কথার কথা (আনিসুল হক)
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’ বহুদিন আগে জীবনানন্দ দাশের মা কবি কুসুমকুমারী দাশ এই কবিতা লিখেছিলেন। তাঁর লেখার ধরনটা ছিল বড় মজার। রান্না করছিলেন হয়তো। তাঁদেরই ব্রাਜ਼সমাজ পত্রিকার সম্পাদক এসে বললেন, লেখা দিতে হবে। তরকারিতে হলুদ ছিটিয়ে দিতে দিতে কোলে খাতা মেলে ধরলেন। তরকারি রান্না হওয়ার আগেই কবিতার পরিবেশন শেষ। তবে কবিতাটিতে তিনি লিখেছিলেন লাখ কথার এক কথা। বুঝেছিলেন, বাঙালি মাত্রই কথায় পটু, কাজে তেমন নয়। কথাই শুধু বলে গেলাম আমরা। দেশটা কেন পিছিয়ে−এ নিয়ে কত কথা যে আমরা বললাম! যার কাছে যাবেন, তার কাছেই সমস্যার সমাধান আছে। কত কথা যে তিনি আমাদের বলতে পারবেন! আর যে বিষয়ে যে কম জানে, সেই বিষয়ে সে বলতে পারে সবচেয়ে বেশি, সবচেয়ে ভালো।
আগে তো কথা হতো শুধু সামনাসামনি, মুখে মুখে; এখন কথা হচ্ছে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা। হ্যাঁ, মোবাইল ফোনে তো বটেই, ওরা তো স্েলাগানই দিয়ে রেখেছে−ওরে, কত কথা বলে রে! আরও আছে টেলিভিশন। শোর নামই টক শো। নেন, কথা বলেন। চলছে কথা। খালি কথা। ইস, কথার ওপর যদি ট্যাক্স নেওয়া যেত!
বলছে বলুক। অন্তত একটা গর্ব আমরা করতে পারি, আমাদের বাকস্বাধীনতা আছে। তাই আমরা বলেই চলেছি। বলার সময় কম বলি না। আমাদের প্রতিটি জনসভা ‘ঐতিহাসিক’। আমাদের প্রতিটি কর্মসুচি ‘স্নরণকালের বৃহত্তম’। আমাদের প্রতিটি স্থাপনা ‘এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সেরা’।
সবকিছুতে আমাদের হারানো যাবে, কথায় যাবে না।
এবার বোধহয় আমাদের কথাগুলোকে কাজেও পরিণত করতে হবে। হবে তো বটে, কিন্তু করবে কে? আমি করব না। আপনি করুন।
আগে তো কথা হতো শুধু সামনাসামনি, মুখে মুখে; এখন কথা হচ্ছে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা। হ্যাঁ, মোবাইল ফোনে তো বটেই, ওরা তো স্েলাগানই দিয়ে রেখেছে−ওরে, কত কথা বলে রে! আরও আছে টেলিভিশন। শোর নামই টক শো। নেন, কথা বলেন। চলছে কথা। খালি কথা। ইস, কথার ওপর যদি ট্যাক্স নেওয়া যেত!
বলছে বলুক। অন্তত একটা গর্ব আমরা করতে পারি, আমাদের বাকস্বাধীনতা আছে। তাই আমরা বলেই চলেছি। বলার সময় কম বলি না। আমাদের প্রতিটি জনসভা ‘ঐতিহাসিক’। আমাদের প্রতিটি কর্মসুচি ‘স্নরণকালের বৃহত্তম’। আমাদের প্রতিটি স্থাপনা ‘এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সেরা’।
সবকিছুতে আমাদের হারানো যাবে, কথায় যাবে না।
এবার বোধহয় আমাদের কথাগুলোকে কাজেও পরিণত করতে হবে। হবে তো বটে, কিন্তু করবে কে? আমি করব না। আপনি করুন।
0 comments:
Post a Comment