর্ঘ ও নিয়মতান্ত্রিক অনুসন্ধান চালিয়েও আমরা কিছু না পাই, তবে হয়তো আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবো। সেই সিদ্ধান্তটা হলো – পৃথিবীতে যে প্রাণ উৎপত্তি লাভ করেছে, সেটা অত্যন্ত দুর্লভ, অত্যন্ত দামী। অর্থাৎ উভয়ক্ষেত্রেই, এই অনুসন্ধানটা জরুরি।
৪। মহাবিশ্বের উৎস এবং নিয়তি কী?
ব্যাপারটা অত্যন্ত বিস্ময়কর! আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান এখন সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উৎস, প্রকৃতি, এবং নিয়তিনির্ধারণের একদম কাছাকাছি চলে এসেছে। মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে; সবগুলো ছায়াপথ একে অপরের কাছ হতে দৌড়ে পালাচ্ছে। এই প্রবাহটাকে বলা হয় হাবল প্রবাহ। এটা ব্রহ্মাণ্ডের শুরুর সময়ে (অন্তত এই জন্মটার সময়ে) ঘটা বিশাল বিস্ফোরণের স্বপক্ষের তিনটা প্রমাণের একটা। পৃথিবীর অভিকর্ষ আকাশের উদ্দেশ্যে ছোঁড়া একটা পাথরের টুকরোকে টেনে ফিরিয়ে আনার জন্যে যথেষ্ট শক্তিশালী, কিন্তু মুক্তিবেগে ছোটা একটা রকেটের জন্যে নয়। একই কথা প্রযোজ্য মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেও: যদি এতে যথেষ্ট পরিমাণ পদার্থ থাকে, তাহলে এই সকল পদার্থ হতে প্রয়োগ করা মহাকর্ষ বল সম্প্রসারণকে ধীর করে ফেলবে, এবং একসময় একেবারে থামিয়ে দেবে। প্রসারণশীল ব্রহ্মাণ্ড তখন সংকোচনশীল বিশ্বে পরিণত হবে।
আর যদি ব্রহ্মাণ্ডে যথেষ্ট পরিমাণে পদার্থ না থাকে, তবে সম্প্রসারণ চলতে থাকবে চিরদিন। এই বিশ্বজগতে বর্তমান পদার্থের ভাণ্ডার এর সম্প্রসারণের গতিকে ধীর করার জন্যে পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু যদ্দূর মনে হচ্ছে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সুবিধার জন্যেই হয়তো ব্রহ্মাণ্ডে বিপুল পরিমাণে ডার্ক ম্যাটার আছে যা আলো নির্গত করে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করে না। যদি দেখা যায় যে প্রসারণশীল ব্রহ্মাণ্ড আসলে শুধুমাত্র অস্থায়ী একটি দশা, যা একসময় সংকোচনশীল ব্রহ্মাণ্ড দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে, তাহলে এটা নিশ্চিতভাবেই অসীম সংখ্যক সংকোচন ও প্রসারণের চক্রে ঘুরতে থাকা অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের দিকে নির্দেশ করবে। অনন্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হবার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা সবসময়ই এখানে ছিলো।
আবার যদি, প্রসারণের চাকা ঘুরিয়ে দেয়ার মত পদার্থ যদি না থাকে, তাহলে পুরোপুরি শূন্য হতে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। প্রশ্নগুলো বেশ গভীর এবং অত্যন্ত কঠিন! প্রত্যেক মানব সভ্যতাই কোনো না কোনো উপায়ে এই প্রশ্নগুলোর মোকাবিলা করেছিলো। কিন্তু সদুত্তর খুঁজে পাবার প্রকৃত সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে কেবল আমাদের সময়ে এসে। কোনো অনুমান কিংবা গল্পের উপর ভিত্তি করে নয় – বরং বাস্তব, বারংবার পর্যবেক্ষণযোগ্য, এবং যাচাইযোগ্য উপাত্তের মাধ্যমে।
আমার মনে হয়, আগামী এক কিংবা দুই দশকে এই চারটা ক্ষেত্রেই চমকপ্রদ কিছু আবিষ্কার হবে। এবং এই আশার পেছনে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। আবার, আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের আরো অনেক প্রশ্ন আছে যেগুলো দিয়ে আমি এই চারটাকে প্রতিস্থাপন করতে পারতাম। কিন্তু সবচেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণীটা আমি করতে পারি, সেটা হচ্ছে – সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিষ্কারসমূহ হবে সেগুলোই, যেগুলোকে দিব্য চোখে দেখার মত পর্যাপ্ত জ্ঞানও আজ আমাদের নেই।
উৎস ঃ http://onubadokderadda.com/four_cosmic_question/
0 comments:
Post a Comment