এইজ অফ ইউরোপিয়ান ডিসকভারি - ১
#১৮২৪
মিশরের ফারাও দ্বিতীয় রামসিসের কফিন যেদিন প্রথম খোলা হয়,সেদিন তার মমির ভেতর দুটো অদ্ভুত জিনিস পাওয়া যায়।এই দুটো জিনিসের সেখানে থাকার কথা ছিল না।
জিনিস দুটো হল তামাক আর কোকোয়া।
আজ থেকে সাড়ে পাচশো বছর আগে ইউরেশিয়া বা আফ্রিকার কোথাও এই দুটো জিনিস ছিল না।তাহলে এই দুটো জিনিস সাড়ে তেত্রিশ শো বছর আগে মিশরে গেল কিভাবে??
¥ ¥ ¥
সাড়ে তিন হাজার বছর পুরানো এক সভ্যতা ছিল মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অংশে।নাম ওলেমাক।
এই সভ্যতার বাসিন্দাদের নাক অদ্ভুত রকম থ্যাবড়া,দাতের সামনের পাটি উচু,কপালটাও উচু থেকে ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে গেছে,অনেকটাই আফ্রিকানদের মত।
কিন্তু সাড়ে তিন হাজার বছর আগে কোন আফ্রিকান লোক সেখানে গেছে বলে জানা যায় নাই।অন্তত লিখিত কোন প্রমান নাই।
মেক্সিকোতে জিনোনি নামে একটা ট্রাইব আছে।এদের জেনেটিক প্রোফাইল টেস্ট করে পিউর জাপানিজ বেশ কিছু জিন পাওয়া গেছে।জিনোনিরা মেক্সিকান অন্যান্য ট্রাইব থেকে সম্পুর্ন আলাদা,তাদের চাল চলন ও আচার আচরনই শুধু নয়,আকার আকৃতিতেও।
¥ ¥ ¥
১৮৮২ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার দক্ষিণ পশ্চিমে একটা খাল খননের সময় শ্রমিকেরা ২৫টি মুদ্রার সন্ধান পায়,মুদ্রার গায়ে লেখা হিজিবিজি ভাষা পড়ার ক্ষমতা তাদের ছিল না।
একটু একটু করে সেই খবর পোছাল খনন কারীদের সাথে থাকা প্রত্নতাত্ত্বিক
ের কাছে।
তিন বছর পর জানা গেল এগুলো চীনা রাজবংশ শাঙ ডাইন্যাস্টির সম্রাট হুঙেটির মুদ্রা।
সম্রাট হুঙেটির রাজত্বকাল ছিল কবে শুনলে আশ্চর্য হতে হয়।
খ্রিস্টপুর্ব ২৬০০অব্দে,আইমিন আজ থেকে ৪৬০০ বছর আগে,যখন গিজাতে ফারাও খুফু পিরামিড বানাচ্ছিলেন,তখনকার কথা।
¥ ¥ ¥
মানুষ কখনই এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকার মত সুশীল প্রাণী ছিল না।
পৃথিবীর বুকে পা রাখার পর থেকেই সে ঘুরে বেড়িয়েছে এখান থেকে ওখানে,বারবার চিনতে চেয়েছে অজানাকে।
আফ্রিকা বা আরব উপদ্বীপের কাছাকাছি কোথাও থেকে মানুষের ওই যাত্রার শুরু বলে বিজ্ঞানীরা ধারনা করে থাকেন।
সভ্য হবার পর প্রত্যেক সভ্যতাই চেষ্টা করেছে নিজেদের সভ্যতার কথা পৃথিবীর অন্যান্য অংশে নিয়ে যেতে।
আমেরিকা আবিষ্কারের যে গল্প এখন আমাদের শোনানো হয় তা কোনভাবেই আমেরিকা অবিষ্কারের প্রথম গল্প না।সেই গল্পটা বড়জোর প্রথমবারের মত আমেরিকাকে কলোনী বানানোর গল্প।
তার আগে বহুবার দুঃসাহসী মানুষেরা আমেরিকায় গেছেন।
নতুন পৃথিবী আবিষ্কারের এই রেসে সম্ভবত পাইওনিয়ার ছিল চাইনিজরা।
চাইনিজরা এখন পর্যন্ত দাবি করছে মিং ডাইন্যাস্টির অ্যাডমিরাল ঝেং হোর কথা,কিন্তু ঝেং হো আমেরিকাতে পৌছেছেন তার কোন প্রমান সরাসরি দেয়া সম্ভব হয় নাই।
ঝেং হো একজন মুসলিম ছিলেন।
তার আগেও মুসলিমরা বারবার চেষ্টা করেছে অসীম আটলান্টিক পাড়ি দিতে।এদের মধ্যে একজনের নাম ইতিহাসে পাওয়া যায়,নাম খাসখাস ইবনে সাইদ ইবনে আসওয়াদ,তার সম্পর্কে আল মাসউদী নবম শতাব্দীতে লিখেছেন তিনি আটলান্টিক পেরিয়ে ওপারে গিয়েছিলেন এবং তারপর,সেই দেশ থেকে জাহাজ বোঝাই করে প্রচুর ধনসম্পদ নিয়ে এসেছিলেন।আল মাসউদী এই কথা লিখেছেন ৮৮৯ সালে,তার বই মুরুয আদ দ্বোয়াহাব ওয়াল মাদিন আল জাওহারে,কর্দোবার খলিফা আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদের আমলে।
এই দুজনের মাঝখানে চাপা পড়ে গেছে পৃথিবীর সবচাইতে বড় অ্যাডভেন্ঞারার সম্রাঠের কথা।
মালি সাম্রাজ্যের নাম যারা শুনেছেন তারা অবশ্যই জানেন ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতাব্দীতে পৃথিবীর সবচাইতে সমৃদ্ধ সাম্রাজ্য ছিল মালি সাম্রাজ্য।পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে সম্পদশালী ব্যক্তি বলা হয় এই সাম্রাজ্যের সম্রাট মানসা মুসাকে।
মানসা মুসার চাচা দ্বিতীয় আবুবকর এতই অ্যাডভেন্ঞার প্রিয় ছিলেন যে তিনি একবার সিদ্ধান্ত নেন তিনি আটলান্টিক মহাসাগর কোথায় শেষ তা দেখে ছাড়বেন।
এই সিদ্ধান্ত ঠিক রাখতে গিয়ে তিনি নিজের সিংহাসন ছেড়ে চারশো জাহাজের এক বহর নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পশ্চিম আফ্রিকা উপকূল থেকে সোজা পশ্চিমে,সাত বছর পর তিনি ফিরে আসেন,চারশো জাহাজের মধ্যে কেবল একটি নিয়ে,কিন্তু তাতে তিনি অনেক সম্পদ বোঝাই করে নিয়ে এসেছিলেন।
কিন্তু এরাই আমেরিকার মাটি ছোয়া পুরানো দুনিয়ার প্রথম সভ্য মানুষ নন।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে পাওয়া চীনা সম্রাটের মুদ্রা,ফারাওয়ের মমিতে পাওয়া তামাক আর কোকোয়া এবং ওলেমাক সভ্যতা ও জিনোনি উপজাতির মানুষের দৈহিক গড়ন,এই তিনটি বিষয় আমাদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দেয়,হাজার হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ পুরানো পৃথিবী থেকে নতুন পৃথিবীতে আসা যাওয়া করছে।
খ্রিস্টান ইউরোপ বা মুসলিম মধ্যপ্রাচ্য থেকে নয়,মানুষের আমেরিকার টিকিট কাটা শুরু হয়েছিল জাপান,চীন বা আফ্রিকার কোন কালো মানুষের মাধ্যমেই।
অথবা,শুরুটা পলিনেশিয়ান নাবিকদের দিয়েও হতে পারে,প্যাটাগোনিয়ার মালভুমিতে একবার দুটো মুরগির শুকনো হাড় পাওয়া যায়,কার্বন টেস্ট করে পাওয়া গেছিল,মুরগি দুটো সেখানে এসেছে অন্তত তিন হাজার বছর আগে,এবং সেগুলো পলিনেশিয়ান বনমুরগি।
আমেরিকা আবিষ্কারের পেটেন্ট তাই ইউরোপিয়ান এক্সপ্লোরার বা ইসলামিক মুবাল্লিগ কারোরই প্রাপ্য নয়,সেটা বরং পেতে পারেন কোন আফ্রিকান বা পলিনেশিয়ান নাবিক বা চাইনিজ অভিযাত্রী।
কিন্তু তাদের দুটো ঘাটতি ছিল।
এক নম্বর ঘাটতি ছিল,তারা ঐ জায়গাগুলোকে কলোনাইজ করতে পারেন নি।
দুই নম্বর ঘাটতি হল,তারা কখনোই আসা যাওয়ার রাস্তাকে নেভিগেশন চার্টে নিয়ে আসতে পারেন নি।খাসখাস ইবনে সাইদের চার্ট নাকি ছিল,কিন্তু হালাকু খানের হাতে বাগদাদের বাইতুল হিকমাহ ধ্বংসের সাথে সাথে সেটাও হারিয়ে গেছে।
তাই, ১৪৯২ সালে কলম্বাস যখন আমেরিকা আবিষ্কার করেন,তখন একটা নতুন যুগের শুরু হয়।তিনি শুধু গিয়ে ফিরে আসেন নি,আসা যাওয়ার পুরো পথ নেভিগেশন করে খুলে দিয়েছেন অজানাকে জানার স্থায়ী পথ।
সেই সাথে তিনি জন্ম দিয়েছেন দুটো
শব্দের,কলোনাইজেশান আর গ্লোবালাইজেশান।
ভু-গোলকটা কিভাবে ইউরোপের হাতের মুঠোয় ঢুকলো,সেই গল্পের শুরুটা এখানেই।
উৎস ঃ এখানে ক্লিক করুন ...
0 comments:
Post a Comment