Thursday, June 22, 2017
সাতাশেই শুরু মস্তিষ্কের ক্ষয়
June 22, 2017 roddur
মানুষ তার মানসিক ক্ষমতার শীর্ষে থাকে ২২ বছর বয়সে। তা কমতে শুরু করে ২৭-এর পর থেকেই। বুড়িয়ে যাওয়ার শুরুটাও তাই বলা যায় ২৭-এ! এমনটা বললেন ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ার গবেষকরা। ১৮-৬০ বছর বয়সী ২ হাজার লোকের উপর ৭ বছর এ গবেষণা করা হয়। বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল নিউরোবায়োলজি অফ এজিং-এ। বিভিন্ন ধাঁধা,শব্দজট দিয়ে এ সময়টাতে তাদের মানসিক ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। ১২ জনের ৯ জনেই ২২ বছরে দক্ষতা দেখাতে পেরেছে। ২৭-এর পরই তাদের চিন্তার গতিতে ভাটা পড়তে দেখা গেছে।
Wednesday, June 21, 2017
জেমস জয়েসের গল্পঃ এরাবি
June 21, 2017 roddur
নর্থ রিচমণ্ড সড়কটা একটা নিঝুম কানা গলি। শুধুমাত্র ক্রিশ্চিয়ান ব্রাদার্স স্কুলের ছুটির সময়টায় কিছুক্ষণের জন্য কোলাহলে জেগে উঠতো, তারপর আবার ডুবে যেতো নির্জনতায়। গলির কানা মাথায় এক খণ্ড চৌকো জমিতে দাঁড়িয়ে ছিলো একটা দোতলা বিচ্ছিন্ন বাড়ি, পরিত্যক্ত। নিজেদের ভেতরের বাস করা আভিজাত্যে সজাগ বাদ বাকি বাড়িগুলো বাদামি শান্ত চেহারা নিয়ে একে অন্যের দিকে পলকহীন চোখে চেয়ে থাকতো।
চারটি মহাজাগতিক প্রশ্ন – কার্ল সেগান (Billions and Billions এর একটি অধ্যায়)
June 21, 2017 roddur
যখন ওপরে কোনো স্বর্গের নামাঙ্কিত হয়নি,
নিম্নের শক্ত ভূমিকেও ডাকা হতো না কোনো নামে,
নলখাগড়ার কোনো কুঁড়েঘর যখন আচ্ছাদিত হয়নি,
যখন কোন ঈশ্বরও আসেননি স্বমূর্তিতে,
নাম দ্বারা অনুল্লেখিত, অনিশ্চিত তাদের গন্তব্য-
তখনই যা অস্তিত্বে এসেছিলো তারাই ঈশ্বর……
– Enuma elish, ব্যাবিলনীয় সৃষ্টি-পুরাণ (খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের শেষে)*
* “Enuma elish” হচ্ছে সব পুরাণের প্রথম শব্দ গুচ্ছ, অনেকটা বুক অব জেনেসিসে যেমন বলা হয়েছে “In the Beginning”- যেটা আবার গ্রীক শব্দ “genesis” এর কাছাকাছি অর্থ।
Tuesday, June 13, 2017
জন ন্যাশের জন্মদিনে
June 13, 2017 roddur
অস্কার পাওয়া মুভি A Beautiful Mind এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এই গণিতবিদ এবং অর্থনীতিবিদের কথা জেনেছে। আর বিজ্ঞানে আগ্রহী মহলে ওনাকে সবাই চেনে ১৯৯৪ সাল থেকেই, যখন উনি অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার পেলেন। আর এ বছরেই তিনি Abel Prize পেলেন আরেকটি অসাধারণ আবিষ্কারের কারণ – বক্ররেখার আংশিক ব্যবকলন সমীকরণ (nonlinear partial differential equation) এর জন্য। তার দেয়া থিওরিগুলো শুধু গণিতে আর অর্থনীতিতে নয়, বিবর্তনবাদ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, একাউন্টিং, রাজনীতিসহ আরো অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়।
Monday, June 12, 2017
এবার রোবট পুলিশ নামছে দুবাইয়ের রাস্তায়
June 12, 2017 roddur
দুবাই পুলিশ বিভাগে প্রথম একটি রোবট পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয়েছে, শহরের শপিং মল এবং পর্যটন এলাকাগুলোতে টহল দেবে এই রোবট।
এর মাধ্যমে মানুষ কোন অপরাধের তথ্য দিতে পারবে, জরিমানা প্রদান করতে পারবে এবং এর বুকে থাকা টাচস্ক্রিন ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য নিতে পারবে।
রোবটের মাধ্যমে সংগৃহীত এই তথ্য পরিবহণ এবং ট্রাফিক পুলিশকেও দেয়া হবে।
দুবাইয়ের সরকার বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে পুলিশ বাহিনীর ৩০ শতাংশ রোবটিক করার লক্ষ্য আছে তাদের, তবে সেটা মানুষকে প্রতিস্থাপন করবে না।
"এই যন্ত্রের মাধ্যমে আমরা আমাদের অফিসারদের প্রতিস্থাপন করবো না" বলেন দুবাই পুলিশের স্মার্ট সার্ভিসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার খালিদ আল রাজুকি।
"তবে যেহেতু দুবাইতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, আমরা চাই পুলিশ অফিসাররা যাতে একটি নিরাপদ শহর গঠনের জন্য মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারে"।
তিনি বলেন, এই উপায় ব্যবহার করে তারা সর্বক্ষণ মানুষকে সেবা দিতে পারবেন। একইসাথে কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টারের সাথে সারাক্ষণ সংযুক্ত থাকার মাধ্যমে অপরাধ দমনেও এসব রোবট সহায়তা করতে পারবে।
পাল রোবটিক্সের তৈরি এই বিশেষ রোবট এসপ্তাহেই গালফ তথ্য এবং নিরাপত্তা মেলায় উপস্থাপন করা হয়।
বর্তামানে এটি শুধুমাত্র ইংরেজি এবং আরবিতে যোগাযোগ করতে পারে, তবে এতে রুশ, চাইনিজ, ফরাসী এবং স্প্যানিশ ভাষাও সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আগামী বছর আরো একটি রোবট দুবাই পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। তবে তা নির্ভর করবে অর্থায়নের ওপর।
উৎস ঃ এখানে ক্লিক করুন ...
এর মাধ্যমে মানুষ কোন অপরাধের তথ্য দিতে পারবে, জরিমানা প্রদান করতে পারবে এবং এর বুকে থাকা টাচস্ক্রিন ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য নিতে পারবে।
রোবটের মাধ্যমে সংগৃহীত এই তথ্য পরিবহণ এবং ট্রাফিক পুলিশকেও দেয়া হবে।
দুবাইয়ের সরকার বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে পুলিশ বাহিনীর ৩০ শতাংশ রোবটিক করার লক্ষ্য আছে তাদের, তবে সেটা মানুষকে প্রতিস্থাপন করবে না।
"এই যন্ত্রের মাধ্যমে আমরা আমাদের অফিসারদের প্রতিস্থাপন করবো না" বলেন দুবাই পুলিশের স্মার্ট সার্ভিসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার খালিদ আল রাজুকি।
"তবে যেহেতু দুবাইতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, আমরা চাই পুলিশ অফিসাররা যাতে একটি নিরাপদ শহর গঠনের জন্য মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারে"।
তিনি বলেন, এই উপায় ব্যবহার করে তারা সর্বক্ষণ মানুষকে সেবা দিতে পারবেন। একইসাথে কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টারের সাথে সারাক্ষণ সংযুক্ত থাকার মাধ্যমে অপরাধ দমনেও এসব রোবট সহায়তা করতে পারবে।
পাল রোবটিক্সের তৈরি এই বিশেষ রোবট এসপ্তাহেই গালফ তথ্য এবং নিরাপত্তা মেলায় উপস্থাপন করা হয়।
বর্তামানে এটি শুধুমাত্র ইংরেজি এবং আরবিতে যোগাযোগ করতে পারে, তবে এতে রুশ, চাইনিজ, ফরাসী এবং স্প্যানিশ ভাষাও সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আগামী বছর আরো একটি রোবট দুবাই পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। তবে তা নির্ভর করবে অর্থায়নের ওপর।
উৎস ঃ এখানে ক্লিক করুন ...
Sunday, June 11, 2017
মাত্র পাঁচ মিনিটে স্মার্ট ফোন চার্জ করা যাবে!
June 11, 2017 roddur
মাত্র পাঁচ মিনিটে স্মার্ট ফোন চার্জ করার নতুন প্রযুক্তি ২০১৮ সাল নাগাদ বাজারে আসতে পারে বরে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১৫ সালে ইসরায়েলের স্টোরডট নামের একটি প্রতিষ্ঠান আমেরিকার লাস ভেগাসে এক প্রযুক্তি মেলায় এ ধরণের প্রযুক্তি তুলে ধরেছিল।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী বিবিসিকে জানিয়েছেন আগামী বছরের মধ্যে পাঁচ মিনিটে মোবাইল ফোন চার্জ করার প্রযুক্তি ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে যাবে।
Saturday, June 10, 2017
পরবাসী - হাসান আজিজুল হক
June 10, 2017 roddur
কান পেতে কিছু শোনার চেষ্টা করল সে। কিছু একটা শব্দ। কিন্তু কিছুই শোনা গেল না। বাতাস কিংবা পাতা ঝরার শব্দ … কোনো কিছুই তার কানে এলো না। এই এতটুকু সময়ের মধ্যেই মাটি বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে। নিঃশব্দ শিশিরের হিমে স্নান করে বিবর্ণ পাতাগুলো ভিজে। শীতের শেষ বলে সারাদিন ধরে উত্তর দিক থেকে ঝড়ের বেগে বাতাস দিয়েছে … খোলা মাঠ পেয়ে বাতাস হু হু করে দৌড়ূতে দৌড়ূতে শরীরের সমস্ত উত্তাপ শুষে নিয়ে চলে গেছে। তারপর নতুন করে আবার ঝাপটা এসেছে। কিন্তু সন্ধ্যার সূচনাতেই বাতাস দু’একবার ডানা ঝাপটা দিয়ে শুকনো পাতা ঝরিয়ে একেবারে এ দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে স্তব্ধ হয়ে এসেছে বড় বড় মাঠ, ছিলে ছিলে পানি-জমা ডোবা এবং খাল, আধ শুকনো হলদেটে অপরিচিত লতাপাতা কাঁটা-গুল্মের স্তূপাকার জঙ্গল। ওর চারপাশের কয়েক হাত জায়গা বাদ দিয়ে নিউমোনিয়া রোগীর শ্লেষ্মার মতো জমে বসেছে কুয়াশা। সারাদিনের ঝড়ো বাতাসের জায়গায় এসেছে কুয়াশা। সেই কুয়াশা এবং ম্লান রঙের আকাশ ও বাসি মড়ার মতো জলো অন্ধকারের নিচে তার চারপাশের পৃথিবীটা স্তব্ধ হয়ে গেল। সে কান পেতে কিছু একটা শোনার চেষ্টা করল। কিছু একটা শব্দ। কিন্তু কিছুই শোনা গেল না। বাতাস কিংবা ঝরা পাতার শব্দ, নিদেনপক্ষে শুকনো পাতার ওপর শিশির পড়ার টপ টপ শব্দ অথবা কোনো ছোট বন্যপ্রাণীর চকিত পদধ্বনি। কোনো কিছুই তার কানে এলো না। মোটা ছেঁড়া র্যাপারটা ভালো করে জড়িয়ে সে এবড়োখেবড়ো মাটির ওপর, খড়ের রঙের ভিজে দুর্বার ওপর দুই কনুইয়ের ভর দিয়ে মাথা উঁচু করে কুয়াশার দিকে চেয়ে রইল। এখন একমাত্র বক্ষস্পন্দন ছাড়া ওর কাছে শব্দের জগৎ সম্পূর্ণ রকম হারিয়ে গেলেও সারাদিন এবং সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত অবশ্য অজস্র শব্দের বিরাম ছিল না। অনেক দূরের কালো পিচঢালা রাস্তা দিয়ে গোঁ গোঁ করে বাস-ট্রাক যাচ্ছিল। মিষ্টি দ্রুত স্বল্পস্থায়ী শব্দ করে ছোট গাড়িগুলোর … এমনকি তীক্ষষ্ট হুইসেল বাজিয়ে ঝকঝক করে যে ট্রেন গেল তার শব্দও সে শুনতে পেয়েছে। এক রকম সারাদিনই এসব শব্দ সে শুনেছে। নির্জন মাঠটিতে বড় ঝোপটার ভেতরে শুয়ে শুয়ে তার আকাশ-পাতাল ভাবনার সঙ্গে এসব শব্দ মিশে গেছে, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে তার মাথার ওপর দিয়ে এক ঝাঁক কাক উড়ে গেছে, জোড়ায় জোড়ায় বক উড়ে গেছে, তারপর দেখা দিয়েছে শঙ্খচিল, সবার শেষে দু-একটি একাকী পাখি, তার মধ্যে একটা বিরাট পাখি বিশাল পাখা অনেকক্ষণ পরপর নাড়তে নাড়তে, পা দুটি পেছনে ফিরিয়ে মাটির সঙ্গে সমান্তরাল করে, সুন্দর মাথাটি এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে চলে গেছে। সোঁ সোঁ শব্দ তুলে পরম নিশ্চিন্তে সে আকাশের পুব কোণের দিকে ছোট হতে হতে এক সময় মিলিয়ে গেছে। মাঠের এক প্রান্তে গ্রামটার বাঁশঝাড়ে ছোট-বড় অসংখ্য পাখি তখন একসঙ্গে কলরব শুরু করেছে। রাত আরেকটু এগোনোর সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য ওদের কাউকেই আর দেখা যায়নি। সে তখন শীতে হি হি করে কাঁপতে কাঁপতে র্যাপারটা ভালো করে মুড়ি দিয়ে, পেটের কাছে র্যাপারের বিরাট ফুটোটা লুঙ্গি দিয়ে ঢাকতে গিয়ে নিজেকে প্রায় বিবস্ত্র করে ফেলেছে এবং এ অবস্থার মধ্যেও প্রচণ্ড খিদে অনুভব করেছে। ময়লা ছোট এক টুকরো কাপড়ে বাঁধা মোটা চিড়ে বের করে অন্যমনস্কের মতো চিবুতে চিবুতে সে ভাবল হুঁ, অরা ঘুমুইতে গেল।
আইনস্টাইনীয় বর্ণমালা
June 10, 2017 roddur
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী। তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। তাঁর সম্মানে আজ আমরা আইনস্টাইনীয় vocabulary শিখবো।
A- Albert Einstein, ১৯১৫ সালের নভেম্বরে আইনস্টাইন তাঁর বিখ্যাত ফিল্ড ইক্যুয়েশন প্রুসিয়ান একাডেমীতে জমা দেন। যা পরে জেনারেল রিলেটিভিটি বা সাধারণ আপেক্ষিকতা বিপ্লবের জন্ম দেয়।
B- Black Holes, আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুমান করে যে ভরের কারণে মহাশূন্যের জ্যামিতির পরিবর্তন হয়। আর অনেক বেশি ভরসমৃদ্ধ বস্তু ব্ল্যাকহোলের বা কৃষ্ণগহ্বরের জন্ম দিতে পারে।
C- Clocks, ঘড়ি (বা সময়) ভিন্ন ভিন্ন মহাকর্ষীয় অবস্থার জন্য ভিন্ন ভিন্ন গতিতে চলে- এটা হচ্ছে বিশেষ আপেক্ষিকতার মূল প্রতিপাদ্য।
D- Dark Matter, অদেখা এই “বস্তু” বা কণা মহাবিশ্বে ভরপুর বলে ধারণা করা হয়, যা শুধু এর মহাকর্ষীয় প্রভাব দ্বারা এর অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
E- “E=mc2” জানা মহাবিশ্বের সবচেয়ে বৈপ্লবিক সমীকরণ। এই সমীকরণ বলে ভর আর শক্তি সমানুপাতিক, আর এই সমীকরণের উপর ভিত্তি করে সাধারণ আপেক্ষিকতা গড়ে উঠেছে।
F- Frame Dragging, মহাশূন্য (space) নমনীয় আর প্রসারণশীল আর এতে অবস্থিত কণারা শক্তি আদান-প্রদান করে। শূন্য ঘূর্ণনরত কণাদের কিছু শক্তি শোষণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবী তার কক্ষপথের শূন্যকে (space) টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
G- Gravity, গ্র্যাভিটি বা মহাকর্ষ ছিল আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার হারানো ধন। ভরের কারণে স্থান-কালের বক্রতা ব্যাখা করতে আইনস্টাইনের একযুগ লেগে যায়।
H- Hubble Space Telescope, মার্চ ২০১৫ তে হাবল অনেক দূরের সুপারনোভার একটি ছবি তোলে, ছবিতে একই সুপারনোভা চারটি জায়গায় দেখা যায় (ছবিতে), একে Einstein’s Cross বলা হয়। এটা প্রমাণ করে গ্র্যাভিটির প্রভাবে আলো কিভাবে বেঁকে যায়। প্রথমবার এটি প্রমাণিত হয় স্যার আর্থার এস এডিংটনের হাতে, ১৯১৯ সালে।

I- Imagination, আইনস্টাইন বলেন Imagination “জ্ঞানের চাইতেও বেশী প্রয়োজনীয়”। সত্যিই, Imagination ছাড়া আপেক্ষিকতার অনেক ধারণাই সম্ভব ছিল না, আর সেই ধারণাগুলো এখন বাস্তব হিসেবে প্রমাণিত।
J- Jet, পদার্থবিজ্ঞানে Jet দুই রূপে আসে, Particle Jets- অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কণার স্প্রে যা আসে উচ্চ শক্তির সংঘর্ষ থেকে, যেটা স্পেশাল রিলেটিভিটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়। আর Astrophysical Jets- যা ব্ল্যাকহোল আর accretion disks থেকে আসে, আর একে ব্যাখ্যা করে জেনারেল রিলেটিভিটি।
K- Kip Thorne, কিপ থর্ন বিশ্বের গণ্য রিলেটিভিটি বিশেষজ্ঞ, তিনি ক্রিস্টোফার নোলানের ইন্টারস্টেলারের বিজ্ঞান উপদেষ্টা ছিলেন, আর সেখানে তিনি কৃষ্ণগহ্বরের পাশে থাকলে নভোচারীদের টাইম ডাইলেশনের প্রভাবে হওয়া বয়সের বাড়ার হারের পরিবর্তনের ব্যাপারটি দেখান, যা আইনস্টাইন বলে গিয়েছিলেন।
L- LIGO, LIGO হচ্ছে Laser Interferometer Gravitational-Wave Observatory বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করার গবেষণাগার, এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার একটা প্রস্তাব। ২০১৫ সালে তারা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করেন আর ২০১৬ সালে তারা এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

M- Mathematics, অ-ইউক্লীডিয় বক্রতার জ্যামিতি অনেক বছর ধরেই বিতর্কের বিষয় ছিল, ১৮০০ সালের আগে গণিতকে খুব কম মানুষই প্রাধান্য দিতেন। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা গণিতের বাহ্যিক প্রয়োগ এনে দেয়।
N- Navigation, বিশেষ এবং সাধারণ আপেক্ষিকতা ছাড়া উপগ্রহের জিপিএস সিস্টেমের সাথে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান অসম্ভব হতো।
O- Orbit– Mercury বা বুধের কক্ষপথের হিসাব নিউটনীয় পদার্থবিদ্যার হিসাবের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, তবে আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটি বুধের কক্ষপথের হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করতে পারে।
P- Pioneer Anomaly– যখন পাইওনিয়ার মহাকাশযান হঠাৎ করে থেমে যাওয়া শুরু করে তখন আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়, পরে দেখা গেলো পাইওনিয়ারের ভেতর থাকা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির তাপের কারণে এটির গতি কমে গিয়েছিলো।
Q- Quantum Mechanics– পদার্থবিদ্যার আরেক বড় তত্ত্ব। যদিও সাধারণ আপেক্ষিকতার সাথে কোয়ান্টাম খুব একটা খাপ খায় না, তারপরও মনে করা হয় এই দুই তত্ত্ব একীভূত করতে পারলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অনেকখানি এগিয়ে যাবে, আর এই চেষ্টা চলছে এখনো।
R- Roof, আইনস্টাইন একবার এক লোককে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে একটা ময়লার স্তুপে পড়তে দেখেন, পরে সেই লোক জানায়, সে পড়ার সময় মহাকর্ষের কোনো শক্তি অনুভব করতে পারছিলো না। এই কথোপকথন আর পরবর্তী পরীক্ষানিরীক্ষা আইনস্টাইনকে মহাকর্ষের নিউটনীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাধ্য করে।
S- Space Time, স্থান-কাল আলাদা কিছু নয়, বরং স্থান আর কালের একটি অবিচ্ছেদ্য মাত্রা। John Archiblad Wheeler সহজ করে সাধারণ আপেক্ষিকতার সারমর্ম হিসেবে বলেন “স্থান বস্তুকে বলে কোন পথে যেতে হবে” আর “কণা স্থানকে বলে কিভাবে বাঁকতে হবে”।
T- Try, আইনস্টাইনের অভ্যাস ছিল আগের করা কাজগুলোকে আবারো পরীক্ষা করে দেখা। নভেম্বর ১৯১৫তে তিনি এক সপ্তাহে ৪টি আলাদা পেপার জমা দেন, এর মধ্যে শেষ পেপারটি বুধের কক্ষপথের সঠিক হিসাব দেয়।
U- Unified Field Theory– কথাটির প্রচলন আইনস্টাইন নিজে শুরু করেন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতা আর তড়িৎচৌম্বকত্বের একীভূতকরণের ব্যর্থ প্রচেষ্টাকে বুঝাতে। বর্তমানে এই তত্ত্বের খোঁজ চলছে প্রাথমিক কণা আর মৌলিক বলের সম্পর্ককে বুঝাতে, যাকে বলা হচ্ছে- The Theory of Everything।
V- Verification– জ্যোতির্বিদ স্যার আর্থার এডিংটন ১৯১৯ সালে পশ্চিম আফ্রিকার প্রিঞ্চিপে দ্বীপে সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের পিছনে থাকা নক্ষত্রের আলোর বক্রতা সনাক্ত করেন, যা আইনস্টাইনের তত্ত্বের হিসাবের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়, আর এই পর্যবেক্ষণ আইনস্টাইনকে নক্ষত্রের কাতারে নিয়ে যায়, বোঝেনই তো, রকস্টার টাইপ!
W- Wormholes, সাধারণ আপেক্ষিকতার আরেকটি প্রতিপাদ্য, যা বলে স্থান বেঁকে গিয়ে মহাবিশ্বের অন্য কোনো স্থানে যাওয়ার সহজ পথ করে দিতে পারে, যেখানে সাধারণত যেতে কয়েকশো কোটি বছর বা মহাবিশ্বে দূরত্বের মাপকাঠি কয়েকশো “আলোকবর্ষ” লেগে যাবে। আর এ কারণে অনেকে বলেন ওয়ার্মহোল বা কীটগহ্বর আমাদের অন্য কোনো সময়েও নিয়ে যেতে পারে।
X- X ray Astronomy, আলোক সংবেদী টেলিস্কোপের চেয়ে এক্স-রে টেলিস্কোপ মহাবিশ্ব দেখার জন্য বেশি কার্যকর, কারণ নিউট্রন নক্ষত্র আর কৃষ্ণগহ্বরের মত চরম মহাকর্ষীয় শক্তিসম্পন্ন এলাকাতেও এক্স-রে পাওয়া যায়।
Y- Youth, আইনস্টাইন বলেন, তারুণ্য হচ্ছে আবিষ্কারের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময়। তিনি লিখেছিলেন- “মহান আবিষ্কার শুধু মানুষের তরুণ বয়সেই আসে। পরে সে বুড়ো হয়ে যায়, অভিজ্ঞ হয়ে যায়, জনপ্রিয় আর বোকাও হয়ে যায়।“
Z- Zee, Anthony. এন্থনী যির বই “Einstein’s Gravity in a Nutshell” এর প্রথম লাইনে তিনি লিখেন- “আপেক্ষিকতা একটা মোহনীয় ধারণা, যেখানে আপনি যে কোনো কারো মতই ভালো, আর যে কোনো কেউ আপনার মতই ভালো”।
উৎসঃ https://bigganjatra.org/einstein-alphabet/
A- Albert Einstein, ১৯১৫ সালের নভেম্বরে আইনস্টাইন তাঁর বিখ্যাত ফিল্ড ইক্যুয়েশন প্রুসিয়ান একাডেমীতে জমা দেন। যা পরে জেনারেল রিলেটিভিটি বা সাধারণ আপেক্ষিকতা বিপ্লবের জন্ম দেয়।
B- Black Holes, আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুমান করে যে ভরের কারণে মহাশূন্যের জ্যামিতির পরিবর্তন হয়। আর অনেক বেশি ভরসমৃদ্ধ বস্তু ব্ল্যাকহোলের বা কৃষ্ণগহ্বরের জন্ম দিতে পারে।
C- Clocks, ঘড়ি (বা সময়) ভিন্ন ভিন্ন মহাকর্ষীয় অবস্থার জন্য ভিন্ন ভিন্ন গতিতে চলে- এটা হচ্ছে বিশেষ আপেক্ষিকতার মূল প্রতিপাদ্য।
D- Dark Matter, অদেখা এই “বস্তু” বা কণা মহাবিশ্বে ভরপুর বলে ধারণা করা হয়, যা শুধু এর মহাকর্ষীয় প্রভাব দ্বারা এর অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
E- “E=mc2” জানা মহাবিশ্বের সবচেয়ে বৈপ্লবিক সমীকরণ। এই সমীকরণ বলে ভর আর শক্তি সমানুপাতিক, আর এই সমীকরণের উপর ভিত্তি করে সাধারণ আপেক্ষিকতা গড়ে উঠেছে।
F- Frame Dragging, মহাশূন্য (space) নমনীয় আর প্রসারণশীল আর এতে অবস্থিত কণারা শক্তি আদান-প্রদান করে। শূন্য ঘূর্ণনরত কণাদের কিছু শক্তি শোষণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবী তার কক্ষপথের শূন্যকে (space) টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
G- Gravity, গ্র্যাভিটি বা মহাকর্ষ ছিল আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার হারানো ধন। ভরের কারণে স্থান-কালের বক্রতা ব্যাখা করতে আইনস্টাইনের একযুগ লেগে যায়।
H- Hubble Space Telescope, মার্চ ২০১৫ তে হাবল অনেক দূরের সুপারনোভার একটি ছবি তোলে, ছবিতে একই সুপারনোভা চারটি জায়গায় দেখা যায় (ছবিতে), একে Einstein’s Cross বলা হয়। এটা প্রমাণ করে গ্র্যাভিটির প্রভাবে আলো কিভাবে বেঁকে যায়। প্রথমবার এটি প্রমাণিত হয় স্যার আর্থার এস এডিংটনের হাতে, ১৯১৯ সালে।

I- Imagination, আইনস্টাইন বলেন Imagination “জ্ঞানের চাইতেও বেশী প্রয়োজনীয়”। সত্যিই, Imagination ছাড়া আপেক্ষিকতার অনেক ধারণাই সম্ভব ছিল না, আর সেই ধারণাগুলো এখন বাস্তব হিসেবে প্রমাণিত।
J- Jet, পদার্থবিজ্ঞানে Jet দুই রূপে আসে, Particle Jets- অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কণার স্প্রে যা আসে উচ্চ শক্তির সংঘর্ষ থেকে, যেটা স্পেশাল রিলেটিভিটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়। আর Astrophysical Jets- যা ব্ল্যাকহোল আর accretion disks থেকে আসে, আর একে ব্যাখ্যা করে জেনারেল রিলেটিভিটি।
K- Kip Thorne, কিপ থর্ন বিশ্বের গণ্য রিলেটিভিটি বিশেষজ্ঞ, তিনি ক্রিস্টোফার নোলানের ইন্টারস্টেলারের বিজ্ঞান উপদেষ্টা ছিলেন, আর সেখানে তিনি কৃষ্ণগহ্বরের পাশে থাকলে নভোচারীদের টাইম ডাইলেশনের প্রভাবে হওয়া বয়সের বাড়ার হারের পরিবর্তনের ব্যাপারটি দেখান, যা আইনস্টাইন বলে গিয়েছিলেন।
L- LIGO, LIGO হচ্ছে Laser Interferometer Gravitational-Wave Observatory বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করার গবেষণাগার, এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার একটা প্রস্তাব। ২০১৫ সালে তারা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করেন আর ২০১৬ সালে তারা এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

M- Mathematics, অ-ইউক্লীডিয় বক্রতার জ্যামিতি অনেক বছর ধরেই বিতর্কের বিষয় ছিল, ১৮০০ সালের আগে গণিতকে খুব কম মানুষই প্রাধান্য দিতেন। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা গণিতের বাহ্যিক প্রয়োগ এনে দেয়।
N- Navigation, বিশেষ এবং সাধারণ আপেক্ষিকতা ছাড়া উপগ্রহের জিপিএস সিস্টেমের সাথে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান অসম্ভব হতো।
O- Orbit– Mercury বা বুধের কক্ষপথের হিসাব নিউটনীয় পদার্থবিদ্যার হিসাবের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, তবে আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটি বুধের কক্ষপথের হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করতে পারে।
P- Pioneer Anomaly– যখন পাইওনিয়ার মহাকাশযান হঠাৎ করে থেমে যাওয়া শুরু করে তখন আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়, পরে দেখা গেলো পাইওনিয়ারের ভেতর থাকা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির তাপের কারণে এটির গতি কমে গিয়েছিলো।
Q- Quantum Mechanics– পদার্থবিদ্যার আরেক বড় তত্ত্ব। যদিও সাধারণ আপেক্ষিকতার সাথে কোয়ান্টাম খুব একটা খাপ খায় না, তারপরও মনে করা হয় এই দুই তত্ত্ব একীভূত করতে পারলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অনেকখানি এগিয়ে যাবে, আর এই চেষ্টা চলছে এখনো।
R- Roof, আইনস্টাইন একবার এক লোককে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে একটা ময়লার স্তুপে পড়তে দেখেন, পরে সেই লোক জানায়, সে পড়ার সময় মহাকর্ষের কোনো শক্তি অনুভব করতে পারছিলো না। এই কথোপকথন আর পরবর্তী পরীক্ষানিরীক্ষা আইনস্টাইনকে মহাকর্ষের নিউটনীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাধ্য করে।
S- Space Time, স্থান-কাল আলাদা কিছু নয়, বরং স্থান আর কালের একটি অবিচ্ছেদ্য মাত্রা। John Archiblad Wheeler সহজ করে সাধারণ আপেক্ষিকতার সারমর্ম হিসেবে বলেন “স্থান বস্তুকে বলে কোন পথে যেতে হবে” আর “কণা স্থানকে বলে কিভাবে বাঁকতে হবে”।
T- Try, আইনস্টাইনের অভ্যাস ছিল আগের করা কাজগুলোকে আবারো পরীক্ষা করে দেখা। নভেম্বর ১৯১৫তে তিনি এক সপ্তাহে ৪টি আলাদা পেপার জমা দেন, এর মধ্যে শেষ পেপারটি বুধের কক্ষপথের সঠিক হিসাব দেয়।
U- Unified Field Theory– কথাটির প্রচলন আইনস্টাইন নিজে শুরু করেন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতা আর তড়িৎচৌম্বকত্বের একীভূতকরণের ব্যর্থ প্রচেষ্টাকে বুঝাতে। বর্তমানে এই তত্ত্বের খোঁজ চলছে প্রাথমিক কণা আর মৌলিক বলের সম্পর্ককে বুঝাতে, যাকে বলা হচ্ছে- The Theory of Everything।
V- Verification– জ্যোতির্বিদ স্যার আর্থার এডিংটন ১৯১৯ সালে পশ্চিম আফ্রিকার প্রিঞ্চিপে দ্বীপে সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের পিছনে থাকা নক্ষত্রের আলোর বক্রতা সনাক্ত করেন, যা আইনস্টাইনের তত্ত্বের হিসাবের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়, আর এই পর্যবেক্ষণ আইনস্টাইনকে নক্ষত্রের কাতারে নিয়ে যায়, বোঝেনই তো, রকস্টার টাইপ!
W- Wormholes, সাধারণ আপেক্ষিকতার আরেকটি প্রতিপাদ্য, যা বলে স্থান বেঁকে গিয়ে মহাবিশ্বের অন্য কোনো স্থানে যাওয়ার সহজ পথ করে দিতে পারে, যেখানে সাধারণত যেতে কয়েকশো কোটি বছর বা মহাবিশ্বে দূরত্বের মাপকাঠি কয়েকশো “আলোকবর্ষ” লেগে যাবে। আর এ কারণে অনেকে বলেন ওয়ার্মহোল বা কীটগহ্বর আমাদের অন্য কোনো সময়েও নিয়ে যেতে পারে।
X- X ray Astronomy, আলোক সংবেদী টেলিস্কোপের চেয়ে এক্স-রে টেলিস্কোপ মহাবিশ্ব দেখার জন্য বেশি কার্যকর, কারণ নিউট্রন নক্ষত্র আর কৃষ্ণগহ্বরের মত চরম মহাকর্ষীয় শক্তিসম্পন্ন এলাকাতেও এক্স-রে পাওয়া যায়।
Y- Youth, আইনস্টাইন বলেন, তারুণ্য হচ্ছে আবিষ্কারের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময়। তিনি লিখেছিলেন- “মহান আবিষ্কার শুধু মানুষের তরুণ বয়সেই আসে। পরে সে বুড়ো হয়ে যায়, অভিজ্ঞ হয়ে যায়, জনপ্রিয় আর বোকাও হয়ে যায়।“
Z- Zee, Anthony. এন্থনী যির বই “Einstein’s Gravity in a Nutshell” এর প্রথম লাইনে তিনি লিখেন- “আপেক্ষিকতা একটা মোহনীয় ধারণা, যেখানে আপনি যে কোনো কারো মতই ভালো, আর যে কোনো কেউ আপনার মতই ভালো”।
উৎসঃ https://bigganjatra.org/einstein-alphabet/
Friday, June 9, 2017
এবার মোবাইল অ্যাপ সনাক্ত করবে নগ্নতা
June 09, 2017 roddur
আপনার সন্তানের স্মার্ট ফোন ব্যবহার নিয়ে কি আপনি খুব বেশি চিন্তিত? বিশেষ করে এই ফোনের সাহায্যে তার নগ্ন ছবি চালাচালির ব্যাপারে।
এ ব্যাপারে অভিভাবকদের আশ্বস্ত করতে এগিয়ে এসেছে একটি কোম্পানি যারা এমন একটি অ্যাপ তৈরি করেছে যার সাহায্যে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার সন্তান কখন অন্য কারো কাছ থেকে ফোনে নগ্ন ছবি রিসিভ করছে, আবার কখন সে এধরনের ছবি অন্য কাউকে পাঠাচ্ছে।
এই অ্যাপটির নাম গ্যালারি গার্ডিয়ান। এতে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা কোনো ছবিতে নগ্নতাকে চিহ্নিত করতে পারে।

কোনো শিশু যখন তার মোবাইল ফোনে নগ্ন ছবি সেইভ করবে তখনই সাথে সাথে অভিভাবকের ফোনে বসানো অ্যাপের সাহায্যে তাকে এবিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হবে।
ইপো টেকনোলজিস নামের একটি কোম্পানি এই অ্যাপটি উদ্ভাবন করেছে। কিভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি- ব্যাখ্যা করছিলেন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল স্কুরনস্কি। তিনি বলেন, এটা খুব সহজ।
"যেসব ছবি কেউ রিসিভ করবে বা পাঠাবে এই অ্যাপ প্রথমে যাচাই করে দেখবে সেসব ছবিতে কোনো মানুষ আছে কীনা। এটা করার পর অ্যাপটি দেখবে যে ওই ছবিটিতে কি ধরনের ত্বক দেখা যায়, কতোটুকু দেখা যায়। ছবিটিতে যতো বেশি ত্বক দেখা যাবে অ্যাপের এলগরিদম ঠিক ততোটাই বেশি কাজ করবে। এই এলগরিদমের সাহায্যেই নির্ধারণ করা হবে সন্দেহজনক ছবিটির বিষয়বস্তু।"
বিভিন্ন রকমের ছবি রিসিভ করে এবং পাঠিয়ে এই অ্যাপটি পরীক্ষা করে দেখেছে বিবিসি।
এসময় দেখা গেছে এই অ্যাপটি একটি ছবিকে ধরতে পারেনি। ছবিটি হচ্ছে, পুরো পোশাক পরিহিত একটি মিরর সেলফি- অর্থাৎ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তোলা নিজেরই একটি ছবি। কিন্তু সেখানে শরীরের বিশেষ একটি অংশ উন্মুক্ত ছিলো।
তার মানে কি যে এই অ্যাপের মধ্যে এখনও এমন কিছু ফাঁক রয়ে গেছে যা দিয়ে নগ্ন ছবি বেরিয়ে পড়তে পারে?
ড্যানিয়েল স্কুরনস্কি বলেন, "এর কারণ হচ্ছে, এই অ্যাপ প্রথমে শরীরের ত্বকের ওপর দৃষ্টি দেয়। অর্থাৎ কতোটুকু শরীর দেখা যাচ্ছে তার ওপর। এই অ্যাপটি যাতে যৌনাঙ্গকেও শনাক্ত করতে পারে আমরা এখন সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।"
"এই কাজের জন্যে যন্ত্রটিকে তৈরি করা কখনও কখনও খুব কঠিন একটি কাজ। এই কাজটি করতে স্মার্ট ফোনের এলগরিদম তৈরি করাই হচ্ছে এখনকার চ্যালেঞ্জ," বলেন তিনি।

এ ব্যাপারে অভিভাবকদের আশ্বস্ত করতে এগিয়ে এসেছে একটি কোম্পানি যারা এমন একটি অ্যাপ তৈরি করেছে যার সাহায্যে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার সন্তান কখন অন্য কারো কাছ থেকে ফোনে নগ্ন ছবি রিসিভ করছে, আবার কখন সে এধরনের ছবি অন্য কাউকে পাঠাচ্ছে।
এই অ্যাপটির নাম গ্যালারি গার্ডিয়ান। এতে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা কোনো ছবিতে নগ্নতাকে চিহ্নিত করতে পারে।

কোনো শিশু যখন তার মোবাইল ফোনে নগ্ন ছবি সেইভ করবে তখনই সাথে সাথে অভিভাবকের ফোনে বসানো অ্যাপের সাহায্যে তাকে এবিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হবে।
ইপো টেকনোলজিস নামের একটি কোম্পানি এই অ্যাপটি উদ্ভাবন করেছে। কিভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি- ব্যাখ্যা করছিলেন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল স্কুরনস্কি। তিনি বলেন, এটা খুব সহজ।
"যেসব ছবি কেউ রিসিভ করবে বা পাঠাবে এই অ্যাপ প্রথমে যাচাই করে দেখবে সেসব ছবিতে কোনো মানুষ আছে কীনা। এটা করার পর অ্যাপটি দেখবে যে ওই ছবিটিতে কি ধরনের ত্বক দেখা যায়, কতোটুকু দেখা যায়। ছবিটিতে যতো বেশি ত্বক দেখা যাবে অ্যাপের এলগরিদম ঠিক ততোটাই বেশি কাজ করবে। এই এলগরিদমের সাহায্যেই নির্ধারণ করা হবে সন্দেহজনক ছবিটির বিষয়বস্তু।"
বিভিন্ন রকমের ছবি রিসিভ করে এবং পাঠিয়ে এই অ্যাপটি পরীক্ষা করে দেখেছে বিবিসি।
এসময় দেখা গেছে এই অ্যাপটি একটি ছবিকে ধরতে পারেনি। ছবিটি হচ্ছে, পুরো পোশাক পরিহিত একটি মিরর সেলফি- অর্থাৎ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তোলা নিজেরই একটি ছবি। কিন্তু সেখানে শরীরের বিশেষ একটি অংশ উন্মুক্ত ছিলো।
তার মানে কি যে এই অ্যাপের মধ্যে এখনও এমন কিছু ফাঁক রয়ে গেছে যা দিয়ে নগ্ন ছবি বেরিয়ে পড়তে পারে?
ড্যানিয়েল স্কুরনস্কি বলেন, "এর কারণ হচ্ছে, এই অ্যাপ প্রথমে শরীরের ত্বকের ওপর দৃষ্টি দেয়। অর্থাৎ কতোটুকু শরীর দেখা যাচ্ছে তার ওপর। এই অ্যাপটি যাতে যৌনাঙ্গকেও শনাক্ত করতে পারে আমরা এখন সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।"
"এই কাজের জন্যে যন্ত্রটিকে তৈরি করা কখনও কখনও খুব কঠিন একটি কাজ। এই কাজটি করতে স্মার্ট ফোনের এলগরিদম তৈরি করাই হচ্ছে এখনকার চ্যালেঞ্জ," বলেন তিনি।

তিনি জানান, "এটা কঠিন কারণ যৌনাঙ্গের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে প্রতিদিনই এই এলগরিদমের উন্নতি হচ্ছে। প্রতিনিয়তই এটি নতুন নতুন জিনিস শিখছে। এবং এখনও এই অ্যাপটা যা করতে পারছে সেটিও দারুণ ঘটনা।"
শুধু যে নগ্ন ছবিকে ঠিক মতো ধরতে পারেনি সেটাই নয়, এই অ্যাপটি ভুল করে অন্য একটি ছবিকে নগ্ন ছবি বলে চিহ্নিত করেছে। ওই ছবিটিতে এক দল শিশু সমুদ্র সৈকতে খালি গায়ে খেলা করছিলো।
এই ধরনের ঘটনা কি অভিভাবকদের বিরক্ত করতে পারে?
"একজন অভিভাবক হিসেবে আমি কিন্তু এধরনের সতর্কবার্তা পেলে খুশিই হবো। কারণ এর সাহায্যে আমি জানতে পারবো যে আমার সন্তান আসলে কি ধরনের ছবি চালাচালি করছে।"
বিবিসি কুড়িটি নগ্ন ছবি পাঠিয়ে এই অ্যাপটি পরীক্ষা করে দেখেছে। তার মধ্যে ১২টি ছবি সাথে সাথেই ধরা পড়েছে। কিন্তু বাকি আটটি ছবি বেরিয়ে পড়েছে প্রযুক্তির ফাঁক গলে।
কোম্পানিটি দাবি করছে, নগ্ন ছবি শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এই অ্যাপের সাফল্যের হার ৯৬ শতাংশ।
উৎস ঃ এখানে ক্লিক করুন ..
Thursday, June 8, 2017
বিশ্বের ভবিষ্যৎ জ্বালানী হতে পারে সমুদ্রের দাহ্য বরফ
June 08, 2017 roddur
সাগরের তলদেশ থেকে চীন এমন কিছু বস্তু বা পদার্থ তুলে এনেছে যা দেখতে বরফের মতো। এবং তা থেকে বের করে আনা হয়েছে গ্যাস।
বলা হচ্ছে, এই পদার্থই হতে পারে সারা বিশ্বের ভবিষ্যৎ জ্বালানী।
দক্ষিণ চীন সাগরের তলদেশ থেকে বরফ-সদৃশ এই পদার্থটি তুলে এনে, দেশটি এই প্রথমবারের মতো এখান থেকে গ্যাস বের করে এনেছে।
চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের এই সাফল্যকে উল্লেখ করেছে বড়ো ধরনের আবিষ্কার হিসেবে।
এই পদার্থটিকে বলা হয় দাহ্য বরফ। এটি এর জনপ্রিয় নাম। অর্থাৎ বরফ কিন্তু এটি থেকে আগুন জ্বলতে পারে। আরো সহজ কর বলতে গেলে এটি হচ্ছে- বরফের আগুন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের এই ভাণ্ডার, ছড়িয়ে আছে সাগরের তলদেশে। যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের মতো বহু দেশ চেষ্টা করছে প্রাকৃতিক গ্যাসের এই মজুদ থেকে গ্যাস তুলে আনতে। কিন্তু এই কাজটা অত্যন্ত কঠিন।

দাহ্য বরফ - এই নাম থেকেই বোঝা যায় এটি হচ্ছে পানি এবং গ্যাসের মিশ্রণের বরফ।
সিঙ্গাপুরে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অফ কেমিক্যাল এন্ড বায়োমলিউক্যুলার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক প্রভীন লিঙ্গা বলেছেন, এটা দেখতে বরফের ক্রিস্টালের মতো।
"তবে যদি এটিকে খুব কাছে থেকে অণুর পর্যায়ে জুম করে দেখা হয় তাহলে দেখা যাবে সেখানে মিথেনের অণু আটকা পড়ে আছে পানির অণুর ভেতরে।"
অত্যন্ত কম তাপমাত্রা আর উচ্চ চাপে এসব গঠিত হয়।
উৎস ঃ এখানে ক্লিক করুন ..
Wednesday, June 7, 2017
রিভ অ্যান্টিভাইরাস সাইবার কণিকা
June 07, 2017 roddur

বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট বা কম্পিউটার ব্যবহার থেকে বাচ্চাদের বিরত রাখা যেমন কঠিন, তেমনি বোকামিও। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেকে অবশ্য তার বদলে ব্যবহারের স্বাধীনতা দিয়ে সেটা নজরদারির মধ্যে রাখার কথা ভাবেন। সচেতন এবং আধুনিক অভিভাবকদের এই ভাবনা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার; কিন্তু দিনে কতবার ছেলে বা মেয়ের ঘরে উঁকি মেরে দেখবেন? আর সে ক্ষেত্রে যাঁরা চাকরি বা ব্যবসা করছেন, তাঁদেরই বা উপায় কী?
শুধু তাই নয়, বাচ্চারাও এখন আর পিছিয়ে নেই। বাচ্চারা ধরেই নেয় যে অনলাইনে তারা যা দেখে বা করে, তা তাদের অভিভাবকরা ভালোভাবে নেবেন না। তাই তারাও ব্যবহারশেষে অনলাইন হিস্টরি মুছে ফেলে হরহামেশাই। এ ছাড়া হুট করে বাসায় ইন্টারনেট বা কম্পিউটার ব্যবহার বন্ধ দিলে হয়তো সন্তান আপনাকে না জানিয়েই বন্ধু-বান্ধব কিংবা সাইবার ক্যাফেমুখী হতে পারে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ৭০ শতাংশ বাবা-মা জানেন না, সন্তান তাঁদের অগোচরে অনলাইনে উত্তেজক ও বেআইনি বিষয়বস্তু খুঁজে ফেরে। এখানেই শেষ নয়, ভয়ংকর হলেও সত্যি যে এসবের ধারাবাহিকতায় বাচ্চাদের অনেকেই জড়িয়ে যায় সাইবার বুলিংসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ ও সম্পর্কে।
একটি বা দুটি নয়, প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এমন ঘটনা ঘটছে বলে সব অভিভাবকেরই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলসহ ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার হতে পারে আদর্শ সমাধান। সন্তানের অনলাইন গতিবিধি নজরে রাখার পাশাপাশি এতে সাইবার বুলিংসহ যেকোনো অনলাইন প্রতারণা প্রতিহত করতে পারবেন।
বাজারে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলসহ বেশ কিছু অ্যান্টিভাইরাস পাওয়া গেলেও বাংলাদেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেমস উদ্ভাবিত ‘রিভ অ্যান্টিভাইরাস’ সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন। এতে ব্রাউজার থেকে যেকোনো সাইট ব্লকিং ছাড়াও রয়েছে ক্যাটাগরিভিত্তিক ব্লকিং; যেখানে অ্যাডাল্ট, গ্যাম্বলিং ইত্যাদিসহ রয়েছে অর্ধশতাধিক ক্যাটাগরি।
ক্যাটাগরিভিত্তিক ব্লকিংয়ের সুবিধা এই যে আপনি একটি ক্যাটাগরি ব্লক করে দিলে এ-সংক্রান্ত কোনো সাইটেই আর প্রবেশ করা যাবে না। আপনি চাইলে টাইম বেজড ব্লকিংয়ে নির্ধারিত সময় বা সপ্তাহের কোনো দিন, ঘণ্টা বা মিনিট ধরেও ব্লক করতে পারেন।
তবে রিভ অ্যান্টিভাইরাসের অ্যাডভান্সড প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের সবচেয়ে বড় সুবিধা এই যে আপনি চাইলে ব্লক না করে সার্ভেইলেন্স মোডে নজর রাখতে পারেন সন্তানের অনলাইন কর্মকাণ্ডে। সার্ভেইলেন্স মোড চালু করে ক্যাটাগরি নির্বাচন করে দিলে ওই পিসি থেকে কোনো সাইটে প্রবেশ করামাত্র আপনি মোবাইলে একটি নোটিফিকেশন পাবেন। এটি সম্পূর্ণভাবে আপনার সন্তানের অজ্ঞাতেই পাঠানো হয়, ফলে এতে তার আর কৌশলী বা অভিমানী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ইন্টারনেট সার্ভেইলেন্সের সবচেয়ে বড় সুবিধা এই যে, এতে আপনি পরে সুবিধাজনক সময়ে সন্তানকে বেআইনি সাইট ব্রাউজ করার কুফল ও তা থেকে দুরে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন। এ ছাড়া সাইবার বুলিং সেফটিসহ অনলাইনে নিরাপদ থাকতে সন্তানকে এসবের কুফল বুঝিয়ে বলুন। কম্পিউটার কেন আর অনলাইনেই বা তার করণীয় কী, তা তাকে জানিয়ে দিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কী, কেন ও কাদের সঙ্গে কীভাবে কথা বা যোগাযোগের জন্য তা-ও তাকে বুঝিয়ে বলুন। সর্বোপরি, বকাঝকা করে নয়, সন্তানকে দিকনির্দেশনা দিতে হবে বন্ধুর মতো।
উৎস ঃ এখানে ক্লিক করুন ..
টমাস আলভা এডিসন
June 07, 2017 roddur
টমাস আলভা অ্যাডিসনের গ্রামোফোন আবিষ্কার উপলক্ষে এক সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এক তরুণী তাঁর বক্তৃতায় অ্যাডিসনকে অযথাই আক্রমন করে বসল, ‘কী এক ঘোড়ার ডিমের যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, সারাক্ষণ কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করতেই থাকে। আর তাই নিয়ে এত মাতামাতি! ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না…।’
তরুণী বলেই যাচ্ছে। থামার কোনো লক্ষণ নেই।
অ্যাডিসন চুপ করে শুনে গেলেন। বক্তৃতা দিতে উঠে তিনি বললেন, ‘ম্যাডাম, আপনি ভুল করছেন। আসলে সারাক্ষণ কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করার যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন ঈশ্বর। আমি যেটা আবিষ্কার করেছি সেটি ইচ্ছেমতো থামানো যায়।’
Tuesday, June 6, 2017
নতুন রুপে নোকিয়া ৩৩১০ এখন ভারতের বাজারে
June 06, 2017 roddur
কয়েক মাস অপেক্ষার পর ভারতের বাজারে এলো নতুন রূপে পুরোনো মডেল নোকিয়া ৩৩১০। মডেলের সঙ্গে মিল রেখে ফোনটির দামও নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ৩১০ রুপি। ভারতের বাজারে বিক্রি শুরু হবে ১৮ মে, বৃহস্পতিবার।
মডেলটির চারটি রঙের মুঠোফোন কিনতে পারবেন গ্রাহকরা। এই রংগুলোর মধ্যে রয়েছে লাল, হলুদ, গাঢ় নীল ও ধূসর।
যাঁরা কথা বলতে সাধারণ একটি মুঠোফোন ব্যবহার করতে চান অথবা মূল মুঠোফোনের সঙ্গে আরেকটি বিকল্প রাখতে চান, তাঁদের কথা বিবেচনা করে নতুন সেটটি বাজারে এনেছে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এইচএমডি গ্লোবাল। এই মডেলটির সঙ্গে অনেকের আবেগ জড়িয়ে আছে। সেই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে পুরোনোটির মতোই এটিতে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাটারি, সাপ খেলার অপশন রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মুঠোফোনটি থেকে টু জি গতিতে ইন্টারনেটে কাজ করা যাবে।
আগেরটির মতো নতুন সেটেও থাকছে হাইলাইট, মাইক্রো-ইউএসবি পোর্ট। তবে আগেরটির মতো এটিতে থাকছে না চিকন পিনের চার্জার। এ ছাড়া নোকিয়ার স্ল্যাম প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংযুক্ত করা হয়েছে ব্লুটুথ ৩.০। এটির স্টোরেজ থাকবে ১৬ মেগাবাইট। তবে এটিকে মাইক্রো এসডি কার্ড দিয়ে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
এই মুঠোফোনটির সামনে কোনো ক্যামেরা থাকবে না। তবে পেছনে দুই মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সংযুক্ত করা হয়েছে, যাতে এলইডি ফ্ল্যাশ থাকবে। এ ছাড়া থাকছে এফএম রেডিও শোনার সুযোগ।
নতুন এই ভার্সনের ব্যাটারিটি এক হাজার ২০০ মেগাহার্টজের, যা দিয়ে টানা ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত কথা বলা যাবে।
উৎস ঃ এখানে ক্লিক করুন ..
মডেলটির চারটি রঙের মুঠোফোন কিনতে পারবেন গ্রাহকরা। এই রংগুলোর মধ্যে রয়েছে লাল, হলুদ, গাঢ় নীল ও ধূসর।
যাঁরা কথা বলতে সাধারণ একটি মুঠোফোন ব্যবহার করতে চান অথবা মূল মুঠোফোনের সঙ্গে আরেকটি বিকল্প রাখতে চান, তাঁদের কথা বিবেচনা করে নতুন সেটটি বাজারে এনেছে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এইচএমডি গ্লোবাল। এই মডেলটির সঙ্গে অনেকের আবেগ জড়িয়ে আছে। সেই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে পুরোনোটির মতোই এটিতে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাটারি, সাপ খেলার অপশন রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মুঠোফোনটি থেকে টু জি গতিতে ইন্টারনেটে কাজ করা যাবে।
আগেরটির মতো নতুন সেটেও থাকছে হাইলাইট, মাইক্রো-ইউএসবি পোর্ট। তবে আগেরটির মতো এটিতে থাকছে না চিকন পিনের চার্জার। এ ছাড়া নোকিয়ার স্ল্যাম প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংযুক্ত করা হয়েছে ব্লুটুথ ৩.০। এটির স্টোরেজ থাকবে ১৬ মেগাবাইট। তবে এটিকে মাইক্রো এসডি কার্ড দিয়ে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
এই মুঠোফোনটির সামনে কোনো ক্যামেরা থাকবে না। তবে পেছনে দুই মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সংযুক্ত করা হয়েছে, যাতে এলইডি ফ্ল্যাশ থাকবে। এ ছাড়া থাকছে এফএম রেডিও শোনার সুযোগ।
নতুন এই ভার্সনের ব্যাটারিটি এক হাজার ২০০ মেগাহার্টজের, যা দিয়ে টানা ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত কথা বলা যাবে।
উৎস ঃ এখানে ক্লিক করুন ..
Thursday, June 1, 2017
আত্নপ্রকাশ
June 01, 2017 roddur
সম্রাট কুবলাই খানের আমলে খবর সরবরাহের একটা ভারী মজার পদ্ধতি ছিল - গোটা সম্রাজ্য জুড়েই কুড়ি মাইল অন্তর একজন করে বার্তাবাহক তৈরি থাকত একটি করে ঘোড়া নিয়ে । দেশের যে কোন কোণ থেকে আসা জরুরী বার্তা অবিলম্বে রাজধানীতে পৌছে দিত এরাই । দ্রুতগামী অশ্বটি নিয়ে কুড়ি মাইল দূরের বার্তাবাহকের কাছে বার্তা পৌছে দিয়ে আগের জন ফিরে আসত নিজের জায়গায় । আর এভাবেই সবচেয়ে দ্রুত আর নিশ্চিতভাবে খবর পৌছাত সম্রাটের কাছে । এ তো ইতিহাস । আবার কল্পকাহিনীতেও , মনে পড়ছে , অরণ্যদেবের এলাকায় আদিম উপজাতি ব্যান্ডররা জরুরী খবর পাঠাত ঢাকের বিশেষ ধ্বনিতরংগের মাধ্যমে । ঢাকের বোলের সেই ভাষা অনিবার্যভাবেই মনে করিয়ে দেয় টেলিগ্রাফের টরেটক্কা সংকেতের কথা । মুঘল আমলে আবার কবুতর অর্থাৎ কিনা পায়রা ব্যাবহারের রীতি ছিল যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে । শিক্ষিত পায়রার পায়ে বেঁধে 'খত' বা বার্তাবাহী চিঠিটি পাঠানো হতো জায়গামতো । পায়ে বাঁধা ঘন্টায় ঝুম ঝুম শব্দ তুলে রাতবিরেতে ছুটে চলা রানার বা ডাকহরকরারা তো ছিল গত শতকে ও । আর আজ ..? অনেকটা যেন রাতারাতিই বদলে গেছে দুনিয়াটা , অগ্রগতির পালে এখন ঝড়ো হাওয়া । টেলিগ্রাফ, টেলিফোন থেকে মোবাইল ফোন , ফ্যাক্স হয়ে যোগাযোগ ব্যাবস্থা পৌছে গেছে ইন্টারনেটে । সুদূরকে ঘরের চারদেয়ালের মধ্যে পলকে টেনে আনার জাদুমন্ত্র এখন মানুষের হাতের মুঠোয় । আর প্রগতির সেইসব অষ্টপ্রহরের গল্প নিয়েই একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস "আমার প্রিয় দেশ" অনলাইন ম্যাগাজিন ।
আলোর দিশা
June 01, 2017 roddur
১৯৭৪ সালের কথা ।
.
ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক । কুখ্যাত বস্তিতে বাস করে ১৩ বছরের কিশোর মাইকেল । বর্ণবৈষম্য থেকে আমেরিকা পুরোপুরি বের হতে পারেনি তখনো , চাকুরী পাওয়া দুষ্কর কালোদের জন্য । তারউপরে চার ভাইবোন, সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় মাইকেলের বাবাকে ।
.
মাইকেল নিজেও তার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত, পড়াশোনা ভালো লাগে না একদম। সময় পেলেই তাই মাইকেল টিলার উপরে গিলে আনমনে সূর্যাস্ত দেখে, সূর্য ডোবার সময় কেমন যেন নীরব হয়ে যায় শহরটা, ভালো লাগে তার ।
.
একদিন মাইকেলের বাবা তাকে একটা পুরনো টিশার্ট দিলেন । বললেন, ‘ সর্বোচ্চ কতো দাম হতে পারে এটার ?’
.
মাইকেল অনেক ভেবেচিন্তে উত্তর দিলো – ‘ সর্বোচ্চ এক ডলার’
.
মাইকেলের বাবা তার কনিষ্ঠ পুত্রকে তখন একটা কাজ দিলেন – ‘ চেষ্টা করো, কিভাবে এই টিশার্টটি দুই ডলারে বিক্রি করা যায়। আমার আর তোমার মা’র পক্ষে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে খুব। অনেক সাহায্য হবে এই দুই ডলার পেলে।‘
.
মাইকেল বসে বসে ভাবতে লাগলো । তারপর মাইকেল পুরনো টিশার্টটিকে ধুয়ে পরিষ্কার করলো, রোদে শুকালো । বাসায় ইস্ত্রি নেই, পুরনো কাপড়ের স্তুপে চাপা দিয়ে সমান করলো টিশার্টটা । তারপর, ছয়ঘন্টা ধরে চেষ্টার পর, মাইকেল টিশার্টটা বিক্রি করতে পারলো পাতাল রেলের এক যাত্রীর কাছে , দুই ডলারে।
.
‘রেখে দাও‘ – সহাস্যে বললেন মাইকেলের বাবা । ‘ওটা তোমার উপার্জন ।‘
.
পরদিন সকালে মাইকেলের বাবা তাকে আর একটি পুরনো টিশার্ট এনে দিলেন । বললেন, ‘ এটা বিশ ডলারে বিক্রি করতে পারবে ? ‘
.
মাইকেল হেসে ফেললো এবার – ‘ অসম্ভব, কে কিনবে বিশ ডলারে এই শার্ট ?’
.
বাবা বললেন , ‘ সম্ভব, চেষ্টা করে দেখো তুমি ।‘
.
মাইকেল চিন্তায় বসলো কিভাবে এই ময়লা শার্টকে বিশ ডলারে বিক্রি করা যায় । আগেরবারের মতই সে শার্ট পরিষ্কার করলো, ইস্ত্রি করলো । তারপর তার মাথায় চমৎকার একটা বুদ্ধি আসলো ।
.
মাইকেলের এক বন্ধু চমৎকার ছবি আঁকতো । মাইকেল আগের দুই ডলার দিয়ে রং আর তুলি কিনে, সেটা দিয়ে টিশার্টে বন্ধুকে দিয়ে মিকি মাউস একেঁ ফেললো । তারপর টিশার্ট নিয়ে ব্রুকলিনের ধনী শিশুদের এক কিন্ডারগার্টেনে বিক্রির চেষ্টা ।
.
প্রায় সারাদিন চেষ্টার পর, এক অবস্থাসম্পন্ন শিশুর খুব পছন্দ হয়ে গেল টিশার্টটা । সে তার বাবার কাছে জিদ ধরলো সেটা কেনার জন্য । ভদ্রলোক বিশ ডলার দিয়ে শুধু কিনলেনই না, মাইকেলকে পাঁচ ডলার বখশিশও দিলেন।
.
‘২৫ ডলার !!’ – মাইকেলের পরিবারের পুরো সপ্তাহের উপার্জন !!
.
তারপরদিন সকালে মাইকেলের বাবা মাইকেলকে আর একটা পুরনো টিশার্ট এনে দিলেন । বললেন, ‘ এবার চেষ্টা করো, ২০০ ডলারে এই টিশার্ট বিক্রি করার ।‘
.
মাইকেল কিন্তু এবার হাসলোনা । বরং টিশার্ট নিয়ে চিন্তা করতে বসলো কিভাবে এটাকে ২০০ ডলারে বিক্রি করা যায় ।
.
আমেরিকায় তখন ‘চার্লিস এন্জেলস্’ মুভি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে । মুভির বিখ্যাত অভিনেত্রি ফারাহ্ ফওলার সিনেমার প্রোমোশনের কাজে আসলেন নিউইয়র্কে । প্রেস কনফারেন্স শেষে জনস্রোত সামলে অভিনেত্রি যখন গ্রীণরুমে পৌছালেন, দেখলেন, সেখানে ১৩ বছর বয়সের একটি ফুটফুটে কালো কিশোর একটি টিশার্ট নিয়ে দাড়িয়ে ।
.
‘ম্যা’ম, আমি আপনার একজন অন্ধভক্ত । আপনি কি আমাকে দয়াকরে একটি অটোগ্রাফ দেবেন, আমার এই টিশার্টে ?’
.
হেসে ফেললেন অভিনেত্রী, এমন সুন্দর শিশুকে না করার প্রশ্নই ওঠে না ।
.
এর একসপ্তাহ পরে, ব্রুকলিনের নিলামঘরে দেখা গেল এক কালো কিশোরকে । সে মিস ফারাহ্ ফাওলারের নিজের হাতে অটোগ্রাফ দেয়া একটা টিশার্ট নিলাম করতে এসেছে ।
.
নিলামশেষে টিশার্টটি ১২৫০ ডলার দিয়ে কিনে নিলেন এক ব্যবসায়ী ।
.
সেদিন রাতে বাবার পাশে ঘুমাবার সময় মাইকেলের বাবা বললেন, ‘ মাইকেল, এই টিশার্ট বিক্রি থেকে তুমি কি শিখলে ?’
.
মাইকেল গম্ভীর হয়ে উত্তর দেয়, "Where there's a will, there's a way."
.
মাথা নাড়লেন মাইকেলের বাবা । ‘দেখ, ছেলে, তুমি যা বলেছ, তা সত্যি । কিন্তু আমি তোমাকে শুধু এটাই শেখাতে চেয়েছিলাম যে, সামান্য পুরনো টিশার্টও অনেক টাকায় বিক্রি হতে পারে, যদি তুমি চাও । ঈশ্বর আমাদের জন্ম দিয়েছেন এই বস্তিতে, এই অভাবের সংসারে, তার মানে এই নয়, এখানে আমাদের সারা জীবন কাটাতে হবে । নিজের চেষ্টায়, পরিশ্রমে একদিন আমরাও পারি সফল হতে । হতাশ হলে চলবেনা তোমার, মাইকেল ; বরং জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে শেখো।‘
.
এই ঘটনার বিশবছর পরে ফোর্বস ম্যাগাজিন, বিশ্বের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী খেলোয়াড়টির একটি সাক্ষাৎকার নেয় । ভদ্রলোক বাস্কেটবলের জীবন্ত কিংবদন্তী, যার বাৎসরিক আয় ৪০ মিলিয়নের বেশি, নাইকিসহ হাজার হাজার ব্রান্ডে যার নাম। তিনি বিশ্বের প্রথম বিলিওনিয়ার খেলোয়াড় , বিশ্বের তৃতীয় সবোর্চ্চ আফ্রিকান–আমেরিকান ধনকুবের । সাক্ষাৎকারে তাকে তার সাফল্যের রহস্য জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি আবারও বলেন, "Where there's a will, there's a way."

উৎস ঃ এখানে ক্লিক করুন ..
আসুন ঘোড়ার ঘাস কাটি (আনিসুল হক)
June 01, 2017 roddur
আসুন, ঘোড়ার ঘাস কাটি। একটা ঘাস কাটলে পাব ১০০ টাকা। কাটবেন?
ভাবছেন, রসিকতা করছি!
ঘোড়ার ঘাস কাটা নিয়ে আমরা অনেক রসিকতা করেছি। কিন্তু ঘোড়ার ঘাস কাটা মোটেও রসিকতার বিষয় নয়। বিশেষ করে সেই ঘাস যদি জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার হয়ে থাকে। ধরা যাক, ১০টা লোক রোজ সংসদ ভবন এলাকার ঘাস কাটে। রোজ তারা দুশ টাকা করে পায়। রোজ ব্যয় দু হাজার টাকা। ৩৬৫ দিনে তারা ব্যয় করবে ৭ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। আবার ওই ঘাস বিক্রি করে কিছু আয়ও হবে। এবং আমার ধারণা, সেটা ব্যয়ের চেয়ে বেশিই হবে। তা না হলে যারা ঘাস কেটে বিক্রি করেন, তারা সেটা করতে পারতেন না।
তার মানেটা হলো, ৭ লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয় করলেও সেখান থেকে ৮ লাখ টাকা আয়ও করা সম্ভব। নিট প্রফিট দাঁড়াবে ৭০ হাজার টাকা। এখন যদি গত সংসদ ভবন এলাকায় ৯৬ লাখ টাকার শুধু ঘাসই কাটা হয়ে থাকে এক বছরে, তখন ঘাস কাটা ব্যাপারটা আর ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের বিষয় থাকে না। ব্যাপারটা হয়ে যায় রীতিমতো প্রতিযোগিতার ব্যাপার।
ঘটক গেছে পাত্রীপক্ষের সঙ্গে বিয়ের আলাপ পাড়তে।
‘ছেলে করে কী?’
‘ঘাস কাটে।’
‘ঘাস কাটে! তাই নাকি? আরে কে আছিস, চেয়ার দে! আরে হারামজাদা মুছে দে, সাহেবকে বসতে দে। বসুন। বসুন। তা বলুন কী খাবেন?’
‘না না খাব আর কী। খাওয়া-দাওয়াটা তো আসল কথা না। আসল কথা হলো আন্তরিকতা। আত্মার সঙ্গে আত্মা মিললে না আত্মীয়তা।’
‘তা ছেলে কোথাকার ঘাস কাটে?’
‘কোথায় আবার। সংসদ ভবনের।’
‘বলেন কী। সংসদ ভবনের। এই কী চেয়ার দিলি, একটা গদিওয়ালা চেয়ার দে। আপনি ভাই আমার এই চেয়ারে বসেন। তা ছেলের মাসিক আয় কত?’
‘বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে সবচেয়ে বেশি বেতন কত? এইবার প্রস্তাব করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা। এটা পাবেন কে? ধরা যাক মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তাহলে তার বার্ষিক আয় কতো। ১০ লাখ টাকার মতো। কিন্তু আমাদের পাত্র হাবু তো আর প্রেসিডেন্ট নয়। সে ঘাস কাটে। তার নিট আয় ৯৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ থেকে একে ওকে দিয়ে থুয়ে যা থাকে, তাও ওই আপনের ১০ লাখের চেয়ে ঢের বেশি। তাহলে এখন বলেন সর্বোচ্চ বেতনের সরকারি চাকরিওয়ালা পাত্র ভালো নাকি ওই সংসদ ভবনের ঘাস কাটা ছেলে ভালো?’
‘না, ছেলে আপনাদেরটাই ভালো। সে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু আপনার কাছে আর কোনো পাত্রের সন্ধান নাই? একটু তুলনা করে দেখতাম।’
‘আছে। আমি কি আর সেই রকম ঘটক যে আমার কাছে মাত্র একটা পাত্রের খবর থাকবে। আরও আছে। সংসদ ভবনের ওষুধ সাপ্লায়ার। যখন দেশে কোনো সংসদ ছিল না, ওই দুই বছরেও সে লক্ষ লক্ষ টাকার ওষুধ সাপ্লাই করেছে। ভাবুন তাহলে সে কী রকম গুণধর।’
‘তাই তো। তাই তো। ওই ছেলে তো দেখছি আরও গুণধর।’
‘হ্যাঁ এমনি সব গুণধর ছেলে নিয়েই আমার কারবার। রাজি হয়ে যান। এই রকম সুপাত্র আর পাবেন না।’
এই কথোপকথন আরও বাড়ানো যায়। দরকার কী। দরকার নেই, কারণ এই ধরনের সুপাত্রের খবর আমাদের জানা নেই। তবে যা জানা যাচ্ছে, তা হলো জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে ঘাস কাটা ও ঘাস লাগানোর কাজ হয়েছে চার পর্বে, প্রত্যেক পর্বে ব্যয় হয়েছে ২৪ লাখ টাকা, মোট ব্যয় হয়েছে ৯৬ লাখ টাকা। খুব কি বেশি?
তবে ঘাস নাকি লাগানো হয়নি ঠিকভাবে, তোলা হয়েছে, তারপর এই সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা উর্বর পলিমাটির দেশে ঘাস নাকি আপনা-আপনিই গজিয়ে গেছে।
আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন কোনো সংসদ ছিল না, তখন প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে সংসদ সদস্যদের জন্যে ওষুধখাতে।
সংসদ না থাকলেও স্পিকার ও সংসদ সচিবালয় ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে বিদেশ সফর বাবদ ব্যয় করেছেন ৭০ লক্ষ টাকা।
আর স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারের চিকিৎসার জন্যে সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে ২৮ লাখ টাকা তোলা হয়েছে।
এসবই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর।
সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারের দুর্নীতি তদন্তে গঠিত কমিটি সুত্রেই প্রধানত এইসব খবর বেরিয়েছে।
আমরা এইসব অভিযোগের সত্য-মিথ্যা জানি না। সাবেক স্পিকার অবশ্য ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে বলেছেন, ঘাস কাটার দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের, তাঁর নয়।
খন্দকার দেলোয়ার সাহেবের বক্তব্যও আমরা সম্প্রতি পেয়েছি। তিনি বলেছেন, সংসদীয় কমিটির কোনো এখতিয়ারই নেই সাবেক স্পিকারের দুর্নীতির তদন্ত করতে পারে।
পারে কি পারে না সেটা আইনের ব্যাপার। দুর্নীতি হয়েছে কি হয়নি, হলে সেটার প্রতিবিধান কী, সেটা সাধারণ জনগণ জানতে চায়।
আর কেউ নন, স্বয়ং স্পিকার যদি এইসব করে থাকেন তাহলে আমাদের মাথা হেট না হয়েই পারে না।
তবে সম্প্রতি ব্রিটেনেও হইচই হচ্ছে সেখানকার আইন প্রণেতাদের খরচাপাতি নিয়ে। ব্রিটেনে এমপিরা দ্বিতীয় একটা বাড়ির জন্যে খরচ সংসদ থেকে তুলতে পারেন। গত বছর হাউজ অফ কমনসের ৬৪৬ সদস্য এই খাত থেকে ৯ কোটি ৩০ লক্ষ পাউন্ড তুলেছেন। আগে এরা এসবের কোনো ভাউচারও দিতেন না। সম্প্রতি ভাউচার দেওয়া বাধ্যতামূলক করার পর দেখা গেছে এমপিরা এমনকি পর্নো ছবি কেনার রশিদও জমা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের ভাই ৬৫০০ পাউন্ড তুলেছেন সাফসুতরো করার কাজে। ২০০৪ থেকে ২০০৬-এর মধ্যে তিনি এই পরিমাণ অর্থ তোলেন। তার অফিস থেকে বলা হচ্ছে, দুই জন পরিষ্ককারকর্মীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাই এই টাকা তুলেছেন, নিজে খরচ করেননি।
তিন বছরে পরিষ্ককারের জন্যে খরচ বাংলাদেশী টাকায় মোটে ৬৫ লাখ টাকার মতো। আমাদের আমাদের ওন ল্যান্ড’স গবর্মেন্ট বা ‘নিজস্ব জমির সরকার’ তাদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। যদিও পাউন্ড টাকার চেয়ে অনেক শক্তিশালী।
এখন আমাদের সরকার বাহাদুর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে উদাহরণ দেবেন, নাকি ব্রিটিশ পার্লামেন্টেরিয়ানরা বাংলাদেশের সংসদের নজির উপস্থাপন করেন, সেটাই দেখার বিষয়।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
ওড়াউড়ির দিন -আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
June 01, 2017 roddur
[আমেরিকার ছিটেফোঁটা]
ক্যালিফোর্নিয়া
১
লস এঞ্জেলেসের হোটেল ম্যারিয়ট ছেড়ে সোজা এসে উঠলাম জাহিদের বাসায়। ওর স্ত্রী লাকিকে অনেক আগেই দেখেছিলাম ঢাকায়, ওদের বিয়ের পর পরই। মিষ্টি শ্যামলা চেহারা আর সপ্রতিভ চাউনির লাকি প্রাণের দীপ্তিতে সারাক্ষণ ঝলমল করে। মোটামুটি দীর্ঘাঙ্গী, পরিশ্রমী আর আত্মপ্রত্যয়ী এই মেয়েটি আমেরিকায় আমার দেখা সেই বাঙালি মেয়েদের একজন, যারা ও দেশের সংগ্রামী পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকার ও জয়ী হওয়ার ক্ষমতা রাখে। ঘর-সংসার-ছেলেমেয়েদের দেখভাল থেকে শুরু করে অফিসে চাকরি, জাহিদের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ একাডেমি’তে ছেলেমেয়েদের গান, আবৃত্তি, বাংলা শেখানো, বাড়িতে নিয়মিত রিহার্সেলের একটানা কাজ এই একহারা গড়নের মজবুত মেয়েটি যে কী হাসিমুখে করে দেখলে অবাক লাগে। জাহিদ ওর কিছুটা উল্টো স্বভাবেরÑ একেবারেই স্বপ্নে-পাওয়া ঘোর লাগা মানুষ। বাস্তব পৃথিবীটাকে যেন ঠিকমতো দেখতে পায় না, তাই পদে পদে সবখানে ঠকে। হয়ত তরুণ বয়েসে বেশকিছু দিন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চত্বরে কাটিয়ে যাওয়ায় একটা সম্পন্ন জীবনের স্বপ্ন আজও ওর রক্তে গেঁথে আছে। সারাক্ষণ কিছু না কিছু সাংস্কৃতিক কাজ নিয়ে মাতাল হয়ে থাকবেই। ঘর-সংসার নিয়ে খুব একটা ভাবে বলেও যেন মনে হয় না, যেন এর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব লাকির। সারাক্ষণ যেন কোনো শ্রেয় বা শুভ লক্ষ্যের দিকে ও অনির্বাণভাবে জ্বলছে। আপাতভাবে জাহিদ খুবই শান্ত স্বভাবের কিন্তু ভেতরটায় উত্তেজিত আর অস্থির। যা নিয়ে মেতে ওঠে, তার মধ্যে পুরো জীবন বিছিয়ে দেয়। এতটুকু তাড়াহুড়াও করে না, আবার কিছু ছাড়ে না।
জাহিদের সঙ্গে কয়েকদিনের মধ্যে এঞ্জেলেস প্রায় চষে ফেললাম। ড্রাইভার হিসেবে জাহিদ নিরাপদ নয় কেবল, পুরোপুরি চৌকস। মেয়ে ড্রাইভারদের চেয়ে ছেলে ড্রাইভাররা সবসময়ই বেশি বিপজ্জনকÑ পদে পদে তাদের হাতে জীবন হারানোর আশঙ্কা। তবু পৃথিবীর যে কজন হাতে-গোনা পুরুষ ড্রাইভারের গাড়িতে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে কাটানো যাবে, ও তাদের একজন। এতটুকু উত্তেজনা নেই। উদাসীনতাও নেই। যেন এক অন্তহীন নিরুদ্বেগ বিশাল অবকাশ ওকে ঘিরে আছে।
আমি ওর ড্রাইভিংয়ের প্রশংসা করতেই ওর মুখে তুবড়ি ছোটা শুরু হল। বলল, ভালো করে তাকিয়ে দেখেন তো স্যার আমার গড়িতে ব্রেক কটা? পাশের সিট থেকে ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে ভয়ে আঁতকে উঠলাম, কী ব্যাপার! তোমার গাড়িতে দুটো ব্রেক কেন?
আত্মতৃপ্তিভরা হাসি হেসে জাহেদ বলল, দেখেন আমি যে ভালো ড্রাইভ করি তার কারণ আমি শুধু গাড়ি চালাই না, আমি ড্রাইভিং শেখাইও। চৌদ্দ বছর ধরে কাজটা করছি স্যার। অন্তত শ’তিনেক লোককে আমি ড্রাইভিং শিখিয়েছি।
কিন্তু ব্রেক দুটো কেন?
শিক্ষানবীশরা ঘাবড়ে গিয়ে ব্রেক করতে না পারলে আমি অন্যটা চেপে ধরি।
কথায় কথায় এগিয়ে চলছিলাম। আত্মপ্রশংসা ওর থামে না।
এ দেশে ভুল গাড়ি চালালে ফাইন দিতে হয় স্যার। অনেক সময় লাইসেন্সও হারাতে হয়। কিন্তু আজও পুলিশ এ ব্যাপারে আমার ভুল ধরতে পারেনি। হয়ত পারবেও না। ওর কথাটা মানা যায়। এমন ছবির মতো নির্ভুল ড্রাইভিং করলে কে-ই-বা ধরতে পারবে? সত্যি ছবির মতো গাড়ি চালায় জাহিদ। আমরা এভাবে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ সামনে এসে পড়ল একটা মোড়। ছবির মতোই বাঁয়ে মোড় নিল ও। কিন্তু একী! হঠাৎ সামনে পুলিশ কেন? মনে হল রাস্তা ফুঁড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আচমকা হাত তুলে জাহিদকে থামতে বলছে। কী ব্যাপার? থামতে বলার এখানে কী আছে? ও তো ঠিকই মোড় নিয়েছে। জাহিদ গুটিগুটি রাস্তার ধারে গাড়ি পার্ক করতেই পুলিশটা এগিয়ে এসে সৌজন্যের সঙ্গে বলল :
আপনার লাইসেন্সটা স্যার।
জাহিদ লাইসেন্স বের করল। হয়ত নিয়মিত ট্রাফিক চেকিং। পরীক্ষা করেই ছেড়ে দেবে।
লাইসেন্সের পাতা উল্টে পুলিশ কী যেন করল। হয়ত কিছু লিখল। তারপর এগিয়ে এসে একই রকম সৌজন্যের সঙ্গে বলল, আপনার অপরাধ আপনি বাঁ দিকে মোড় নিয়েছেন। ফাইন দু’শ ডলার।
জাহিদ যুক্তি দেখাল, মাসখানেক আগেও এখানে ও নিয়মিত বাঁয়ে মোড় নিয়েছে। এটাই এখানকার নিয়ম। পুলিশ জানাল, কথাটা ঠিক। কিন্তু দিন পনেরো-বিশ আগে নিয়মটা পাল্টে গেছে। তাছাড়া মোড় নেওয়ার সময় লাল আলো ছিল। আপনি দেখেননি।
জাহিদের এতক্ষণের দম্ভোক্তি ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেল। পুলিশের চেয়ে অপ্রস্তুত হল আমার কাছে। ওকে করুণ আর বিষণœ লাগছে। এ ধরনের বিরাট বিরাট আত্মদম্ভের হাতে-নাতে মাঠে মারা যাওয়ার গল্প পৃথিবীতে নতুন নয়। জুলিয়াস সিজারকে নিয়েও এমনি একটা মর্মান্তিক গল্প আছে। এক ভবিষ্যৎকথক একবার নাকি জুলিয়াস সিজারকে বলেছিলেন, আপনার মৃত্যু অমুক তারিখে।
জীবনের কথা ভুললেও মৃত্যুর কথা মানুষ ভোলে না। সিজারও ভোলেননি। ঠিক ঐ তারিখেই পাত্রমিত্র নিয়ে জুলিয়াস সিজার যাচ্ছিলেন সেনেটের দিকে। হঠাৎ রাস্তায় ঐ ভবিষ্যৎকথকের সঙ্গে দেখা। সিজার উপহাস করে তাঁকে বললেন, অমুক তারিখ তো এসে গেছে, আমি তো এখনও মরলাম না।
গণক বললেন, এসেছে, কিন্তু চলে যায়নি। সবাই জানেন, সেদিন সেনেটে কিছুক্ষণ পরেই কীরকম নৃশংসভাবে তিনি নিহত হয়েছিলেন।
নেহাতই হয়ত গল্প। সত্য হলেও হয়ত কাকতালীয়। তবু এরকম কাকতালীয় ব্যাপার পৃথিবীতে কমবেশি ঘটে।
২
আমি বহুবার ভেবেছি, কেন ওসব দেশের মানুষ আইন-কানুনকে আমাদের তুলনায় এত শ্রদ্ধা করে। কেন আমরা করি না। মানুষ হিসেবে ওদের মূল্যবোধ উন্নতÑ শুধু এই জন্য? হয়ত তাও। কিন্তু আমার ধারণা, এটুকুই সব নয়। ওরা যে আইনের ব্যাপারে এত অনুগত তার আরও কারণ আছে। তা হল, জনগণ যাতে আইন মানতে বাধ্য হয় তার একটি নিñিদ্র কঠোর ব্যবস্থা ওসব দেশে গড়ে তোলা হয়েছে। পথে-ঘাটে সেখানে প্রহরী, অলিতে-গলিতে গুপ্তচর, প্রতিটা মুখের ওপর সার্চলাইট। সেইসব কোটি কোটি জাগ্রত চোখ থেকে কারও নিষ্কৃতি নেই, হোক সে ইংল্যান্ডের রানির বোন, আর আমেরিকান প্রেসিডেন্টের মেয়ে। নির্দয় চক্ষুহীন সে আইন সবার জন্য সমান। সেখানে কঠোর হাতে মানুষকে আইন মানতে এমন নিষ্ঠুরভাবে বাধ্য আর অভ্যস্ত করা হয় যে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা তাদের মূল্যবোধ, সংস্কৃতি বা ব্যক্তিগত গৌরবের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তখন আইন মানা তাদের জন্য হয়ে ওঠে পরিশীলিত মানুষের আচরণ, মর্যাদা, গৌরব আর উচ্চতর মনুষ্যত্বের প্রতীক।
একটা কথা যেন না ভুলি যে আমরা প্রতিটা মানুষ আসলে জন্মাই সারা পৃথিবীর জন্য, এই বিশ্বচরাচরের যাবতীয় রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শের জন্য। মহাভারতের রাজা যযাতি সুদীর্ঘ জীবন পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করার পর বলেছিলেন, এই পৃথিবীর সমুদয় যব, ধান্য, হিরণ্য ও নারী একটিমাত্র পুরুষের বাসনা চরিতার্থ করার জন্যও যথেষ্ট নয়। এই তো মানুষ। পৃথিবীর প্রতিটি জিনিশের জন্য অনির্বাণ বাসনা আর ক্ষুধা নিয়ে তার জন্ম। এর যতটুকু তার ছাড় দিতে হয়, সে পরিমাণে সে ছোট হয়ে যায়। মানুষ যদি এ পৃথিবীতে একা জন্মাত তবে জগতের যাবতীয় সবকিছু একা পেতে তার অসুবিধা হত না। কিন্তু নির্জন দ্বীপের রবিনসন ক্রসোর সে তো পৃথিবীর একমাত্র মানুষ নয়। তার মতো আরও কোটি কোটি মানুষ তো আছে পৃথিবীতে। তাই আসে এই সীমিত সম্পদকে ভাগ করে নেবার বা ছাড় দেবার কথা। এক কথায় নিজেকে ছোট করে ফেলার কথা। যুক্তিহীন অদমিত ব্যক্তি মানুষ এই ছাড় দিতে নারাজ। সবার হক একা কেড়ে নিয়ে নিজ অস্তিত্বের ভাঁড়ারকে পূর্ণতা দেবার জন্যে সে মরিয়া। এই ব্যক্তি মানুষকে দমন করে তার প্রাপ্যের কুঠরিতে তাকে সীমিত করার জন্য সামষ্টিক মানুষকে তার ওপর দ্বিমুখী আক্রমণ চালাতে হয়েছে। একদিকে শক্তিপ্রয়োগ করে তার ভেতরকার বর্বর স্বার্থলিপ্সু মানুষটাকে একটু একটু করে নিস্তেজ করে আনতে হয়েছে, অন্যদিকে মহত্তের স্পর্শ দিয়ে তাকে মমতাবান, উদার ও মনুষ্যত্বসম্পন্ন করে তুলতে হয়েছে। প্রথমটার জন্য তাদের সৃষ্টি করতে হয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্র। সেখানে চৌকিদার, দফাদার, আনসার, পুলিশ, সেনাবাহিনী, আদালত, বিচারক, জেল, ফাঁসি, মৃত্যুদ দিয়ে তার ভেতরকার অসভ্য আদিম জন্তুসুলভ মানুষটারে কয়েদ করা হয়েছে। অন্যদিকে শিল্প, সংগীত, চিত্রকলা, সাহিত্য, দর্শন, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, শিক্ষা, ধর্মÑ এসবের মাধ্যমে তার হৃদয়কে সুকুমার আর মানবিক করে তোলা হয়েছে। স্বার্থান্ধ ব্যক্তি-মানুষের পশুসুলভ প্রবৃত্তিকে শমিত করে তার ভেতর শুভবুদ্ধি জাগানোর লক্ষ্যে সামাজিক মানুষের এই যে নির্মম ও আপ্রাণ চেষ্টা এর নামই সভ্যতা। কাজেই সভ্যতার লক্ষ্য যে মানুষকে কেবল শ্রেয়বোধে প্রাণিত করা তা নয়, শ্রেয়বোধের পথে সে যেন অনুগত থাকে তার বাস্তব বাধ্যবাধকতাও নিশ্চিত করা। এই পথটা আদৌ কুসমাস্তীর্ণ নয়। বরং রাষ্ট্রের মতোই সে নিষ্ঠুর ও নির্যাতনকারী; কঠোর ও রক্তসংকুল।
তাই মানুষকে উন্নত মহৎ করে তোলার অনেক শুভ উদ্যোগ যেমন ওসব দেশে দেখা যায়, তেমনি দেখা যায় দেশের প্রতি মোড়ের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ, প্রতিটি অফিস আর রাস্তার পাশে সার্কিট ক্যামেরা। সুশাসনের সেই নিñিদ্র জাল ছিঁড়ে একটি প্রাণীও যেন পালাতে না পারে সে ব্যবস্থা সেখানে নিরঙ্কুশ। অনেককে বলতে শুনেছি জাপান, ইংল্যান্ড, আমেরিকায় অপরাধ করে পালাবার জো নেই। রাস্তা ফুঁড়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে যায়। এমন নির্মম ব্যবস্থা কী করে গড়ে উঠল? পুলিশ কি জাদু বা ভেল্কিবাজি দিয়ে ঠিক জায়গায় ঠিক সময়ে হাজির হয়? দেশের প্রতিটি জায়গায় বা চোখের আড়ালে পুলিশকে চব্বিশ ঘণ্টা কর্মরত করে রাখা হয় বলেই সে ঠিক সময়ে ঠিক দরকারে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। এ জন্যে দরকার বিপুল সম্পদের। যে দেশের সম্পদ যত বেশি, আইনের সুষ্ঠু নিশ্চয়তাও সেখানে তত বেশি।
অনেককে দুঃখ করতে শুনিÑ আমাদের দেশে আইন আছে, তার প্রয়োগ নেই। কী করে থাকবে? জনস্বার্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংসদে না হয় অনেক ভালো আইনই পাশ আমরা করলাম। কিন্তু তাদের প্রয়োগ বা বাস্তবায়নের জন্যে যে বিপুল জনবল, অর্থবল দরকার বা যে স্বচ্ছ জবাবদিহিতাপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বা প্রযুক্তির আয়োজন, আমাদের এই সম্পদ দিয়ে তার সুরাহা কতটুকু সম্ভব?
আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ চাইলে বেশিরকম আদর্শের বুলি না কপচিয়ে আমাদের নজর বাড়ানো উচিত সম্পদ সৃষ্টির দিকে, এর সুপ্রয়োগের দিকে।
অলৌকিক গল্প প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি একশৃঙ্গ অভিযান(সত্যজিৎ রায়)
June 01, 2017 roddur
১লা জুলাই
আশ্চর্য খবর। তিব্বত পর্যটক চার্লস উইলার্ডের একটা ডায়রি পাওয়া গেছে। মাত্র এক বছর আগে এই ইংরাজ পর্যটক তিব্বত থেকে ফেরার পথে সেখানকার কোনো অঞ্চলে খাম্পা শ্রেণীর এক দস্যুদলের হাতে পড়ে। দস্যুরা তার অধিকাংশ জিনিস লুট করে নিয়ে তাকে জখম করে রেখে চলে যায়। উইলার্ড কোনো রকমে প্রায় আধমরা অবস্থায় ভারতবর্ষের আলমোড়া শহরে এসে পৌঁছায়। সেইখানেই তার মৃত্যু হয়। এসব খবর আমি খবরের কাগজেই পড়েছিলাম। আজ লন্ডন থেকে আমার বন্ধু ভূতত্ত্ববিদ জেরেমি সন্ডার্সের একটা চিঠিতে জানলাম যে উইলার্ডের মৃত্যুর পর তার সামান্য জিনিসপত্রের মধ্যে একটা ডায়রি পাওয়া যায়, এবং সেটা এখন সন্ডার্সের হাতে। তাতে নাকি এক আশ্চর্য ব্যাপারের উলেস্নখ আছে। আমার তিব্বত সম্বন্ধে প্রচন্ড কৌতূহল, আর আমি তিব্বতী ভাষা জানি জেনে সন্ডার্স আমাকে চিঠিটা লিখেছে। সেটার একটা অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি-
‘…উইলার্ড আমার অনেক দিনের বন্ধু ছিল সেটা তুমি জান কি না জানি না। তার বিধবা স্ত্রী এডউইনার সঙ্গে পরশু দেখা করতে গিয়েছিলাম। সে বলল আলমোড়া থেকে তার মৃত স্বামীর যে সব জিনিস পাঠানো হয়েছিল তার মধ্যে একটা ডায়রি রয়েছে। সে ডায়রি আমি তার কাছ থেকে চেয়ে আনি। দুঃখের বিষয় ডায়রির অনেক লেখাই জল লেগে অস্পষ্ট হয়ে গেছে, তাই পড়া মুশকিল। কিন্তু তার শেষ পৃষ্ঠার কয়েকটা লাইন পড়তে কোনো অসুবিধা হয়নি। ১৯শে মার্চের একটা ঘটনা তাতে লেখা রয়েছে। শুধু দুটি লাইন- ‘আই স এ হার্ড অফ ইউনিকর্নস টু ডে। আই রাইট দিস্ ইন ফুল্ পোজেশন অফ মাই সেন্সেস।’ তার পরেই একটা প্রচন্ড ঝড়ের ইঙ্গিত পেয়ে উইলার্ড ডায়রি লেখা বন্ধ করে। তার এই অদ্ভুত উক্তি সম্বন্ধে তোমার কী মত জানতে ইচ্ছে করে’- ইত্যাদি।
উইলার্ড একপাল উইনিকর্ন দেখেছে বলে লিখেছে। আর তার পরেই বলছে সেটা সে সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কে দেখেছে। এটা বলার দরকার ছিল এই জন্যেই যে ইউনিকর্ন নামক প্রাণীটিকে আবহমানকাল থেকেই সারা বিশ্বের লোকে কাল্পনিক প্রাণী বলেই জানে। একশৃঙ্গ জানোয়ার। কপাল থেকে বেরোনো লম্বা প্যাঁচানো শিং-বিশিষ্ট ঘোড়া। ইউনিকর্নের চেহারা বিলাতি আঁকা ছবিতে যা দেখা যায় তা হল এই। যেমন চীনের ড্রাগন কাল্পনিক, তেমনি ইউনিকর্নও কাল্পনিক।
কিন’ এই কাল্পনিক কথাটা লিখতে গিয়েও আমার মনে খটকা লাগছে। আমার সামনে টেবিলের উপর একটা বই খোলা রয়েছে, সেটা মোহেঞ্জোদাড়ো সম্পর্কে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এই মোহেঞ্জোদাড়োর মাটি খুঁড়ে আজ থেকে চার হাজার বছর আগেকার এক আশ্চর্য ভারতীয় সভ্যতার যে সব নমুনা পেয়েছিলেন তার মধ্যে ঘর বাড়ি রাস্তাঘাট হাঁড়ি কলসী খেলনা ইত্যাদি ছাড়াও এক জাতের জিনিস ছিল, যেগুলো হচ্ছে মাটির আর হাতির দাঁতের তৈরি চারকোনা সীল।
এই সব সীলে খোদাই করা হাতি বাঘ ষাঁড় গন্ডার ইত্যাদি আমাদের চেনা। জানোয়ার ছাড়াও এক রকম জানোয়ার দেখা যায়, যার শরীরটা অনেকটা বলদের মতো কিন’ মাথায় রয়েছে একটিমাত্র পাকানো শিং। এটাকে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা কাল্পনিক জানোয়ার বলেই মেনে নিয়েছে। কিন’ এতগুলো আসল জানোয়ারের পাশে হঠাৎ একটা আজগুবী জানোয়ার কেন খোদাই করা হবে সেটা আমি বুঝতে পারি না।
এ জানোয়ার যে কাল্পনিক নয় সেটা ভাবার আরেকটা কারণ হচ্ছে যে দু হাজার বছর আগের রোম্যান পন্ডিত পিস্ননি তাঁর বিখ্যাত জীবতত্ত্বের বইয়েতে স্পষ্ট বলে গেছেন যে, ভারতবর্ষে একরকম গরম্ন আর একরকম গাধা পাওয়া যায় যাদের মাথায় মাত্র একটা শিং। গ্রীক মনীষী অ্যারিস্টটলও ভারতবর্ষে ইউনিকর্ন আছে বলে লিখে গেছেন। এ থেকে কি এমন ভাবা অন্যায় হবে যে, এককালে এদেশে এক ধরনের একশৃঙ্গ জানোয়ার ছিল যেটা এখান থেকে লোপ পেলেও হয়তো তিব্বতের কোনো অজ্ঞাত অঞ্চলে রয়ে গেছে, আর উইলার্ড ঘটনাচক্রে সেই অঞ্চলে গিয়ে পড়ে এই জানোয়ার দেখতে পেয়েছেন? এ কথা ঠিক যে গত দুশো বছরে অনেক বিদেশি পর্যটকই তিব্বত গিয়ে তাঁদের ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখেছেন, এবং কেউই ইউনিকর্নের কথা লেখেননি। কিন’ তাতে কী প্রমাণ হল? তিব্বতে এখনো অনেক জায়গা আছে যেখানে মানুষের পা পড়েনি। সুতরাং সে দেশের কোথায় যে কী আছে তা কেউ সঠিক বলতে পারে?
সন্ডার্সকে আমার এই কথাগুলো লিখে জানাব। দেখি ও কী বলে।
১৫ই জুলাই
আমার চিঠির উত্তরে লেখা সন্ডার্সের চিঠিটা তুলে দিচ্ছি-
প্রিয় শঙ্কু,
তোমার চিঠি পেলাম। উইলার্ডের ডায়রির শেষ দিকের খানিকটা অংশ পড়তে পেরে আরো বিস্মিত হয়েছি। ১৬ই মার্চ সে লিখছে ‘টুডে আই ফ্লু উইথ দ্য টু হান্ড্রেড ইয়ার ওল্ড লামা।’ ফ্লু মানে কি এরোপেস্ননে ওড়া? মনে তো হয় না। তিব্বতে রেলগাড়িই নেই, এরোপেস্নন যাবে কী করে। কিন’ তাহলে কি সে কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই আকাশে ওড়ার কথা বলছে? তাই বা বিশ্বাস করি কী করে? এসব কথা পড়ে উইলার্ডের মাথা ঠিক ছিল কি না সে বিষয়ে সন্দেহ জাগে। অথচ আলমোড়ার যে ডাক্তারটি তাকে শেষ অবস্থায় দেখেছিলেন (মেজর হর্টন) তাঁর মতে উইলার্ডের মাথায় গন্ডগোল ছিল না। ১৩ই মার্চের ডায়রিতে থোকচুম-গোম্ফা নামে একটা মঠের উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে। উইলার্ডের মতে- ‘এ ওয়ান্ডারফুল মনাস্ট্রি। নো ইউরোপিয়ান হ্যাজ এভার বিন হিয়ার বিফোর।’ তুমি কি এই মঠের নাম শুনেছ কখনো? … যাই হোক, আসল কথা হচ্ছে- উইলার্ডের এই ডায়রি পড়ে আমার মনে তিব্বত যাবার একটা প্রবল বাসনা জেগেছে। আমার জার্মান বন্ধু উইলহেলম ক্রোলও এ ব্যাপারে উৎসাহী। তাকে অবশ্যি উড়ন্ত লামার বিবরণই বেশি আকর্ষণ করেছে। জাদুবিদ্যা, উইচক্রাফট্ ইত্যাদি সম্পর্কে ক্রোলের মূল্যবান গবেষণা আছে, তুমি হয়তো জান। সে পাহাড়েও চড়তে পারে খুব ভালো। বলা বাহুল্য, আমরা যদি যাই তো আমাকে সঙ্গী হিসেবে পেলেই খুব ভালো হবে। এ মাসেই রওনা হওয়া যেতে পারে। কী সি’র করা সেটা আমাকে জানিও। শুভেচ্ছা নিও। ইতি।
জেরেমি সন্ডার্স
উড়ন্ত লামা! তিব্বতী যোগী মিলারেপার আত্মজীবনী আমি পড়েছি। ইনি তান্ত্রিক জাদুবিদ্যা শিখে এবং যোগ সাধনা করে নানারকম আশ্চর্য ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন। তার মধ্যে একটা ছিল উড়ে বেড়াবার ক্ষমতা। এই জাতীয় কোনো মহাযোগীর সাহায্যেই কি উইলার্ড আকাশে উড়েছিলেন?
সব মিলিয়ে ব্যাপারটা আমারও মনে প্রচন্ড কৌতূহল উদ্রেক করেছে। তিব্বত যাইনি; কেবল দেশটা নিয়ে ঘরে বসে পড়াশোনা করেছি, আর তিব্বতী ভাষাটা শিখেছি। ভাবছি সন্ডার্সের দলে আমিও যোগ দেব। এতে ওদের সুবিধাই হবে, কারণ আমার তৈরি এমন সব ওষুধপত্র আছে যার সাহায্যে পার্বত্য অভিযানের শারীরিক গস্নানি অনেকটা কমিয়ে দেওয়া যায়।
২৭শে জুলাই
আজ আমার পড়শি ও বন্ধু অবিনাশবাবুকে তিব্বত অভিযানের কথা বলতে তিনি একেবারেই হাঁ হাঁ করে উঠলেন। দু-দুবার আমার সঙ্গে ভারতবর্ষের বাইরে গিয়ে নানান বিচিত্র অভিজ্ঞতার ফলে ওঁর এই প্রৌঢ় বয়সে ভ্রমণের নেশা চাগিয়ে উঠেছে। তিব্বত জায়গাটা খুব আরামের নয়, এবং অনেক অজানা দুর্গম জায়গায় আমাদের যেতে হবে শুনে ভদ্রলোক বললেন, ‘সে হোক্ গে। শিবের পাহাড় কৈলাসটা যদি এবার চাক্ষুষ দেখতে পারি তো আমার হিন্দু জন্ম সার্থক।’ কৈলাস যে তিব্বতে সেটা জানলেও তার পাশের বিখ্যাত হ্রদটির কথা অবিনাশবাবু জানতেন না। বললেন, ‘সে কী মশাই, মানস সরোবর তো কাশ্মীরে বলে জানতুম!’
একশৃঙ্গ আর উড়ন্ত লামার কথাটা আর অবিনাশবাবুকে বললাম না, কারণ ও দুটো নিয়ে এখনো আমার মনে খটকা রয়ে গেল। খাম্পা দস্যুদের কথাটা বলতে ভদ্রলোক বললেন, ‘তাতে ভয়ের কী আছে মশাই? আপনার ওই হনলুলু পিস্তল দিয়ে ওদের সাবাড় করে দেবেন।’ অ্যানাইহিলিন যে হনলুলু কী করে হল জানি না।
কাঠগোদাম থেকেই যাওয়া সি’র করেছি। আজ সন্ডার্সকে টেলিগ্রামে জানিয়ে দিয়েছি যে আমি পয়লা কাঠগোদাম পৌঁছাব। জিনিসপত্র বেশি নেওয়ার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। অবিনাশবাবুকেও সেটা বলে দিলাম। উনি আবার পাশবালিশ ছাড়া ঘুমোতে পারেন না, তাই ওঁর জন্যে ফুঁ দিয়ে ফোলানো যায় এমন একটা লম্বাটে বালিশ তৈরি করে দেব বলেছি। শীতে পরার জন্য আমারই আবিষ্কৃত শ্যাঙ্কলন পস্নাস্টিকের হাল্কা পোশাক নিচ্ছি, এয়ার-কন্ডিশনিং পিল নিচ্ছি, বেশি উঁচুতে উঠলে যাতে নিশ্বাসের কষ্ট না হয় তার জন্য আমার তৈরি অক্সিমোর পাউডার নিচ্ছি। এছাড়া অম্নিস্কোপ ক্যামের্যাপিড ইত্যাদি তো নিচ্ছিই। সব মিলিয়ে পাঁচ সেরের বেশি ওজন হবার কথা নয়। পায়ে পরার জন্য পশমের বুট আলমোড়াতেই পাওয়া যাবে।
ক’দিন হল খুব গুমোট হয়েছে। এইবার ঘোর বর্ষা শুরম্ন হবে বলে মনে হচ্ছে। হিমালয়ের প্রাচীর পেরিয়ে একবার তিব্বতে পৌঁছাতে পারলে মনসুন আর আমাদের নাগাল পাবে না।
২রা আগস্ট । গারবেয়াং
এর মধ্যে ডায়রি লেখার সময় পাইনি। আমরা কাঠগোদাম ছেড়ে মোটরে করে আলমোড়া পর্যন্ত এসে, তারপর ঘোড়া করে উত্তর-পূর্ব পাহাড়ের রাস্তা ধরে প্রায় দেড়শো মাইল অতিক্রম করে কাল সন্ধ্যায় গারবেয়াং এসে পৌঁছেছি।
গারবেয়াং দশ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত একটা ভুটিয়া গ্রাম। আমরা এখনো ভারতবর্ষের মধ্যেই রয়েছি। আমাদের পুবদিকে খাদের নিচ দিয়ে কালী নদী বয়ে চলেছে। নদীর ওপারে নেপাল রাজ্যের ঘন ঝাউবন দেখা যাচ্ছে। এখান থেকে আরো বিশ মাইল উত্তরে গিয়ে ১৬০০০ ফুট উঁচুতে একটা গিরিবর্ত্ম পেরিয়ে লিপুধুরা। লিপুধুরা পেরোলেই ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে তিব্বতে প্রবেশ।
কৈলাস-মানস-সরোবর তিব্বতের সীমানা থেকে মাইল চল্লিশেক। দূরত্বের দিক দিয়ে বেশি নয় মোটেই, কিন’ দুর্গম গিরিপথ, বেয়াড়া শীত, আর তার সঙ্গে আরো পাঁচরকম বিপদ-আপদের কথা কল্পনা করে, ভারতবর্ষের শতকরা ৯৯.৯ ভাগ লোকই আর এদিকে আসার নাম করে না। অথচ এই পথটুকু আসতেই আমরা যা দৃশ্যের নমুনা পেয়েছি, এর পরে না জানি কী আছে সেটা ভাবতে এই বয়সেও আমার রোমাঞ্চ হচ্ছে।
এবার আমাদের দলটার কথা বলি। সন্ডার্স ও ক্রোল ছাড়া আরো একজন বিদেশী আমাদের সঙ্গ নিয়েছেন। এর নাম সের্গেই মার্কোভিচ। জাতে রাশিয়ান, থাকেন পোল্যান্ডে। ইংরেজিটা ভালোই বলেন। আমাদের মধ্যে ইনিই অপেক্ষাকৃত কমবয়সী। দোহারা লম্বা চেহারা, ঘোলাটে চোখ, মাথায় একরাশ অবিন্যস্ত তামাটে চুল, ঘন ভুরম্ন, আর ঠোঁটের দুপাশে ঝুলে থাকা লম্বা গোঁফ। এঁর সঙ্গে আমাদের আলাপ আলমোড়াতেই। ইনিও নাকি তিব্বত যাচ্ছিলেন, তার একমাত্র কারণ ভ্রমণের নেশা, তাই আমরা যাচ্ছি শুনে আমাদের দলে ভিড়ে পড়লেন। এমনিতে হয়তো লোক খারাপ নন, কিন’ ঠোঁট হাসলেও চোখ হাসে না দেখে মনে হয় তেমন অবস্থায় পড়লে খুন-খারাপিতেও পেছ-পা হবেন না। সেই কারণেই বোধহয় ক্রোলের একে পছন্দ না। ক্রোলের নিজের হাইট সাড়ে পাঁচ ফুটের বেশি না। টেকো মাথার দুপাশে সোনালী চুল কানের উপর এসে পড়েছে। বেশ গাঁট্টাগোঁট্টা চেহারা। তবে আদৌ হিংস্র নয়। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে পাঁচবার ম্যাটারহর্নের চূড়োয় উঠেছে। লোকটা মাঝে মাঝে বেজায় অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে, তিনবার নাম ধরে ডাকলে তবে জবাব দেয়। আর প্রায়ই দেখি ডান হাতের আঙুল নেড়ে নেড়ে কী যেন হিসেব করে। আমরা যেমন কড়ে আঙুল থেকে শুরম্ন করে পাঁচ আঙুলের গাঁটে গাঁটে বুড়ো আঙুল ঠেকিয়ে এক থেকে কুড়ি পর্যন্ত গুনতে পারি, ইউরোপের লোকেরা দেখেছি সেটা একেবারেই পারে না। এরা একটা আঙুলে এক গোনে। গাঁটের ব্যবহারটা বোধহয় ভারতীয়।
সন্ডার্স আমার থেকে পাঁচ বছরের ছোট। সুগঠিত সুপুরম্নষ চেহারা, বুদ্ধিদীপ্ত হাল্কা নীল চোখ, প্রশসত্ম ললাট। সে এই ক’দিনে তিব্বত সম্বন্ধে খান দশেক বই পড়ে অভিযানের জন্য তৈরি হয়ে এসেছে। যোগবল বা ম্যাজিকে তার বিশ্বাস নেই। এসব বই পড়েও সে বিশ্বাস জাগেনি, এবং এই নিয়ে ক্রোলের সঙ্গে তার মাঝে মাঝে তর্কবিতর্কও হয়েছে।
এই তিনজন ছাড়া অবিশ্যি রয়েছেন আমার প্রতিবেশী তীর্থযাত্রী শ্রীঅবিনাশচন্দ্র মজুমদার, যিনি আপাতত আমাদের থেকে বিশ হাত দূরে খাদের পাশে একটা পাথরের খন্ডে বসে হাতে তামার পাত্রে তিব্বতী চা নিয়ে কাছেই খুঁটির সঙ্গে বাঁধা একটা ইয়াক বা চমরী গাইয়ের দিকে চেয়ে আছেন। আজ সকালেই ভদ্রলোক বলেছিলেন, ‘মশাই, সেই ছেলেবেলা থেকে পুজোর কাজে চামরের ব্যবহার দেখে আসছি, আর অ্যাদ্দিনে তার উৎপত্তিস’ল দেখলাম।’ সাদা চমরীর ল্যাজ দিয়েই চামর তৈরি হয়। এখানে যে চমরীটা রয়েছে সেটা অবিশ্যি কালো।
আমরা বাকি চারজনে বসেছি একটা ভুটিয়ার দোকানের সামনে। সেই দোকান থেকেই কেনা তিব্বতী চা ও সাম্পায় আমরা ব্রেকফাস্ট সারছি। সাম্পা হল গমের ছাতুর ডেলা। জলে বা চায়ে ভিজিয়ে খেতে হয়। এই চা কিন’ আমাদের ভারতীয় চা নয়। এ চা চীন দেশ থেকে আসে, এর নাম ব্রিক-টী। দুধ-চিনির বদলে নুন আর মাখন দিয়ে এই চা তৈরি হয়। একটা লম্বা বাঁশের চোঙার মধ্যে চা ঢেলে আরেকটা বাঁশের ডান্ডা দিয়ে মোড়্গম ঘাঁটান দিলে চায়ে-মাখনে একাকার হয়ে এই পানীয় প্রস’ত হয়। তিব্বতীরা এই চা খায় দিনে ত্রিশ-চল্লিশ বার। চা আর সাম্পা ছাড়া আরো যেটা খায় সেটা হল ছাগল আর চমরীর মাংস। এসব হয়তো আমাদেরও খেতে হবে, যদিও চাল ডাল সব্জি কফি টিনের খাবার ইত্যাদি আমরা সঙ্গে নিয়েছি। সে সব যতদিন চলে চলবে, তারপর সবকিছু ফুরোলে রয়েছে আমার ক্ষুধা-তৃষ্ণানাশক বড়ি বটিকা ইন্ডিকা।
অনিবাশবাবু আমায় শাসিয়ে রেখেছেন- ‘আমাকে মশাই আপনার ওই সাহেব বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে বলবেন না। আপনি চৌষট্টিটা ভাষা জানতে পারেন, আমার বাংলা বৈ আর সম্বল নেই। সকাল সন্ধে গুড মর্নিং গুড ইভনিংটা বলতে পারি, এমন কি ওনাদের কেউ খাদে-টাদে পড়ে গেলে গুড বাইটাও মুখ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে- তার বেশি আর কিছু পাবেন না। আপনি বরং বলে দেবেন যে আমি একজন মৌনী সাধু, তীর্থ করতে যাচ্ছি।’ সত্যি অবিনাশবাবু খুবই কম কথা বলছেন। আমি একা থাকলেও কথা বলেন
ফিস্ফিস্ করে। একটা সুবিধা এই যে ভদ্রলোকের ঘোড়া চড়তে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। এসব অঞ্চলে ঘোড়া ছাড়া গতি নেই। ছ’টা ঘোড়া, মাল বইবার জন্য চারটে চমরী আর আটজন ভুটিয়া কুলি আমরা
সঙ্গে নিচ্ছি।
উইলার্ডের ডায়রিটা নিজের চোখে দেখে আমার উইনিকর্ণ ও উড়নত্ম লামা সম্পর্কে কৌতূহল দশগুণ বেড়ে গেছে। এখানে একদল তিব্বতী পশমের ব্যাপারী এসেছে, তাদের একজনের সঙ্গে আলাপ করে একশৃঙ্গ জানোয়ারের কথা জিজ্ঞেস করাতে সে বোধহয় আমাকে পাগল ভেবে দাঁত বার করে হাসতে লাগল! উড়ন্ত লামার কথা জিজ্ঞেস করাতে সে বলল সব লামাই নাকি উড়তে পারে। আসলে এদের সঙ্গে কথা বলে কোনো ফল হবে না। উইলার্ডের সৌভাগ্য আমাদের হবে কি না জানি না। একটা সুখবর আছে এই যে, উইলার্ডের ১১ই মার্চের ডায়রিতে একটা জায়গায় উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে যেটার নাম দেওয়া নেই, কিন’ ভৌগোলিক অবস্থান দেওয়া আছে। সেটা হলো ল্যাটিচিউড ৩৩.৩ নর্থ আর লঙ্গিচিউড ৮৪ ইস্ট। ম্যাপ খুলে দেখা যাচ্ছে সেটা কৈলাসের প্রায় একশো মাইল উত্তর-পশ্চিমে চাংথাং অঞ্চলে। এই চাংথাং ভয়ানক জায়গা। সেখানে গাছপালা বলতে কিছু নেই, আছে শুধু দিগন্ত বিস্তৃত বালি আর পাথরে মেশানো রুক্ষ জমির মাঝে মাঝে একেকটা হ্রদ। মানুষ বলতে এক যাযাবর শ্রেণীর লোক ছাড়া কেউ থাকে না ওখানে। শীতও নাকি প্রচন্ড। আর তার উপরে আছে বরফের ঝড়- যাকে বলে বিস্নজার্ড- যা নাকি সাতপুরম্ন পশমের জামা ভেদ করে হাড় পর্যনত্ম কাঁপিয়ে দেয়।
সবই সহ্য হবে যদি যাত্রার উদ্দেশ্য সফল হয়। অবিনাশবাবু বলছেন, ‘কোনো ভাবনা নেই। ভক্তির জোর, আর কৈলাসেশ্বরের কৃপায় আপনাদের সব মনস্কামনা পূর্ণ হবে।’
৪ঠা আগস্ট। পুরাং উপত্যকা
১২০০০ ফুট উঁচুতে একটা খরস্রোতা পাহাড়ী নদীর ধারে আমরা ক্যাম্প ফেলেছি। হাপরের সাহায্যে ধুনি জ্বালিয়ে তার সামনে মাটিতে কম্বল বিছিয়ে বসেছি। বিকেল হয়ে আসছে; চারদিকে বরফে ঢাকা পাহাড়ে ঘেরা এই জায়গাটা থেকে রোদ সরে গিয়ে আবহাওয়া দ্রম্নত ঠান্ডা হয়ে আসছে। আশ্চর্য এই যে, এখানে সন্ধ্যা থেকে সকাল অবধি দুর্জয় শীত হলেও দুপুরের দিকে তাপমাত্রা চড়ে গিয়ে মাঝে মাঝে ৮০/৯০ ডিগ্রী ফারেনহাইট
উঠে যায়।
গারবেয়াং থেকে রওনা হবার আগে, চড়াই উঠতে হবে বলে নিশ্বাসের যাতে কষ্ট না হয় তার জন্য আমি সকলকে অক্সিমোর পাউডার অফার করি। সন্ডার্স ও অবিনাশবাবু আমার ওষুধ খেলেন। ক্রোল বলল সে জার্মানির পার্বত্য অঞ্চলে মাইনিঙ্গেন শহরে থাকে, ছেলেবেলা থেকে পাহাড়ে চড়েছে, তাই তার ওষুধের দরকার হবে না। মার্কোভিচকে জিজ্ঞেস করাতে সেও বলল ওষুধ খাবে না। কেন খাবে না তার কোনো কারণ দিল না। বোধ হয় আমার তৈরি ওষুধে তার আস্থা নেই। সে যে অত্যন্ত মূর্খের মতো কাজ করেছে সেটা পরে নিজেও বুঝতে পেরেছিল। ঘোড়ায় চড়ে দিব্যি চলেছিলাম আমরা পাহাড়ে পথ ধরে। বেঁটে বেঁটে তিব্বতী ঘোড়ার পিঠে আমরা পাঁচজন, আর আমাদের পিছনে কুলি আর মালবাহী চমরীর দল। ষোল হাজার ফুটে গুরুপলা গিরিবর্ত্ম পেরোতেই হিমেল বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ ছাপিয়ে একটা অদ্ভুত আওয়াজ আমাদের কানে এল। আমাদের মধ্যে কে যেন প্রচন্ড জোরে হাসতে
শুরম্ন করেছে।
এদিক ওদিক চেয়ে একটু হিসেব করে শুনে বুঝতে পারলাম হাসিটা আসছে সবচেয়ে সামনের ঘোড়ার পিঠ থেকে। পিঠে রয়েছেন শ্রীমান সেরগেই মার্কোভিচ। তার হাসিটা এমনই বিকট ও অস্বাভাবিক যে আমাদের দলটা আপনা থেকেই থেমে গেল।
মার্কোচিভ থেমেছে। এবার সে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল। তারপর তার সমস্ত দেহ কাঁপিয়ে হাসতে হাসতে অত্যন্ত বেপরোয়া ও বেসামালভাবে সে রাস্তার ডান দিকে এগোতে লাগল। ডাইনে খাদ, আর সে খাদ দিয়ে একবার গড়িয়ে পড়লে অন্তত দু হাজার ফুট নিচে গিয়ে সে গড়ানো থামবে এবং অবিনাশবাবুর ‘গুড বাই’ বলার সুযোগ
এসে যাবে।
সন্ডার্স, ক্রোল ও আমি ঘোড়া থেকে নেমে ব্যস্তভাবে মার্কোভিচের দিকে এগিয়ে গেলাম। লোকটার চোখ ঘোলাটে; তার হাসিও ঘোলাটে মনের হাসি। এবারে বুঝতে পাললাম তার কী হয়েছে। বারো হাজার ফুটের পর থেকেই আবহাওয়ায় অক্সিজেনের রীতিমতো অভাব হতে শুরম্ন করে। কোনো কোনো লোকের বেলায় সেটা নিশ্বাসের কষ্ট ছাড়া আর কোনো গ-গোলের সৃষ্টি করে না। কিন’ একেকজনের ক্ষেত্রে সেটা রীতিমতো মস্তিষ্কের বিকার ঘটিয়ে দেয়। তার ফলে কেউ কাঁদে, কেউ হাসে, কেউ ভুল বকে, আবার কেউ বা অজ্ঞান হয়ে যায়। মার্কোভিচকে হাসিতে পেয়েছে। আমাদের কুলিরা বোধহয় এ ধরনের ব্যারাম কখনো দেখেনি, কারণ তারা দেখছি মজা পেয়ে নিজেরাও হাসতে শুরম্ন করে দিয়েছে। ন’টি পুরম্নষের অট্টহাসি এখন চারদিকে পাহাড় থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
ক্রোল হঠাৎ আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, ‘ওকে মারি একটা ঘুষি?’
আমি তো অবাক। বললাম, ‘কেন, ঘুষি মারবে কেন? ওর তো অক্সিজেনের অভাবে ওই অবস্থা হয়েছে।’
‘সেই জন্যেই তো বলছি। এই অবস্থায় ওকে তোমার ওষুধ খাওয়াতে পারবে না। বেহুঁশ হলে জোর করে গেলানো যেতে পারে।’
এর পরে আমি কিছু বলার আগেই ক্রোল মার্কোভিচের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা প্রচন্ড ঘুষিতে তাকে ধরাশায়ী করে দিল। অজ্ঞান অবস্থায় তার মুখ হাঁ করে তার গলায় আমার পাউডার গুঁজে দিলাম। দশ মিনিট পরে জ্ঞান হয়ে ভদ্রলোক ফ্যাল ফ্যাল করে এদিক ওদিক দেখে তার চোয়ালে হাত বুলোতে বুলোতে সুবোধ বালকের মতো তার ঘোড়ার পিঠে চেপে বসল। আমরা সকলে আবার
রওনা দিলাম।
পুরাঙে এসে ক্যাম্প ফেলে আগুন জ্বেলে বসবার পর ক্রোল ও সন্ডার্সের সঙ্গে ইউনিকর্ন নিয়ে কথা হল। সন্ডার্স বলল, ‘বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে হঠাৎ একটা নতুন জাতের জানোয়ার আবিষ্কার করাটা কী সাংঘাতিক ব্যাপার বল তো! আর, একটা আধটা নয়, একেবারে দলে দলে।’
ইউনিকর্ন থেকে আলোচনাটা আরো অন্য কাল্পনিক প্রাণীতে চলে গেল। সত্যি, পুরাকালে কতরকমই না উদ্ভট জীবজন’ সৃষ্টি করেছে মানুষের কল্পনা। অবিশ্যি কোনো কোনো পন্ডিত বলেন যে, এসব নিছক কল্পনা নয়। প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ যে সব প্রাণীদের দেখত, তার আবছা স্মৃতি নাকি অনেক যুগ পর্যন্ত মানুষের মনে থেকে যায়। সেই স্মৃতির সঙ্গে কল্পনা জুড়ে মানুষই আবার এই সব উদ্ভট প্রাণীর সৃষ্টি করে। এই ভাবে প্রাগৈতিহাসিক টেরোড্যাকটিল বা ঈপিয়র্নিস পাখির স্মৃতির থেকেই হয়তো সৃষ্টি হয়েছে গরম্নড় বা জটায়ু বা আরব্যোপন্যাসের সিন্দবাদ নাবিকের গল্পের অতিকায় রক পাখি- যার ছানার খাদ্য ছিল একটা আসত্ম হাতি। মিশর দেশের উপকথায় তি-বেন্নু পাখির কথা আছে, পরে ইউরোপে যার নাম হয়েছিল ফীনিক্স। এই ফীনিক্সের নাকি মৃত্যু নেই। একটা সময় আসে যখন সে নিজেই নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলে, আর পরমুহূর্তেই তার ভস্ম থেকে নতুন ফীনিক্স জন্ম নেয়। আর আছে ড্র্যাগন- যার অসি-ত্ব পূর্ব-পশ্চিম দুদিকের লোকই বিশ্বাস করত। তফাৎ এই যে পশ্চিমের ড্র্যাগন ছিল অনিষ্টকারী দানব, চীন বা তিব্বতের ড্র্যাগন ছিল মঙ্গলময় দেবতা।
এই সব আলোচনা করতে করতে আমি মার্কোভিচের কথাটা তুললাম। আমার মতে তাকে আমাদের অভিযানের আসল উদ্দেশ্যটা জানানো দরকার। চাংথাং অঞ্চলের ভয়াবহ চেহারাটাও তার কাছে পরিষ্কার করা দরকার। সেটা জেনেও যদি সে আমাদের সঙ্গে যেতে চায় তো চলুক, আর না হলে হয় সে নিজের রাসত্মা ধরম্নক, না হয় দেশে ফিরে যাক।
ক্রোল বলল, ‘ঠিক বলেছ। যে লোক আমাদের সঙ্গে ভালোভাবে মিশতে পারে না, তাকে সঙ্গে নেওয়া কী দরকার। যা বলবার এখনি বলা হোক্।’
সন্ডার্স বলল সে মার্কোভিচকে পশ্চিমের তাঁবুতে যেতে দেখেছে। আমরা তিনজনে তাঁবুর ভেতর ঢুকলাম।
মার্কোভিচ একপাশে অন্ধকারে ঘাড় গুঁজে বসে আছে। আমরা ঢুকতে সে মুখ
তুলে চাইল। সন্ডার্স ভনিতা না করে সরাসরি উইলার্ডের ডায়রি আর একশৃঙ্গের কথায় চলে গেল। তার কথার মাঝখানেই মার্কোভিচ বলে উঠল, ‘ইউনিকর্ন? ইউনিকর্ন তো আমি ঢের দেখেছি। আজকেও আসার সময় দেখলাম। তোমরা দেখনি বুঝি?’
আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলাম। মার্কোভিচ যেমন বসেছিল তেমনি বসে আছে। সে যে ঠাট্টা করে কথাটা বলেছে সেটা তার ভাব দেখে মোটেই মনে হয় না। তাহলে কি আমার ওষুধ পুরোপুরি কাজ দেয়নি? তার মাথা কি এখনো পরিষ্কার হয়নি?
ক্রোল গুনগুন করে একটা জার্মান সুর ভাঁজতে ভাঁজতে বাইরে চলে গেল। বুঝলাম সে হাল ছেড়ে দিয়েছে। এবার আমরা দুজনেও উঠে পড়লাম। বাইরে এলে পরে ক্রোল তার পাইপ ধরিয়ে বিদ্রূপের সুরে বলল, ‘এটাও কী তোমার অক্সিজেনের অভাব বলে মনে হয়?’ আমি আর সন্ডার্স দুজনেই চুপ। ‘আমরা নিঃসন্দেহে একটা পাগলকে সঙ্গে নিয়ে চলেছি’- বলে ক্রোল তার ক্যামেরা নিয়ে হাত পঞ্চাশেক দূরে একটা প্রকা- পাথরের গায়ে খোদাই করা তিব্বতী মহামন্ত্র ‘ওঁ মণিপদ্মে হুম্’-এর ছবি তুলতে চলে গেল।
মার্কোভিচ কি সত্যিই পাগল, না সাজা-পাগল? আমার মনটা খুঁৎ খুঁৎ করছে।
আমাদের মধ্যে অবিনাশবাবুই বোধহয় সবচেয়ে ভালো আছেন। প্রায় চলিস্নশ বছর ধরে ভদ্রলোককে দেখছি, ওঁর মধ্যে যে কোনো রসবোধ আছে তা আগে কল্পনাই করতে পারিনি। আমার বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্পর্কে উনি চিরকালই ঠাট্টা করে এসেছেন; আমার যুগানত্মকারী আবিষ্কারগুলোও ওঁর মনে কোনোদিন বিস্ময় বা শ্রদ্ধা জাগাতে পারেনি। কিন’ ওই যে দুবার আমার সঙ্গে বাইরে গেলেন- একবার আফ্রিকায়, আরেকবার প্রশানত্ম মহাসাগরের সেই আশ্চর্য দ্বীপে- তার পর থেকেই দেখেছি ওঁর চরিত্রে একটা বিশেষ পরিবর্তন এসেছে। ভ্রমণে মনের প্রসার বাড়ে বলে ইংরাজিতে একটা কথা আছে, সেটা অবিনাশবাবুর ড়্গেত্রে চমৎকারভাবে ফলেছে। আজ বারবার উনি আমার কানের কাছে এসে বিড়বিড় করে গেছেন- ‘কৈলাস ভূধর অতি মনোহর, কোটি শশী পরকাশ, গন্ধর্ব কিন্নর যক্ষ্ম বিদ্যাধর অপ্সরাগণের বাস।’ কৈলাস সম্বন্ধে পৌরাণিক ধারণাটা অবিনাশবাবু এখনো বিশ্বাস করে বসে আছেন। আসল কৈলাসের সাড়্গাৎ পেয়ে ভদ্রলোককে কিঞ্চিৎ হতাশ হতে হবে। আপাতত উনি কুলিদের রান্নার আয়োজন দেখতে ব্যসত্ম। বুনো ছাগলের মাংস রান্না করছে ওরা।
দূরে, বহুদূরে, আমরা যেই রাসত্মা দিয়ে যাব সেই রাসত্মা দিয়ে ঘোড়ার পিঠে একদল লোক আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। এতড়্গণ দলটাকে কতগুলো চলমান কালো বিন্দু বলে মনে হচ্ছিল। এখন তাদের চেহারাটা ক্রমে স্পষ্ট হয়ে আসছে। এদের দেখতে পেয়ে আমাদের লোকগুলোর মধ্যে একটা চাঞ্চল্য লড়্গ করছি। কারা এরা?
শীত বাড়ছে। আর বেশিড়্গণ বাইরে বসা চলবে না।
৪ঠা আগস্ট। সন্ধ্যা সাতটা
একটা বিশেষ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে গেল এই কিছুড়্গণ আগে। দূর থেকে যে দলটাকে আসতে দেখেছিলাম সেটা ছিল একটা খাম্পা দস্যুদল। এই বিশেষ দলটিই যে উইলার্ডকে আক্রমণ করেছিল তারও প্রমাণ পেয়েছি।
বাইশটা ঘোড়ার পিঠে বাইশজন লোক, তাদের প্রত্যেকের মোটা পশমের জামার কোমরে গোঁজা তলোয়ার, কুক্রি, ভোজালি, আর পিঠের সঙ্গে বাঁধা আদ্যিকালের গাদা বন্দুক। এ ছাড়া দলে আছে পাঁচটা লোমশ তিব্বতী কুকুর।
দলটা যখন প্রায় একশো গজ দূরে, তখন আমাদের দুজন লোক- রাবসাং ও টু ুপ- হনত্মদনত্ম হয়ে আমাদের কাছে এসে বলল, ‘আপনাদের সঙ্গে যা অস্ত্রশস্ত্র আছে তা তাঁবুর ভিতর থেকে বাইরে নিয়ে আসুন।’ আমি বললাম, ‘কেন, ওদের দিয়ে দিতে হবে নাকি?’ ‘না, না। বিলাতি বন্দুককে ওরা সমীহ করে চলে। না হলে ওরা সব তছনছ করে লুট করে নিয়ে যাবে। ভারী বেপরোয়া দস্যু ওরা।’
আমাদের সঙ্গে তিনটে বন্দুক- একটা এনফিল্ড ও দুটো অস্ট্রিয়ান মান্লিখার। সন্ডার্স ও ক্রোল তাঁবু থেকে টোটাসমেত বন্দুক বার করে আনল। মার্কোভিচের বেরোবার নাম নেই, আমি প্রয়োজনে পকেট থেকে আমার অ্যানাইহিলিন পিসত্মল বার করব, তাই হাত খালি রাখতে হবে, অথচ দুজনের হাতে তিনটে বন্দুক বেমানান, তাই অবিনাশবাবুকে ডেকে তার হাতে একটা মান্লিখার তুলে দেওয়া হল। ভদ্রলোক একবার মাত্র হাঁ হাঁ করে
থেমে গিয়ে কাঁপা হাতে বন্দুকটা নিয়ে দস্যুদলের উল্টো দিকে মুখ করে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।
২
দস্যুদল এসে পড়ল। ধুম্সো লোমশ তিব্বতী কুকুরগুলো আমাদের দিকে তাকিয়ে প্রচ- ঘেউ ঘেউ করছে। তাদেরও ভাবটা দস্যুদেরই মতো। আমাদের দলের লোকগুলোর অবস’া কাহিল। যে যেখানে ছিল সব জবুথবু হয়ে বসে পড়েছে। এই সব দস্যু সাধারণত যাযাবরদের আসত্মানায় গিয়ে পড়ে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে চলে যায়। উপযুক্ত অস্ত্র ছাড়া এদের বাধা দিতে যাওয়া মানে নিশ্চিত মৃত্যু। অবিশ্যি এরা যদি তিব্বতী পুলিশের হাতে পড়ে তাহলে এদের চরম শাসিত্মর ব্যবস’া আছে। গর্দান আর ডান হাতটা কেটে নিয়ে সেগুলোকে সোজা রাজধানী লাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন’ এই ধু ধু প্রানত্মরে বরফে ঢাকা গিরিবর্ত্মের আনাচে কানাচে এদের খুঁজে বের করা মোটেই সহজ নয়। এও শুনেছি যে এই সব দস্যুর নিজেদেরও নাকি নরকভোগের ভয় আছে। তাই এরা লুটপাট বা খুনখারাপি করে নিজেরাই, হয় কৈলাস প্রদড়্গিণ করে, না হয় কোনো উঁচু পাহাড়ের চূড়োয় দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে নিজেদের পাপের ফিরিসিত্ম দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করে নেয়।
দস্যুদের সামনে যে রয়েছে তাকেই মনে হল পালের গোদা। নাক থ্যাবড়া, কানে মাক্ড়ি, মাথার রম্নড়্গ চুল টুপির পাশ দিয়ে বেরিয়ে রয়েছে, বয়স বেশি না হলেও মুখের চামড়া কুঁচকে গেছে, কুৎকুতে চোখে অত্যনত্ম সন্দিগ্ধভাবে আমাদের চারজনকে নিরীড়্গণ করছে। বাকি লোকগুলো যে যেখানে ছিল সেখানেই চুপ করে ঘোড়ার লাগাম ধরে অপেড়্গা করছে; বোঝা যাচ্ছে নেতার হুকুম না পেলে কিছু করবে না।
এবারে দস্যুনেতা ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল। তারপর ক্রোলের দিকে এগিয়ে এগিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে চাপা ঘড়ঘড় গলায় বলল- ‘পেলিং?’ পেলিং মানে ইউরোপীয়। ক্রোলের হয়ে আমিই ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দিয়ে দিলাম। দিয়েই খট্কা লাগল। ইউরোপীয় দেখে চিনল কী করে এরা?
লোকটা এবার ধীরে ধীরে সন্ডার্সের দিকে এগিয়ে গেল। তারপর তার পায়ের কাছ থেকে একটা বেক্ড বীন্সের খালি টিন তুলে নিয়ে সেটাকে উল্টে পাল্টে দেখে তার গন্ধ শুঁকে আবার মাটিতে ফেরে ভারী ভারী বুটের গোঁড়ালির এক মোড়্গম চাপে সেটাকে থেঁতলে মাটির সঙ্গে সমান করে দিল। সন্ডার্স হাতে বন্দুক নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে দস্যু নেতার ঔদ্ধত্য হজম করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
কোত্থেকে জানি মাঝে মাঝে একটা দাঁড়কাকের গম্ভীর কর্কশ কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া কেবল নদীর কুলকুল শব্দ। কুকুরগুলো আর ডাকছে না। এই থম্থমের মধ্যে আবার দস্যুনেতার ভারী বুটের শব্দ পাওয়া গেল। সে এবার অবিনাশবাবুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ভদ্রলোক যে কেন তাকে মাথা হেঁট করে নমস্কার করলেন তা বোঝা গেল না। দস্যুনেতার বোধহয় ব্যাপারটা ভারী কমিক বলে মনে হল, কারণ সে সশব্দে একটা বর্বর হাসি হেসে অবিনাশবাবুর হাতের বন্দুকের বাঁটে একটা খোঁচা মারল।
এবার ক্রোলের দিকে চোখ পড়াতে সভয়ে দেখলাম সে তার বন্দুকটা দস্যুনেতার দিকে উঠিয়েছে, প্রচ- রাগে তার কপালের শিরাগুলি ফুলে উঠেছে। আমি চোখ দিয়ে ইসারা করে তাকে ধৈর্য হারাতে মানা করলাম। ইতিমধ্যে সন্ডার্স আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সে ফিস্ ফিস্ করে বলল, ‘দে হ্যাভ অ্যান এনফিল্ড টু।’
কথাটা শুনে অন্য দস্যুগুলোর দিকে চেয়ে দেখি তাদের মধ্যে একজন হিংস্র চেহারার লোক ঘোড়ার পিঠে সামনের দিকে এগিয়ে এসেছে। তার কাঁধে সত্যিই একটা এনফিল্ড রাইফ্ল। উইলার্ডের ডায়রি থেকে জেনেছি যে তার নিজের একটা এনফিল্ড ছিল। সেটা কিন’ আলমোড়ায় ফেরেনি। এই বন্দুক, আর ইউরোপীয়দের দেখে চিনতে পারা- এই
দুটো ব্যাপার থেকে বেশ বোঝা গেল যে এইদুস্যদলই উইলার্ডের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
কিন’ তাহলেও আমাদের হাত-পা বাঁধা। এরা দলে ভারী। লড়াই লাগলে হয়তো আমাদের বন্দুক আর আমার পিসত্মলের সাহায্যে এদের রীতিমতো শিড়্গা দেওয়া যেত, কিন’ সে খবর যদি অন্য খাম্পাদের কাছে গিয়ে পৌঁছায় তাহলে কি তার প্রতিরোধ না নিয়ে ছাড়বে?
লড়াইয়ের প্রয়োজন হবে কি না ভাবছি, দস্যুনেতা অসীম সাহসের সঙ্গে আমাদের পূর্বদিকের ক্যাম্পটার দিকে এগিয়ে চলেছে, এমন সময় এক অদ্ভুত কা- ঘটল। অন্য ক্যাম্পটা থেকে হঠাৎ মার্কোভিচ টলতে টলতে বেরিয়ে এলো- তার ডান হাতটা সামনের দিকে তোলা, তার তর্জনী নির্দেশ করছে দস্যুদের তিব্বতী কুকুরগুলোর দিকে।
পরমুহূর্তেই তার গলায় এক অদ্ভুত উলস্নসিত চিৎকার শোনা গেল- ‘ইউনিকর্ন! ইউনিকর্ন!’
আমরা ভালো করে ব্যাপারটা বোঝার আগেই মার্কোভিজ দুহাত বাড়িয়ে এগিয়ে গেল একটা বিশাল লোমশ ম্যাস্টিফ কুকুরের দিকে। হয়তো তাকে আক্রমণ করা হচ্ছে মনে করেই কুকুরটা হঠাৎ রম্নখে দাঁড়িয়ে একটা বিশ্রী গর্জন করে মার্কোভিচের দিকে দিল একটা লাফ।
কিন’ মার্কোভিচের নাগাল পাবার আগেই সে কুকুর ভেলকির মতো ভ্যানিশ করে গেল। এর কারণ আমার অ্যানাইহিলিন পিসত্মল। আমার ডান হাতটা অনেকড়্গণ থেকেই পকেটে পিসত্মলের উপর রাখা ছিল। মোড়্গম মুহূর্তে সে হাত পিসত্মল সমেত বেরিয়ে এসে কুকুরের দিকে তাক করে ঘোড়া টিপে দিয়েছে।
কুকুর উধাও হবার সঙ্গে সঙ্গেই মার্কোভিচ মুহ্যমান অবস’ায় মাটিতে বসে পড়ল। ক্রোল আর সন্ডার্স মিলে তাকে কোলপাঁজা করে তাঁবুর ভিতর নিয়ে গেল।
আর এদিকে এক অদ্ভুত কা-। আমার পিসত্মলের মহিমা দেখে দস্যু দলের মধ্যে এক অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া শুরম্ন হয়েছে। তারা কেউ কেউ ঘোড়া থেকে নেমে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়েছে, কেউ আবার ঘোড়ার পিঠ থেকেই বার বার গড় করার ভাব করে উপুড় হয়ে পড়ছে। দস্যুনেতাও বেগতিক দেখে ইতিমধ্যে তার ঘোড়ার পিঠে উঠে পড়েছে। বাইশজন দস্যুর সম্মিলিত বেপরোয়া ভাব এক মুহূর্তে এভাবে উবে যাবে তা ভাবতে পারিনি।
এবার আমার মাথায় এক বৃদ্ধি খেলে গেল। যে লোকটার কাছে এনফিল্ডটা ছিল তার কাছে গিয়ে বললাম, ‘হয় তোমার বন্দুক দাও, না হয় তোমাদের পুরো দলকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলব।’ সে কাঁপতে কাঁপতে তার কাঁধ থেকে বন্দুক খুলে আমার হাতে তুলে দিল। এবার বললাম, ‘এই বন্দুক যার, তার আর কী কী জিনিস তোমাদের কাছে আছে বার কর।’
এক মিনিটের মধ্যে এর ওর ঝোলা থেকে বেরিয়ে পড়ল দু টিন সসেজ, একটা গিলেট সেফটি রেজার, একটা আয়না, একটা বাইনোকুলার, একটা ছেঁড়া তিব্বতের ম্যাপ, একটা ওমেগা ঘড়ি, আর একটা চামড়ার ব্যাগ। ব্যাগ খুলে দেখি তাতে রয়েছে একটা বাইবেল, আর তিব্বত সম্বন্ধে মোরক্রফ্ট ও টিফেনটালেরের লেখা দুটো বিখ্যাত বই। বই দুটোতে উইলার্ডের নাম লেখা রয়েছে তার নিজের হাতে।
জিনিসগুলোকে বাজেয়াপ্ত করে সবে ভাবছি দস্যুনেতাকে কিছু সতর্কবাণী শুনিয়ে তাদের বিদায় নিতে বলব, কিন’ তার আগেই তাদের পুরো দলটা চড়্গের নিমেষে যে পথে এসেছিল সেই পথেই ঘোড়া ছুটিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে আবছা হয়ে আসা পাহাড়ের দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল।
আপদ বিদায় করে অবিনাশবাবুকে মানলিখারের ভারমুক্ত করে পশ্চিম দিকের তাঁবুতে গেলাম মার্কোভিচের অবস’া দেখতে। সে মাটিতে কম্বলের উপর শুয়ে আছে চোখ বুজে। মুখের উপর টর্চ ফেলতে সে ধীরে ধীরে চোখ খুলল। এইবারে তার চোখের পাতা আর মণি দেখেই বুঝতে পারলাম যে সে নেশা করেছে। আর সে নেশা সাধারণ নেশা নয়; অত্যনত্ম কড়া কোনো মাদক ব্যবহার করেছে সে। হয়তো এটা তার অনেক দিনের অভ্যাস, আর তার প্রভাবেই সে যেখানে সেখানে ইউনিকর্ন দেখতে পাচ্ছে। কোকেন, হেরয়েন, মর্ফিয়া বা ওই জাতীয় কোনো মাদক খেলে বা ইঞ্জেকশন নিলে শুধু যে শরীরের ড়্গতি করে তা নয়, তা থেকে ব্রেনের বিকার ও তার ফলে চোখে ভুল দেখা কিছুই আশ্চর্য না।
মার্কোভিচের মতো নেশাখোরকে সঙ্গে নিলে আমাদের এই অভিযান ভ ুল হয়ে যাবে। হয় তাকে তাড়াতে হবে, না হয় তার নেশাকে তাড়াতে হবে।
৫ই আগস্ট, সকাল ৭টা
কাল রাত্রে তাকে ডাকা সত্ত্বেও মার্কোভিচ যখন খেতে এল না, তখন নেশার ধারণাটা আমার মনে আরো বদ্ধমূল হল। আমি জানি এ জাতীয় ড্রাগ বা মাদক ব্যবহার করলে মানুষের ড়্গিদে-তেষ্টা অনেক কমে যায়। কথাটা বলতে সন্ডার্স একেবারে ড়্গেপে উঠল। বলল, ‘ওকে সরাসরি জেরা করতে হবে এড়্গুনি।’ ক্রোল বলল, ‘তুমি অত্যনত্ম বেশি ভদ্র, তোমাকে দিয়ে জেরা হবে না। ব্যাপারটা আমার হাতে ছেড়ে দাও।’
খাবার পরে ক্রোল সোজা তাঁবুর ভিতর গিয়ে আধঘুমনত্ম মার্কোভিচকে বিছানা থেকে হিঁচড়ে টেনে তুলে সোজা তার মুখের ওপর বলল, ‘তোমার কাছে কী ড্রাগ আছে বার কর। আমরা জানি তুমি নেশা কর। এ নেশা তোমার ছাড়তে হবে, নয়তো তোমাকে আমরা বরফের মধ্যে পুঁতে দিয়ে চলে যাব; কেউ টের পাবে না।’
মার্কোভিচ পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারল কিনা জানি না, কিন’ সে ক্রোলের ভাব দেখে যে ভয় পেয়েছে সেটা স্পষ্টই বোঝা গেল। সে কোনোরকমে ক্রোলের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ব্যাগের ভিতর হাত ঢুকিয়ে কিছুড়্গণ হাতড়ে তার থেকে একটা মাথার বুরম্নশ বার করে ক্রোলের হাতে দিল। আমার প্রথমে মনে হয়েছিল এটা তার পাগলামিরই আরেকটা লড়্গণ; কিন’ ক্রোলের জার্মান বুদ্ধি এক নিমেষে বুঝে ফেলল যে মার্কোভিচ আসল জিনিসটাই বার করে দিয়েছে। বুরম্নশের কাঠের অংশটায় চাড় দিতে সেটা বাক্সের ডালার মতো খুলে গেল, আর তার তলা থেকে বেরিয়ে পড়ল ঠিক ট্যালকাম পাউডারের মতো দেখতে মিহি সাদা কোকেনের গুঁড়ো। আধ মিনিটের মধ্যে সে গুঁড়ো তিব্বতের হিমেল বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল, আর বুরম্নশটা নিড়্গিপ্ত হল খরস্রোতা পাহাড়ি নদীর জলে।
কিন’ শুধু কোকেন দূর করলেই তো হবে না, মার্কোভিচের নেশাটাকেও দূর করা চাই। আজ সকালে তার হাবভাবে মনে হচ্ছে আমার আশ্চর্য ওষুধ মিরাকিউলের কাজ দিয়েছে। সে ইতিমধ্যেই চার গেলাস মাখন চা, সেরখানেক ছাগলের মাংস আর বেশ কিছুটা সাম্পা খেয়ে ফেলেছে।
৭ই আগস্ট, সাংচান ছাড়িয়ে
এখন দুপুর আড়াইটা। আমরা মানস সরোবরের পথে একটা গুম্ফা বা তিব্বতী মাঠের বাইরে বসে একটু বিশ্রাম করে নিচ্ছি। পথে আসতে আসতে আরো অনেক গুম্ফা দেখেছি। এগুলোর প্রত্যেকটাই একেকটা পাহাড়ের চুড়ো বেছে বেছে তার উপর তৈরি করা হয়েছে, এবং প্রত্যেকটা থেকেই চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। লামাদের সৌন্দর্যবোধ আছে একথা স্বীকার করতেই হয়।
আমাদের সামনে উত্তর দিকে ২৫০০ ফুট উঁচু গুর্লা-মান্ধাতা পর্বত সদর্পে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া চারদিকে আরো অনেক বরফে ঢাকা পাহাড়ের চুড়ো দেখতে পাচ্ছি। আর কিছুদূর গেলেই কৈলাস-মানস সরোবরের দর্শন মিলবে, অবিনাশবাবুর যাত্রা সার্থক হবে। আপাতত মান্ধাতা দেখেই তাঁর সম্ভ্রম ও বিস্ময়ের সীমা নেই। বার বার বলছেন, ‘গায়ে কাঁটা দিচ্ছে মশাই। মহাভারতের যুগে চলে এসেছি। উঃ কী ভয়ানক ব্যাপার!’
বলা বাহুল্য, এখনো পর্যনত্ম একশৃঙ্গের কোনো চিহ্ন নেই। জানোয়ারের মধ্যে বুনো ছাগল ভেড়া গাধা চমরী এসব তো হামেশাই দেখছি। মাঝে মধ্যে এক আধটা খরগোশ ও মেঠো ইঁদুরও দেখা যায়। হরিণ আর ভালুক আছে বলে জানি, কিন’ দেখিনি। কাল রাত্রে ক্যাম্পের আশপাশে নেকড়ে হানা দিচ্ছিল, তাঁবুর কাপড় ফাঁক করে টর্চ ফেলে তাদের জ্বলনত্ম সবুজ চোখ দেখতে পাচ্ছিলাম।
সন্ডার্সের মনে একটা নৈরাশ্যের ভাব দেখা দিয়েছে। ওর ধারণা হয়েছে উইলার্ডও মার্কোভিচের মতো নেশা করে আজগুবী দৃশ্য দেখেছে আর আজগুবী ঘটনার বর্ণনা করেছে। উড়নত্ম লামা, ইউনিকর্ন এরা সবই তার ড্রাগ-জনিত দৃষ্টিভ্রম। সন্ডার্স ভুলে যাচ্ছে যে আমরাআলমোড়াতে মেজর হর্টনের সঙ্গে দেখা করেছি। উইলার্ড সম্বন্ধে তার রিপোর্ট দেখেছি। তাতে ড্রাগের কোনো ইঙ্গিত
ছিল না।
আমরা যে গুম্ফার সামনে বসেছি তাতে একটি মাত্র লামা বাস করেন। আমরা এই কিছুড়্গণ আগে তার সঙ্গে দেখা করে এক অভিনব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে এসেছি। এমনিতে হয়তো যেতাম না, কিন’ রাবসাং যখন বলল লামাটি পঞ্চাশ বছর কারম্নর সঙ্গে কথা বলেননি, তখন স্বভাবতই আমাদের একটা কৌতূহল হল। আমরা রাসত্মা থেকে দুশো ফুট উপরে উঠে মৌনী লামাকে দর্শন করার জন্য গুম্ফায় প্রবেশ করলাম।
পাথরের তৈরি প্রাচীন গুম্ফার ভিতরে অন্ধকার দেয়ালে শেওলা। আসল কড়্গের ভিতর পিছন দিকে একটা লম্বা তাকে সাত আটটা মাঝারি আকারের বৌদ্ধ দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে, তার মধ্যে অনত্মত তিনখানা যে খাঁটি সোনার তৈরি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রদীপ জ্বলছে। এক পাশে একটা পাত্রে একতাল মাখন রাখা রয়েছে, ঘিয়ের বদলে এই মাখনই ব্যবহার হয় প্রদীপের জন্য। একদিকের দেয়ালের গায়ে তাকের ওপর থরে থরে সাজানো রয়েছে লাল কাপড়ে মোড়া প্রাচীন তিব্বতী পুঁথি। অবিনাশবাবু একটা বিশেষ জায়গায় আঙুল দেখিয়ে বললেন, ‘ভৌতিক ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে মশাই।’ চেয়ে দেখি সেখানে একটা মড়ার
খুলি রয়েছে। আমি বললাম, ‘ওটা চা খাওয়ার পাত্র।’ অবিনাশবাবুর চোখ কপালে উঠে গেল।
মৌনী লামা ছিলেন পাশের একটা ছোট্ট অন্ধকার ঘরে। ঘরের পুবের দেয়ালে একটা খুপরি জানালা, সেই জানালার পাশে বসে লামা জপযন্ত্র ঘোরাচ্ছেন। মাথা মুড়োন, শীর্ণ চেহারা, বসে থেকে থেকে হাত পাগুলো অস্বাভাবিক রকম সরম্ন হয়ে গেছে। আমরা তাঁকে একে একে অভিবাদন জানালাম, তিনি আমাদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে লাল সুতো দিয়ে আশীর্বাদ করলেন। তাঁর সামনে একটা নিচু কাঠের বেঞ্চিতে আমরা পাঁচজন বসলাম। লামা কথা বলবেন না, তাই তাকে এমন প্রশ্ন করতে হবে যার উত্তর কথা না বলে দেওয়া যায়। আমি আর সময় নষ্ট না করে সোজা আসল প্রশ্নে চলে গেলাম।
‘তিব্বতের কোথাও একশৃঙ্গ জানোয়ার আছে কি?’
লামা কয়েক মুহূর্তে হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে চেয়ে রইলেন। আমাদের পাঁচ জোড়া চোখের উৎসুক দৃষ্টি তাঁর দিকে নিবন্ধ। এইবার তিনি ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন, উপর থেকে নিচে। একবার, দুবার, তিনবার। অর্থাৎ- আছে। আমরা চাপা উৎকণ্ঠায় আড়চোখে একবার পরস্পরের দিকে চেয়ে নিলাম। কিন’ লামা যে আবার মাথা নাড়ছেন! এবার পাশাপাশি। অর্থাৎ – নেই।
এটা কি রকম হল? এর মানে কী হতে পারে? আগে ছিল, কিন’ এখন নেই? ক্রোল আমাকে ফিসফিসে গলায় বলল, ‘ কোথায় আছে জিজ্ঞেস করো।’
মার্কোভিচও দেখছি অত্যনত্ম মন দিয়ে আমাদের কথাবার্তা শুনছে। এই প্রথম সে সুস’ অবস’ায় আমাদের অভিযানের উদ্দেশ্যের
কথা শুনল।
ক্রোলের প্রসত্মাব অনুযায়ী প্রশ্নটা করাতে লামা তার শীর্ণ বাঁ হাতটা তুলে উত্তর-পশ্চিম দিকে ইঙ্গিত করলেন। আমরা তো ওই দিকে যাচ্ছি। কৈলাস ছাড়িয়ে চাংথাং অঞ্চলে! আমি এবার আরেকটা প্রশ্ন না করে পারলাম না।
‘আপনি যোগীপুরম্নষ। ভূত ভবিষ্যৎ আপনার জানা। আপনি বলুন তো আমরা এই আশ্চর্য জানোয়ার দেখতে পাব কিনা।’
লামা আবার মৃদু হেসে মাথা নাড়লেন। উপর থেকে নিচে। তিনবার।
ক্রোল রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। এবার বেশ জোরেই বলল, ‘আস্ক হিম অ্যাবাউট ফ্লাইং লামাজ।’
আমি লামার দিকে ফিরে বললাম, ‘আমি আপনাদের মহাযোগী মিলারেপার আত্মজীবনী পড়েছি। তাতে আছে তিনি মন্ত্রবলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় উড়ে যেতে পারতেন। এখনও এমন কোনো তিব্বতী যোগী আছেন কি যিনি এই আশ্চর্য ড়্গমতার অধিকারী?’
মৌনী লামার চাহনিতে যেন একটা কাঠিন্যের ভাব ফুটে উঠল। তিনি এবার বেশ দৃঢ়ভাবেই মাথাটাকে নাড়লেন। পাশাপাশি অর্থাৎ না, নেই। তারপর তিনি তাঁর ডানহাতের তর্জনীটা খাড়া করে সেই অবস’ায় পুরো হাতটাকে মাথার উপর তুলে কিছুড়্গণ ধরে ঘোরালেন। তারপর হাত নামিয়ে বাঁ হাত দিয়ে ডান হাতের উচোন তর্জনীটাকে চাপ দিয়ে নামিয়ে দিলেন। মানেটা বুঝতে কোনো অসুবিধা হল না। মিলারেপা একজনই ছিলেন। তিনি মন্ত্রবলে উড়তে পারতেন। তিনি এখন আর নেই।
গুম্ফা থেকে বেরোনোর আগে আমরা কিছু চা আর সাম্পা মৌনী লামার জন্যে রেখে এলাম। এখানকার যাত্রী ও যাযাবরদের মধ্যে যারা মৌনী লামার কথা জানে তারা এই গুম্ফার পাশ দিয়ে গেলেই লামার জন্যে কিছু না কিছু খাবার জিনিস রেখে যায়।
বাইরে এসে সন্ডার্স আর ক্রোলের মধ্যে তর্ক লেগে গেল। সন্ডার্স লামার সংকেতে আমল দিতে রাজি নয়। বলল, ‘একবার হ্যাঁ, একবার না এ আবার কী? আমার মতে হ্যাঁ-য়ে না-য়ে কাটাকাটি হয়ে কিছুই থাকে না। অর্থাৎ আমরা বৃথা সময় নষ্ট করছি।’
ক্রোল কিন’ লামার সংকেতের সম্পূর্ণ অন্য মানে করেছে। সে বলল, ‘আমার কাছে মানেটা খুব স্পষ্ট। হ্যাঁ মানে ইউনিকর্ন আছে, আর না মানে সেটা এমন জায়গায় আছে যেখানে আমাদের যেতে সে বারণ করছে। কিন’ বারণ করলেই তো আর আমরা বারণ মানছি না।
মার্কোভিচ এইবার প্রথম আমাদের কথায় যোগ দিল। সে বলল, ‘ইউনিকর্ন যদি সত্যিই পাওয়া যায়, তাহলে সেটাকে নিয়ে আমরা কী করব সেটা ভেবে দেখা হয়েছে কি?’
লোকটা কী জানতে চাইছে সেটা পরিষ্কার বোঝা গেল না। ক্রোল বলল, ‘সেটা আমরা এখনো ভেবে দেখিনি। আপাতত জানোয়ারটাকে খুঁজে বের করাই হচ্ছে
প্রধান কাজ।’
‘হুঁ’ বলে মার্কোভিচ চুপ মেরে গেল। মনে হল তার মাথায় কী যেন একটা ফন্দি খেলছে। কোকেনমুক্ত হবার পর থেকেই দেখছি তার উদ্যম অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে লামাদের সম্পর্কে তার একটা বিশেষ কৌতূহল লড়্গ করছি, যার জন্য কাল থেকে নিয়ে সাতবার সে দল ছেড়ে পাহাড়ে উঠে গুম্ফা দেখতে গেছে। কোকেনখোর কি শেষটা ধর্মজ্ঞানী হয়ে দেশে ফিরবে?
৩
৯ই আগস্ট, সকাল দশটা
আমরা এইমাত্র চুসুং-লা গিরিবর্ত্ম পেরিয়ে রাবণ হ্রদ ও তার পিছনে কৈলাসের তুষারাবৃত ডিম্বাকৃতি শিখরের সাড়্গাৎ পেলাম। এই রাবণ হ্রদের তিব্বতী নাম রাড়্গস-তাল, আর কৈলাসকে এরা বলে কাং-রিমপোচে। হ্রদটা তেমন পবিত্র কিছু নয়, কিন’ কৈলাস দেখামাত্র আমাদের কুলিরা সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করল। অবিনাশবাবু প্রথমে কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন। শেষটায় খেয়াল হওয়ামাত্র এক সঙ্গে শিবের আট দশটা নাম উচ্চারণ করে হাঁটুগেড়ে বার বার মাটিতে মাথা ঠেকাতে লাগলেন। রাবণ হ্রদের পুব দিকে মানস সরোবর। কালই পৌঁছে যাব বলে মনে হয়।
১০ই আগস্ট, দুপুর আড়াইটা
মানস সরোবরের উত্তর পশ্চিমে একটা জলকু-ের ধারে বসে আমরা বিশ্রাম করছি। আমাদের বাঁ দিকের চড়াইটা পেরিয়ে খানিকটা পথ গেলেই হ্রদের দেখা পাব।
গত এক মাসে এই প্রথম আমরা সকলে স্নান করলাম। প্রচ- গরম জল, তাতে সালফার বা গন্ধক রয়েছে। জলের ওপর ধোঁয়া আর শেওলার আবরণ। আশ্চর্য তাজা বোধ করছি স্নানটা করে।
এখন ডায়রি লিখতাম না, কিন’ একটা ঘটনা ঘটে গেছে যেটা লিখে রাখা দরকার।
আমি আর অবিনাশবাবু কু-ের পশ্চিম দিকটায় নেমেছিলাম, আর সাহেব তিনজন নেমেছিলেন দড়্গিণ দিকে। স্নান সেরে ভিজে কাপড় শুকোনোর অপেড়্গায় বসে আছি, এমন সময় ক্রোল আমার কাছে এসে গল্প করার ভান করে হাসি হাসি মুখে চাপা গলায় বলল, ‘খুব জটিল ব্যাপার’। আমি বললাম, ‘কেন, কী হয়েছে?’
‘মার্কোভিচ।’
‘ লোকটা ভ- জোচ্চোর।’
‘আবার কী করল?’ আমি জানি ক্রোল মার্কোভিচকে মোটেই পছন্দ করে না। বললাম, ‘ব্যাপারটা
খুলে বল।’
ক্রোল সেই রকম হাসি হাসি ভাব করেই বলতে লাগল, ‘একটা পাথরের পিছনে আমাদের গরম জামাগুলো খুলে আমরা জলে নেমেছিলাম। আমি একটা ডুব দিয়েই উঠে পড়ি। মার্কোভিচের কোট আমার কোটের পাশেই রাখা ছিল। ভিতরের পকেটটা দেখতে পাচ্ছিলাম। তাতে কী আছে দেখার
লোভ সামলাতে পারলাম না। তিনটে
চিঠি ছিল। ব্রিটিশ ডাকটিকিট।
প্রত্যেকটিই জন মার্কহ্যাম নামক কোনো ভদ্রলোককে লেখা।’
‘মার্কহ্যাম?’
‘মার্কহ্যাম- মার্কোভিচ। ব্যাপারটা বুঝতে পারছ কি?’
আমি বললাম, ‘ঠিকানা কী ছিল?’
‘দিলস্নীর ঠিকানা।’
জন মার্কহ্যাম… জন মার্কহ্যাম … নামটা চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কোথায় শুনেছি আগে? ঠিক কথা, বছর তিনেক আগের খবরের কাগজের একটা খবর। সোনা স্মাগল করার ব্যাপারে লোকটা ধরা পড়েছিল- জন মার্কহ্যাম। জেলও হয়েছিল। কী ভাবে যেন পালায়। একটা পুলিশকে গুলি করে মেরেছিল জন মার্কহ্যাম। লোকটা ইংরেজ। ভারতবর্ষে আছে বহুদিন। নৈনিতালে একটা হোটেল চালাত। পলাতক আসামি। এখন নাম ভাঁড়িয়ে পোল্যান্ডবাসী রাশিয়ান সেজে আমাদের সঙ্গ নিয়েছে। তিব্বত হবে তার গা ঢাকা দেবার জায়গা। কিংবা আরো অন্য কোনো কুকীর্তির মতলবে এসেছে এখানে। ভ-ই বটে। ডেঞ্জারাস লোক। ক্রোলের গোয়েন্দাগিরির প্রশংসা করতে হয়। প্রথমে ওর অন্যমনস্কভাব দেখে ও যে এতটা চতুর তা বুঝতে পারিনি। আমি ক্রোলকে মার্কহ্যামের ঘটনাটা বললাম।
ক্রোলের মুখে এখনো হাসি। সেটার প্রয়োজন এই কারণে যে মার্কোভিচ কু-ের দড়্গিণ দিক থেকে আমাদের দেখতে পাচ্ছে। তার বিষয়ে কথা হচ্ছে সেটা তাকে বুঝতে দেওয়া চলে না। ক্রোল খোশগল্পের মেজাজে একবার সশব্দে হেসে পরড়্গণেই গলা নামিয়ে বলল, ‘আমার ইচ্ছা ওকে ফেলে রেখে যাওয়া। ওর তুষার সমাধি হোক। ওটাই হবে ওর শাসিত্ম।’
প্রসত্মাবটা আমার কাছে ভালো মনে হল না। বললাম, না। ও আমাদের সঙ্গে চলুক। ওকে কোনোরকমেই জানতে দেওয়া হবে না যে ওর আসল পরিচয় আমরা জেনে ফেলেছি। আমাদের লড়্গ হবে দেশে ফিরে গিয়ে ওকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া।’
শেষ পর্যনত্ম ক্রোল আমার প্রসত্মাবে রাজি হল। সন্ডার্সকে সুযোগ বুঝে সব বলতে হবে, আর সবাই মিলে মার্কোভিচের প্রতি কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে।
১০ই আগস্ট, বিকেল সাড়ে পাঁচটা। মানস সরোবরের উপকূলে
মেঘদূতে কালিদাসের বর্ণনায় মানস সরোবরে রাজহাঁস আর পদ্মের কথা আছে। এসে অবধি রাজহাঁসের বদলে ঝাঁকে ঝাঁকে বুনো হাঁস দেখেছি, আর পদ্ম থাকলেও এখনো চোখে পড়েনি। এছাড়া আজ পর্যনত্ম মানস সরোবরের যত বর্ণনা শুনেছি বা পড়েছি, চোখের সামনে দেখে মনে হচ্ছে এ হ্রদ তার চেয়ে সহস্রগুণে বেশি সুন্দর। চারিদিকের বালি আর পাথরের রম্নড়্গতার মধ্যে এই পঁয়তালিস্নশ মাইল ব্যাসযুক্ত জলখ-ের অস্বাভাবিক উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ নীল রঙ মনে এমনই একটা ভাবের সঞ্চার করে, যার কোনো বর্ণনা দেওয়া আমার পড়্গে সম্ভব নয়। হ্রদের উত্তরে বাইশ হাজার ফুট উঁচু কৈলাস, আর দড়্গিণে প্রায় যেন জল থেকে খাড়া হয়ে ওঠা গুর্লা-মান্ধাতা। চারিদিকে পাহাড়ের গায়ে ছোট-বড় সব গুম্ফা চোখে পড়ছে, তাদের সোনায় মোড়া ছাতগুলোতে রোদ পড়ে ঝিকমিক করছে।
আমরা ক্যাম্প ফেলেছি জল থেকে বিশ হাত দূরে। এখানে আরো অনেক তীর্থযাত্রী ও লামাদের দেখতে পাচ্ছি। তাদের কেউ কেউ হামাগুড়ি দিয়ে হ্রদ প্রদড়্গিণ করছে, কেউ হাতে প্রেয়ার হুইল বা জপযন্ত্র ঘোরাতে ঘোরাতে পায়ে হেঁটে প্রদড়্গিণ করছে। হিন্দু বৌদ্ধ দুই ধর্মাবলম্বী লোকের কাছেই কৈলাস-মানস সরোবরের অসীম মাহাত্ম্য। ভূগোলের দিক দিয়ে এই জায়গার বিশেষত্ব হল এই যে, এক সঙ্গে চারটে বিখ্যাত নদীর উৎস রয়েছে এরই আশেপাশে। এই নদীগুলো হল ব্রহ্মপুত্র, শতদ্রম্ন, সিন্ধু ও কর্ণালী।
অবিনাশবাবু এখানে এসেই বালির ওপর শুয়ে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম তো করলেনই, তারপর আমাদের সঙ্গী সাহেবদেরও ‘সেক্রেড, সেক্রেড- মোর সেক্রেড দ্যান কাউ’ ইত্যাদি বলে গড় করিয়ে ছাড়লেন। তারপরে যেটা করলেন সেটা অবিশ্যি বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি। হ্রদের ধারে গিয়ে গায়ের ভারী পশমের কোটটা খুলে ফেলে দুহাত জোড় করে এক লাফে ঝপাং করে জলের মধ্যে গিয়ে পড়লেন। পরমুহূর্তেই দেখি তাঁর দাঁত কপাটি লেগে গেছে। ক্রোল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তৎড়্গণাৎ জলে নেমে ভদ্রলোককে টেনে তুলল। তারপর তাঁকে ব্র্যান্ডি খাইয়ে তাঁর শরীর গরম করল। আসলে মানস সরোবরের মতো এমন কনকনে ঠা-া জল ভারতবর্ষের কোনো নদী বা হ্রদে নেই। অবিনাশবাবু
ভুলে গেছেন যে এখানকার উচ্চতা পনের হাজার ফুট।
ভদ্রলোক এখন দিব্যি চাঙ্গা। বলছেন, ওর বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের গাঁটে নাকি ছাব্বিশ বছর ধরে একটা ব্যথা ছিল, সেটা এই এক ঝাঁপানিতেই বেমালুম সেরে গেছে। দুটো হর্লিকসের খালি বোতলে ভদ্রলোক হ্রদের পবিত্র জল নিয়ে নিয়েছেন, সেই জলের ছিটে দিয়ে আমাদের যাবতীয় বিপদ-আপদ দূর করার মতলব করেছেন।
এই অঞ্চলেই গিয়ানিমাতে একটা বড় হাট বসে। আমরা সেখান থেকে কিছু খাবার জিনিস, কিছু শুকনো ফল, ঠা-ায় জমে যাওয়া পাথরের মতো শক্ত চমরীর দুধ আর পশমের তৈরি কিছু কম্বল ও পোশাক কিনে নিয়েছি। ক্রোল দেখি একরাশ মানুষের হাড়গোড় কিনে এনেছে, তার মধ্যে একটা পায়ের হাড় বাঁশির মতো বাজানো যায়। এসব নাকি তার জাদুবিদ্যার গবেষণা কাজে লাগবে। মার্কোভিচ গিয়ানিমার বাজারে কিছুড়্গণের জন্য দলছাড়া হয়ে গিয়েছিল। দশ মিনিট হল সে ফিরেছে। থলিতে করে কী এনেছে বোঝা গেল না। সন্ডার্সের নৈরাশ্য অনেকটা কমেছে। সে বুঝেছে যে এক শৃঙ্গের দেখা না পেলেও, মানস সরোবরের এই পার্থিব সৌন্দর্য আর এই নির্মল আবহাওয়া এও কিছু কম পাওয়া নয়।
কাল আমরা সরোবর ছেড়ে চাং-থাং-এর উদ্দেশে যাত্রা শুরম্ন করব। আমাদের লড়্গ্য হবে ল্যাটিচিউট ৩৩.৩ নর্থ ও লঙ্গিচিউড ৮৪ ইস্ট।
অবিনাশবাবু তাঁর পকেট-গীতা খুলে কৈলাসের দিকে মুখ করে পিঠে রোদ নিয়ে বসে আছেন। এইবার বোঝা যাবে তাঁর ভক্তির দৌড় কতদূর।
১২ই আগস্ট । চাং থাং। ল্যা. ৩০
ন-লং ৮১ ই
সকাল সাড়ে আটটা। আমরা একটা ছোট লেকের ধারে ক্যাম্প ফেলেছি। কাল রাত্রে এক অদ্ভুত ঘটনা। বারোটার সময় মাইনাস পনের ডিগ্রি শীতে ক্রোল আমার ক্যাম্পে এসে আমার ঘুম ভাঙিয়ে বলল, সে মার্কোভিচের জিনিসপ্রত্র ঘেঁটে অনেক কিছু পেয়েছে। আমি তো অবাক। বললাম, ‘তার জিনিস ঘাঁটলে ? সে টের পেল না?’
‘পাবে কী করে?- কাল সন্ধেবেলা যে ওর চায়ের সঙ্গে বারবিটুরেট মিশিয়ে দিয়েছিলাম। হাত-সাফাই কি আর অমনি অমনি শিখেছি? ও এখানো নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে।’
‘কী জিনিস পেলে?’
‘চলো না দেখবে।’
গায়ে একটা মোটা কম্বল চাপিয়ে আমাদের ক্যাম্প ছেড়ে ওদেরটায় গিয়ে ঢুকলাম। ঢুকতেই একটা তীব্র আধ-চেনা গন্ধ নাকে এল। বললাম, ‘এ কিসের গন্ধ?’
ক্রোল বলল, ‘এই তো-এই টিনের মধ্যে কী জানি রয়েছে।’ টিনের কৌটোটা হাতে নিয়ে ঢাকনা খুলতেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম।
‘এ যে কস’রী!’-ধরা গলায় বললাম আমি।
কস’রীই বটে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিব্বতে কস’রীমৃগ বা সঁংশফববৎ পাওয়া যায়। সারা পৃথিবী থেকেই প্রায় লোপ পেতে বসেছে এই জানোয়ার। একটা মাঝারি কুকুরের সাইজের হরিণ, তার পেটের ভিতর পাওয়া যায় কসত্মরী নামক এই আশ্চর্য জিনিস। এটার প্রয়োজন হয় গন্ধদ্রব্য বা পারফিউমতৈরির কাজে। এক তোলা কস’রীর দাম হল প্রায় ত্রিশ টাকা। আসবার পথে ভারতবর্ষ ও তিব্বতের সীমানায় আসকোট শহরে এক ব্যবসাদারের কাছে জেনেছিলাম যে, তিনি একাই সরকারি লাইসেন্সের গত বছরে প্রায় চার লাখ টাকার কস’রী বিদেশে রপ্তানি করেছেন। আমি বললাম, ‘এই কস’রী কি গিয়ানিমার হাটে কিনেছে নাকি মার্কোভিচ?’
‘কিনেছে?’
প্রশ্নটা করল সন্ডার্স; তার কথায় তিক্ত ব্যঙ্গের সুর। ‘এই দেখ না এগুলো কি সব
ওর কেনা?’
সন্ডার্স একটা ঝোলা ফাঁক করে একরাশ কালো চমরীর লোমের ভিতর থেকে পাঁচটা বৌদ্ধ দেবদেবীর মূর্তি বার করল। সেগুলোর সাইজ এক বিঘতের বেশি না, কিন’ প্রত্যেকটি মূর্তি সোনার তৈরি। এছাড়া আরো মূল্যবান জিনিস ঝোলায় ছিল একটা পাথর বসানো সোনার বজ্র, একটা সোনার পাত্র, খান ত্রিশেক আলগা পাথর ইত্যাদি।
‘উই হ্যাভ এ রিয়েল রবার ইন আওয়ার মিডস্ট’, বলল সন্ডার্স। ‘শুধু খামপারাই দস্যু নয়, ইনিও একটি জলজ্যানত্ম দস্যু। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি এ কস’রী সে গিয়ানিমার বাজার থেকে চুরি করে এনেছে, যেমন এই মূর্তিগুলো চুরি করেছে গুম্ফা থেকে।’
এখন বুঝতে পারলাম মার্কোভিচ কেন আমাদের দল ছেড়ে বার বার গুম্ফা দেখতে চলে যায়। লোকটার বেপরোয়া সাহসের কথা ভাবলে অবাক হতে হয়।
আজ মার্কোভিচের ভাব দেখে মনে হল যে কালকের ঘটনা কিছু টের পায়নি। তার জিনিসপত্র যেভাবে ছিল আবার ঠিক সেইভাবেই রেখে আমরা ঘুমোতে চলে যাই। যাবার আগে এটাও দেখেছিলাম যে, মার্কোভিচের সঙ্গে একটি অস্ত্রও আছে- একটা ৪৫ কোল্ট অটোম্যাটিক রিভলবার। এটার কথা মার্কোভিচ আমাদের বলেনি। সে রিভলবার অবিশ্যি তার আর কোনো কাজে লাগবে না, কারণ ক্রোল তার টোটাগুলি সযত্নে সরিয়ে ফেলেছে।
১৫ই আগস্ট। চাং থাং-ল্যা. ৩২.৫ ন, লং ৮২ই। বিকেল সাড়ে চারটা
চাং থাং অঞ্চলের ভয়াবহ চেহারাটা ক্রমে আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে আসছে। এই জায়গার উচ্চতা সাড়ে ষোল হাজার ফুট। আমরা এখন একটা অসমতল জায়গায় এসে পড়েছি। মাঝে মাঝে ৪০০/৫০০ ফুট উঠতে হচ্ছে, তারপর একটা গিরিবর্ত্মের মধ্যে দিয়ে গিয়ে আবার নামতে হচ্ছে।
কাল সকাল থেকে একটি গাছ, একটি তৃণও চোখে পড়েনি। যেদিকে দেখছি খালি বালি পাথর আর বরফ। তিব্বতীরা কিন’ এসব অঞ্চলেও পাথরের গায়ে তাদের মহামন্ত্র ‘ওঁ মণিপদ্মে হুম’ খোদাই করে রেখেছে। গুম্ফার সংখ্যা ক্রমে কমে আসছে, তবে মাঝে মাঝে এক একটা সত্মূপ বা চর্টেন দেখা যায়।
বসতি একেবারেই নেই।
পরশু একটা যাযাবরদের আসত্মানায় গিয়ে পড়েছিলাম। প্রায় শ’পাঁচেক মহিলা পুরম্নষ তাদের কাচ্চা বাচ্চা ছাগল ভেড়া গাধা চমরী নিয়ে অনেকখানি জায়গা জুড়ে পশমের তাঁবু খাটিয়ে বসতি গেড়েছে। লোকগুলো ভারী আমুদে, মুখে হাসি ছাড়া কথা নেই, এই ভ্রাম্যমাণ শিকড়হীন অবস’াতেও দিব্যি আছে বলে মনে হয়। এদের দু-একজনকে একশৃঙ্গ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে কোনো ফল হল না।
আমরা আরো উত্তরের দিকে যাচ্ছি শুনে এরা বেশ জোর দিয়ে বারণ করল। বলল, উত্তরে ডুংলুং-ডো আছে। সেটা পেরিয়ে যাওয়া নাকি মানুষের অসাধ্য। ডুংলং-ডো কী জিজ্ঞেস করাতে যা বর্ণনা দিল তাতে বুঝলাম সেটা অনেকখানি জায়গা জুড়ে একটা দুর্লঙ্ঘ প্রাচীর। তার পিছনে কী আছে কেউ জানে না। এই প্রাচীর এরা কেউই দেখেনি, কিন’ বহুকাল থেকেই নাকি তিব্বতীরা এর কথা জানে। আদ্যিকালে কোনো কোনো লামা নাকি সেখানে গেছে, কিন’ গত তিনশো বছরের মধ্যে কেউ যায়নি।
মৌনী লামার হেঁয়ালি কথাতেও যখন আমরা নিরম্নদ্যম হইনি, তখন যাযাবরদের বারণ আমরা মানব কেন? চার্লস উইলার্ডের ডায়রি রয়েছে আমাদের কাছে। তার কথার উপর ভরসা রেখেই আমাদের চলতে হবে।
১৮ই আগস্ট । চাং থাং-ল্যা. ৩২ন,
লং ৮২.৮ ই
একটা লেকের ধারে ক্যাম্পের ভিতর বসে ডায়রি লিখছি। আজ এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। একটা প্রায় সমতল উপত্যকা দিয়ে হেঁটে চলেছি, আকাশে ঘন কালো মেঘ, মনে হচ্ছে ঝড় উঠবে, এমন সময় সন্ডার্স চেঁচিয়ে উঠল ‘ওগুলো কী?’
সামনে বেশকিছু দূরে যেখানে জমিটা খানিকটা উপর দিকে উঠছে, তার ঠিক সামনে কালো কালো অনেকগুলো কী যেন দাঁড়িয়ে আছে। জানোয়ারের পাল বলেই তো মনে হচ্ছে। রাবসাংকে জিজ্ঞেস করতে সে সঠিক কিছু বলতে পারল না। ক্রোল অসহিষ্ণুভাবে বলল, ‘তোমার অমনিস্কোপে চোখ লাগাও।’
অমনিস্কোপ দিয়ে দেখে মনে হল সেগুলো জানোয়ার, তবে কী জানোয়ার, কেন ওভাবে দাঁড়িয়ে আছে কিছুই বোঝা গেল না। ‘শিং আছে কি?’ কোল জিজ্ঞেস করল। সে ছেলেমানুষের মতো ব্যসত্ম হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে বলতে হল যে শিং আছে কি নেই তা বোঝা যাচ্ছে না।
কাছে গিয়ে ব্যাপার বুঝে সত্মম্ভিত হয়ে গেলাম। একটা বুনো গাধার পাল, সংখ্যায় প্রায় চলিস্নশটা হবে, সব ক’টা মরে শুকিয়ে কাঠ হয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে আছে। রাবসাং এইবার ব্যাপারটা বুঝেছে। বলল, শীতকালে বরফের ঝড়ে সেগুলো মরেছে। তারপর গরমকালে বরফ গলে গিয়ে মৃতদেহগুলো সেই দাঁড়ানো অবস’াতেই আবার বেরিয়ে পড়েছে।
আমাদের খাবারের স্টক কমে আসছে। যাযাবরদের কাছ থেকে ভারতীয় টাকার বিনিময়ে কিছু চা আর মাখন কিনে নিয়েছিলাম, সেটা এখনো চলবে কিছুদিন। মাংসে আমাদের সকলেরই অরম্নচি ধরে গেছে। শাক সবজি গম ইত্যাদি ফুরিয়ে এসেছে। এর মধ্যে আমার তৈরি ড়্গুধাতৃষ্ণানাশক বটিকা ইন্ডিকা খেতে হয়েছে সকলকেই। আর কিছুদিন পরে ওই বড়ি ছাড়া আর কিছুই খাবার থাকবে না। ক্রোল মেক্সিকো থেকে আরম্ভ করে বোর্নিও পর্যনত্ম এগারটা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকম ম্যাজিক প্রয়োগ করে গুনে বার করতে চেষ্টা করছে আমাদের কপালে একশৃঙ্গ দেখার সৌভাগ্য হবে কিনা। পাঁচটা ম্যাজিক বলছে না, ছ’টা বলছে হ্যাঁ।
আমরা যেখানে ক্যাম্প ফেলেছি তার উত্তরে অর্থাৎ আমরা যেদিকে যাব সেই দিকে প্রায় ৩০/৪০ মাইল দূরে একটা অংশ দেখে মনে হচ্ছে সেখানে জমিটা যেন একটা সিঁড়ির ধাপের মতো উপর দিকে গেছে। অমনিস্কোপ দিয়ে দেখে সেটাকে একটা টেবল মাউন্টেনের মতো মনে হচ্ছে। এটাই কি ডুংলুং ডো? উইলার্ড তার ডায়রিতে যে জায়গার অবস’ানের কথা উলেস্নখ করেছে আমরা তার খুবই কাছে এসে পড়েছি।
কিন’ উইলার্ড যাকে ‘এ ওয়ান্ডারফুল মনাস্ট্রি’ বলেছে সেই থোকচুম-গুম্ফা কোথায়? আর দুশো বছরের উড়নত্ম লামাই বা কোথায়?
আর ইউনিকর্নই বা কোথায়?
বেঁচে থাকো সর্দি-কাশি - সৈয়দ মুজতবা আলী
June 01, 2017 roddur
ভয়ঙ্কর সর্দি হয়েছে। নাক দিয়ে যা জল বেরম্নচ্ছে তা সামলানো রম্নমালের কর্ম নয়। ডবল সাইজ বিছানার চাদর নিয়ে আগুনের কাছে বসেছি। হাঁচছি আর নাক ঝাড়ছি, নাক ঝাড়ছি আর হাঁচছি। বিছানার চাদরের অর্ধেকখানা হয়ে এসেছে, এখন বেছে বেছে শুকনো জায়গা বের করতে হচ্ছে। শীতের দেশ, দোর জানালা বন্ধ, কিচ্ছু খোলার উপায় নেই। জানলা খুললে মনে হয় গৌরীশঙ্করের চূড়োটি যেন হিমালয় ত্যাগ করে আমার ঘরে নাক গলাবার তালে আছেন।
জানি, একই রম্নমালে বারবার নাক ঝাড়লে সর্দি বেড়েই চলে, কিন’ উপায় কি? দেশে হলে রকে বসে বাইরে গলা বাড়িয়ে দিয়ে সশব্দে নাক ঝাড়তুম, এ নোংরামির হাত থেকে রক্ষা তো পেতুমই, নাকটাও কাপড়ের ঘষায় ছড়ে যেতো না।
হঠাৎ মনে পড়ল পরশু দিন এক ডাক্তারের সঙ্গে অপেরাতে আলাপ হয়েছে। ডাকসাঁইটে ডাক্তার- ম্যুনিক শহরে নাম করতে পারাটা চাট্টিখানি কথা নয়। যদিও জানি ডাক্তার করবে কচু, কারণ জর্মন ভাষাতেই প্রবাদ আছে ওষুধ খেলে সর্দি সারে সাত দিনে, না খেলে এক সপ্তায়।
Subscribe to:
Posts (Atom)