Saturday, December 2, 2017

এইজ অফ ইউরোপিয়ান ডিসকভারি - ২


আটলান্টিক মহাসাগর সম্পর্কে ইউরোপে তখন চাউর ছিল হাজার রকম গুজব।
গভীর কুয়াশা আর অন্ধকারাচ্ছন্ন এই সাগরের গভীরে নাকি ড্রাগন,ক্র্যাকে
ন,হাইড্রা সহ হাজারটা দানবের বাস।বুড়োরা বলতো,এই সাগরের কোন শেষ নেই।
স্পেন বা পর্তুগাল থেকে তাই কোন জাহাজই পশ্চিমে বেশিদুর যেতে রাজি হত না।পশ্চিমে গেলেই সর্বনাশ।
কলম্বাস যখন পর্তুগালের রাজা জনের কাছে গেলেন,তখন এসবের সাথে সাথে জন আরেকটা কথাও ভাবলেন,পশ্চিমে যেতে যেতে সে যদি জাহাজ নিয়ে সূর্য ডোবার জায়গাটা পার হয়ে যায় তাহলে তো সে আর কোনদিনই ফিরে আসতে পারবে না,তখন যে টাকা পয়সা খরচ করে তাকে আমি পাঠাবো,সেটার কি হবে!!
মূলত এই চিন্তা করেই তিনি কলম্বাসকে পশ্চিমে পাঠানোর জন্য ফাণ্ডিং করতে রাজি হলেন না।কস্ট-বেনিফিট
ে পোষানোর কোন সম্ভাবনাই নাই এমন প্রজেক্টে ইউরোপিয়ান রাজারা হাত দেয়া বাদ দিয়েছেন ফিফটিন্থ সেন্ঞুরির মাঝামাঝি থেকেই।
কলম্বাস যখন পর্তুগীজ রাজার কাছ থেকে ফাণ্ডিং পেলেন না,তখন তাকে যেতে হল স্পেনের রানী ইসাবেলার দরবারে।
তার পশ্চিম দিক থেকে ভারতে যাবার পাগলাটে পরিকল্পনাটা প্রথম প্রথম রাণীর ভাল না লাগলেও একটা পর্যায়ে এসে রাণী ভাবলেন,এক দান জুয়া খেলাই যায়।
অন্ধকার বিপজ্জনক সাগরে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়া নাবিককে ফাণ্ডিং করা যে সে জুয়া না।এই জুয়া খেলতে ইউরোপ রাজি হওয়ার পেছনে মূল কারন ছিল দুটো।
এক নম্বর কারন,ক্রুসেড আর রিকনকুইস্তায় খরচ করতে করতে ইউরোপের স্টকে সোনা রুপার অভাব পড়ে গেছিল মারাত্মক রকম।ইটালিয়ান ব্যাংকগুলো পোপ আর সম্রাটদের চাহিদা মেটাতে মেটাতে মোটামুটি ফতুর।তার ওপর ইউরোপের মহাজন ছিল ইহুদীরা।তাদের কাছ থেকে ধার কর্জ নিতে নিতে ইউরোপের অর্থনীতি পুরোপুরি ইহুদীদের পকেটে চলে যাচ্ছিল।
তারপরও পূর্বে অটোমান আর পশ্চিমে বার্বারদের মোকাবেলা করতে সম্রাট ও চার্চের প্রয়োজন ছিল নতুন সোনা-রুপার মজুদের,যা দিয়ে তারা মুদ্রা বানিয়ে বড় সেনাবাহিনী পুষতে পারেন।
দুই নম্বর কারন ছিল,মসলা।
ইউরোপের শীতকাল ভীষন রকম লম্বা।অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত শীত,এপ্রিল-মে যাকে তারা বসস্ত বলে ওটাও নেহায়েত কম ঠাণ্ডা না।
মোট কথা,বছরে আটমাসই ইউরোপ থাকে ঠাণ্ডা।এই আট মাসের ছয় মাস ঘর থেকে বের হওয়াই দায়।এসময়টার জন্য সবাই ঘরে খাবার মজুদ করে রাখতো।সে সময়কার প্রধান মজুদ খাবার ছিল গোশত।
টানা ছয় মাস গোশতকে মজুদ করে রাখার পর তা খাবার উপযোগী করতে তাদের প্রয়োজন হত মশলার।এই মশলা আমদানির মনোপলি ছিল ভেনিসের।
অটোমানদের ট্যাক্স দিতে দিতে ভেনিসের তখন নাই নাই অবস্থা।
স্পেন-পর্তুগাল ভালমতই বুঝলো,পূর্বদিক দিয়ে তাদের জাহাজকে অটোমানরা ব্যবসা করতে দেবে না।কিন্তু যেহেতু দুনিয়াটা গোল,আর আফ্রিকাটার পূর্বে ভারত,কোনমতে আফ্রিকাটা ঘুরে পূর্বে পোছালেই ভারতে যাওয়া সম্ভব।
এই ধারনা বাস্তবে রুপ দেয়ার নথে প্রথম পদক্ষেপটা নেন পর্তুগীজ রাজা হেনরি দ্যা নেভিগেটর।
তিনি ইতালি,স্পেন,ফ্রান্স,পর্তুগাল,জ
ার্মানী,হল্যাণ্ড,মরক্কো,তিউনিস
িয়া,আলজেরিয়া ছেঁকে চ্যাম্পিয়ন সব নেভিগেটর,নাবিক,মেরিন ইন্জিনিয়ারদের নিয়ে আসেন,তেরি করেন এক রয়্যাল মেরিটাইম স্কুল।
এই স্কুল থেকে বের হতে থাকে দারুন সব আইডিয়া।গ্রীকো-রোমান আমলের নেভাল নলেজের সাথে তারা ইসলামিক সায়েন্সের ফিউশন ঘটায়,আল খাওয়ারিজমীর সুরত আল আরদ,আল ইদ্রিসীর তাবুলা রজারিয়াস,খাওয়ার
িজমীর অ্যাস্ট্রোল্যাব আর অ্যালজেব্রা,সেই সাথে আল বেরুনির ত্যিকোণমিতিকে তারা দারুণভাবে বশে এনেছিল,সেই সাথে অনেক ভুলত্রুটি শুধরে সেগুলোকে দিয়েছিল তখনকার সময়ের সবচাইতে অ্যাডভান্সড রুপ।
এরসাথে তারা ব্যবহার করতে শিখেছিল গ্রহ-নক্ষত্র দিয়ে সমুদ্রে নিজেদের অবস্থান বোঝার আরব টেকনোলজি ইফিমেরিস।
হেনরি মারা গেলেও তার বংশধররা স্কুলের ফাণ্ডিং বজায় রাখলেন।
সোনার ডিম পাড়া রাজহাস তার প্রথম ডিমটা দিল ১৪৮০ সালের দিকে।
দুই ধরনের স্পেশাল জাহাজ বানিয়ে ফেললো পর্তুগীজ রাজা জনের মেরিন ইন্জিনিয়াররা।
একটাকে বলা হত ক্যারাভেল,আরেকট
াকে বলা হত নাও।
ক্যারাভেল ছিল তখনকার সময়ের যে কোন জাহাজের চাইতে অনেক বেশি দ্রুতগতির।সামান্যতম বাতাসকেও এই জাহাজ কাজে লাগাতে সক্ষম ছিল।
ক্যারাভেলের এই তাক লাগানো গতির পেছনে মূল নায়ক ছিল পাল।এর আগ পর্যন্ত জাহাজে যে পাল খাটানো হত সেগুলো ছিল চারকোণা,ক্যারাভেলই প্রথম জাহাজ যাতে তিনকোণা ল্যাটিন পাল ব্যবহার করা হয়।
আর নাওগুলো ছিল একেকটা দানব।একেকটা নাও বহন করতে পারতো পাচশো থেকে দুই হাজার টন পর্যন্ত বিপুল ওজন,যা তখনকার যুগে ছিল এক বিস্ময়।বড় বড় কামানগুলো অনায়াসে লুকিয়ে রাখা যেত নাওয়ের ভেতরের কম্পার্টমেন্টে।
সেই সাথে ইউরোপের পশ্চিমে তখন আবিষ্কৃত হয়েছিল যুগান্তকারী এক ফুড টেকনোলজির।
তখনও মানুষ জানতো না যে লবণ দিয়ে ডিহাইড্রেটেড করে মাসের মাস ধরে খাবার তরতাজা রাখা যায়।
যখন এই টেকনোলজি পর্তুগীজরা পেয়ে গেল,তখন তাদের দুর দুরান্তে অভিযান চালাতে আর একটা মাত্রই বাধা রইলো,সেটা হল ফাণ্ডিং।
এই ফাণ্ডিংটা তখনকার স্পেন-পর্তুগালে
র রাজারা করতে রাজি হয়েছিলেন বলেই দুঃসাহসী নাবিকেরা বারবার বেরিয়ে পড়েছেন সমুদ্রজয়ে।
১৪৮৯ তে বার্থেলোমিউ ডায়াজের কেইপ অফ গুড হোপ জয় করার পর থেকে ১৫০০ সালে ক্যাব্রালের ব্রাজিলে নোঙ্গর করা,এর মধ্যে পর্তুগীজ-স্প্যানিশরা আবিষ্কার করে ফেলে পৃথিবীর দুই নতুন দিগন্ত,পূর্ব আর পশ্চিম,আবিষ্কার করে সম্পদে পরিপুর্ন সম্পুর্ন অজানা এক মহাদেশ,যার নাম তারা দিয়েছিল নতুন পৃথিবী।
ইউরোপ যেভাবে নতুন করে জগতটাকে আবিষ্কার করেছিল,তার মূলে ছিল রেনেসার যুগের সবকিছুকে নতুন করে দেখার আগ্রহ,আর এই আগ্রহের জন্ম দিয়েছিল তাদের তীব্র প্রয়োজন।ক্রুসেড করে করে,আর মসলার ব্যবসায় লালবাতি জ্বালিয়ে,দুশো বছরের ব্ল্যাক ডেথকে মোকাবেলা করে ইউরোপের এই ঘুরে দাড়ানোর গল্প চিরদিনের জন্য অবিস্মরনীয় হয়ে থাকবে পৃথিবীর ইতিহাসে।
ইউরোপ কেন মুসলিমদের সায়েন্স অ্যাণ্ড টেকনোলজিকে আপডেট করে ঘুরে দাড়াতে পারলো,মুসলিমরা কেন পারলো না,তার পেছনের মুল কারন তিনটা।
এক.প্রয়োজন
দুই.নতুন করে জগতকে জানার ইচ্ছা
তিন.পলিটিক্যাল উইল আর সবকিছুকে কস্ট বেনিফিট মডেলে ফেলার ইকনোমিক চিন্তা ভাবনা।

 

উৎস ঃ এখানে ক্লিক করুন ...

0 comments:

Post a Comment