সত্য হবে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী!
পাঁচ শ বছর আগে শিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি যখন আকাশে ওড়ার যন্ত্রের ছবি এঁকেছিলেন, তখন এটি আজকালকার বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতোই ছিল। এখনকার খুব অগ্রসর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীকে যেমন অবাস্তব আর অসম্ভব মনে হয়, তখনো নিশ্চয়ই আকাশে ওড়ার বিষয়টি সত্য হবে, তা কেউ ভাবেনি। সেদিনকার সেই অসম্ভব আজ সত্য হয়েছে। কে জানে, অনেক বছর পর আজকের এই অবাস্তব কল্পকাহিনী হয়তো বদলে যাবে কোনো ঘটমান বাস্তবে।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী যে শুধু বিনোদন-উপকরণ, তা কিন্তু নয়। এগুলো মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে সাহস জোগায়; জোগায় চিন্তার খোরাক। অ্যালিয়েন কিংবা মানুষের মতো বুদ্ধিমান রোবট সামনে এসে দাঁড়ালে পৃথিবীর মানুষ হয়তো আজ আর অতটা অবাক হবে না। মানুষের মতো রোবট থাকতে পারে, এটা যেন সবাই মেনেই নিয়েছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী আর এ ধরনের গল্পভিত্তিক চলচ্চিত্রের কল্যাণে এ প্রজন্েনর শিশুদের ঘুম ভাঙে মঙ্গল গ্রহের হ্রদে হাঁটা কিংবা বুধের জঙ্গলে দৌড়ঝাঁপের স্বপ্ন দেখে। এটাকেও নতুন যুগের সুচনা বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে প্রশ্ন একটাই, আজ আমরা যা অসম্ভব মেনেই কল্পনা করছি, তা একদিন সত্য হবে কি না। আর সত্য হলেও সেটা কেমন হবে আমাদের জন্য? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সম্প্রতি বিবিসি ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় চারজন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর লেখকের কাছে গিয়েছিল। লেখক কেন ম্যাকলিয়ডের একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বইয়ের শুরুই এমন: একটি রোবট বলছে, ‘বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী এখন বিজ্ঞানের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।’ ম্যাকলিয়ড সব সময় বিশ্বাস করেন, বিজ্ঞানের কল্যাণে আজকের কল্পকাহিনী অবশ্যই বাস্তবতার মুখ দেখবে। বিজ্ঞান বর্তমান গতিতে চলতে থাকলে সেটা হতে খুব বেশি দেরিও হবে না। তিনি বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হচ্ছে আমাদের সাহিত্যের একমাত্র জায়গা, যেখান থেকে নিজেদের এগিয়ে নেওয়ার খোরাক পাওয়া যায়; ঘরে এসে ভাবার ফুরসত তৈরি হয়। তবে এ জন্য তথ্য উপস্থাপনায় বিজ্ঞানমনস্কতা ও বৈজ্ঞানিক যুক্তির সঠিক উপস্থাপন থাকতে হবে। আমরা যদি অসম্ভবকে কল্পনা করতে জানি, তাহলে অ্যালিয়েন কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মেনে নিতে খুব একটা কঠিন হবে না। তবে এ যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যে গতিতে এগোচ্ছে, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী সে গতি ধরতে পারছে না। এখানটাতে আমাদের মতো লেখকদের আরও দক্ষতার সঙ্গে এগোতে হবে।’
পল কর্নেল মনে করেন, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী একটা ঘটনা শুরু করে দেয়। আর তাকে বাস্তবে দেখান বিজ্ঞানীরা। এখন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী অনেকটাই সত্য হতে যাচ্ছে। এতে তেমন গোঁজামিল দেওয়া হয় না। কাহিনীর কোনো একটা অংশকে ‘যদি এমন হয়’ ধরে নিয়ে বাকি ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা দেখানো হয়। এটাও বিজ্ঞান।
ইয়েন ব্যাংকস মনে করেন, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীও বিজ্ঞানের একটি শাখা। বিজ্ঞান যেমন একটা গতিতে চলে, এটাও আলাদা গতিতে চলে। এই গতি ধরে রাখার জন্য লেখকদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। এই কল্পকাহিনীগুলো সত্য হবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে ব্যাংকস বলেন, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলোয় আসলে আসন্ন ভবিষ্যৎই তুলে ধরা হয়।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর আরেক জনপ্রিয় লেখক ইয়ান ওয়াটসন মনে করেন, যাঁরা এ ধরনের ঘটনা লেখেন, তাঁরা ভবিষ্যৎ দেখতে পারেন। এ কাহিনীগুলো মূলত কিছুই না, আজ বসে ভবিষ্যৎকে দেখামাত্র। টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর লেখকদের ডেকেছিল পরবর্তী সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে ধারণা নিতে। তবে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী সত্য হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি, যত বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে এ কাহিনীকে সাজানো হয়।
0 comments:
Post a Comment