নজরুলের সাহিত্যিক ভাতা

১৯৪২ সাল। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। অসুস্থতা রুদ্ধ করল তাঁর উপার্জনের সব পথ। অসম্ভব হয়ে পড়ল সংসার চালানো। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। যখন সুস্থ ছিলেন, বেহিসেবি জীবনযাপনের কারণে কোনো সঞ্চয় ছিল না। উত্তরাধিকার সূত্রেও পাননি কানাকড়ি সম্পত্তি। স্বভাবত এ সময় কবিকে নির্ভর করেত হয়েছে বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তা বা ভাতার ওপর। নজরুলের এই ভাতা তথা সাহিত্যিক ভাতা নিয়ে যত কিছু ঘটেছে, আদতে তা ঘটনাবহুল। সেই সময়কার নানা পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নজরুলের সাহিত্যিক ভাতার সংবাদ। সংবাদগুলোর নিরিখে যখন এ রচনা লিখছি, মনে হচ্ছে সম্প্রদায়-নির্বিশেষে কত মানুষ তখন দাঁড়িয়েছেন কবি ও কবি পরিবারের পাশে!
নজরুলের দুরবস্থা সম্পর্কে পত্রিকায় লেখা হয়, ‘বাঙালার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বহুদিন যাবৎ পক্ষাঘাতে শয্যাগত। অশক্ত হইয়া পড়ায় তিনি এখন নিঃস্ব ও কপর্দকহীন তাঁহার স্ত্রীও পক্ষাঘাতে শয্যাশায়িনী। চিকিৎসা দূরের কথা, এখন এরূপ সঙ্গতি নাই যে, শিশু পুত্রদ্বয়, রুগ্ন পত্নী ও নিজের আহার্যটুকু জোটে।’
কবির এই বিপৎকালে পরিচিত বন্ধুবান্ধব ও গুণগ্রাহীরা কেউ কেউ এগিয়ে এলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল অপ্রতুল ও অনিয়মিত। পত্রিকার মাধ্যমেও কেউ কেউ জনসাধারণকে কবির সাহায্যে এগিয়ে আসার আবেদন করেন। ১৯৪৪ সালের ২৪ মে ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার মাধ্যমে মাজহারুল হক ও মিরদেহ আসাদুর রহমান আবেদন করেন, ‘বাঙলার জাতীয় কবির প্রাণরক্ষায় সর্বসাধারণের অকুণ্ঠ সাহায্য একান্ত আবশ্যক।’
১৯৪৩ সালে কবির চিকিৎসা ও পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য বাংলার সেই সময়ের অর্থমন্ত্রী ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে সভাপতি এবং সজনীকান্ত রায়কে সম্পাদক করে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়। তবে এ কমিটির নাম নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। কেউ একে বলেছেন ‘নজরুল এইড ফান্ড’ (সুফী জুলফিকার হায়দার), কেউবা ‘সেন্ট্রাল নজরুল এইড ফান্ড’ (আনন্দবাজার) আবার দু-একজন বলেছেন ‘নজরুল সাহায্য কমিটি’ (মুজাফ্ফর আহমদ)। মুজাফ্ফর আহমদের সূত্রে জানা যায়, এই কমিটি বিভিন্ন সূত্র থেকে তহবিল সংগ্রহ করে এবং প্রতি মাসে কবির পরিবারকে ১৫০ রুপি ভাতা দেওয়া শুরু করে। অবশ্য সুফী জুলফিকার হায়দার বলেছেন, মাসিক ভাতা ছিল ২০০ রুপি।
অন্যদিকে, সজনীকান্তের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য কবির শাশুড়ি গিরিবালা দেবী আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন তাঁর ওপর। তিনি সাহায্য কমিটিতে সজনীকান্তের সম্পৃক্ততা পছন্দ করছিলেন না। এ কারণে মুজাফ্ফর আহমদকে নতুন একটি কমিটি গঠন করে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন গিরিবালা। মুজাফ্ফর আহমদ একটি কমিটি থাকতে অন্য আরেক কমিটি গঠনে রাজি হননি। এরপর গিরিবালা দেবী শ্যামাপ্রসাদকে পরিবারের বিভিন্ন অসুবিধার কথা উল্লেখ করে চিঠি দেন। ফল যা হয়—পরিবার এবং কমিটির ভেতরের টানাপোড়েনের কারণে শেষ পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে কমিটিটি।
" onclick="return false;" href="http://paimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2017/05/26/2820bb693cdb741a7e0c2d0470963cce-59271ef0b458c.jpg" title="" id="media_1" class="jw_media_holder pop-media-holder media_image jwMediaContent alignright pop-active" data-image="http://paimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/250x0x1/uploads/media/2017/05/26/2820bb693cdb741a7e0c2d0470963cce-59271ef0b458c.jpg" data-caption="" data-author="" url="http://www.prothom-alo.com/art-and-literature#detail-image-2">

এসব বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি অবিভক্ত বাংলার সরকারও এগিয়ে আসে সাহায্যে। মাসিক ২০০ রুপি হারে কবিকে ‘সাহিত্যিক বৃত্তি’ মঞ্জুর করে সরকার। সে সময়ে কোনো ব্যক্তিকে দেওয়া এটিই ছিল সর্বোচ্চ সরকারি ভাতা। বৃত্তি মঞ্জুরির বিষয়ে তখনকার মুসলিম লীগ নেতা ও অবিভক্ত বাংলার আইনসভার সদস্য হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরীর ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছিল অসামান্য। অর্থমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ আগে থেকেই বেসরকারিভাবে কিছু উদ্যোগ নিয়ে আসছিলেন কবির জন্য।
১৯৪৭-এর আগস্ট মাসে দেশভাগের পর বন্ধ হয়ে যায় বাংলা সরকার প্রদত্ত কবির ভাতা। ওই বছরের ৫ অক্টোবর কলকাতা থেকে প্রকাশিত আজাদ পত্রিকায় ফেনী কলেজের অধ্যাপক নাজমুল করিমের একটি চিঠি প্রকাশ পায়। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন:
‘যে কবি বাঙ্গালী জাতিকে এক যুগ ধরে স্বাধীনতার গান শুনিয়েছেন, যে কবি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছেন; তাকে আজ যে আর্থিক দৈন্যের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। যে স্বাধীনতার জন্য কবি লড়াই করেছেন সে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। কিন্তু আমরা কবির দুঃখ-দুর্দশা মোচনের জন্য আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র থেকে এক কানাকড়িও ব্যয় করিনি। এটি যে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে লজ্জাজনক ব্যাপার। বাঙ্গালী সরকার নামমাত্র যে ভাতা কবিকে দিতেন তা কোনো অজ্ঞাত কারণে আজ বন্ধ।...আমরা পূর্ববঙ্গ সরকারকে অনুরোধ করছি, তারা শীঘ্রই কবির জীবন নির্বাহের সব দায়িত্বগ্রহণ করুন।’
এরপর পত্রলেখক পূর্ববঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরী ও শিক্ষামন্ত্রী আবদুল হামিদকে কবির আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে সাহায্যের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান।
১৮ নভেম্বর আজাদের সম্পাদকীয় প্রতিবেদন থেকে জানা যায়:
‘সম্প্রতিঢাকা নগরীতে তমদ্দুন মজলিশের এক সভায় বর্ত্তমান বাংলার দুরবস্থাপন্ন সাহিত্যিকদিগকে সাহায্য দানের বিষয় আলোচিত হইয়াছে। পূর্ববঙ্গের তিনজন মন্ত্রী এই সভাতে উপস্থিত ছিলেন এবং এই বিষয়ে যথা প্রয়োজন ব্যবস্থা করিবার প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন। বাংলার পরম শ্রদ্ধার ও আদরের কবি নজরুল ইসলামের বর্তমান বিপদাবস্থার প্রতিকারের বিষয়ও সভাতে আলোচিত হয়। এ সম্পর্কে পূর্ববঙ্গের মন্ত্রী জনাব হাবিবুল্লাহ্ বাহারের একটি মন্তব্যের প্রতি আমরা জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রয়োজন মনে করি। তিনি বলিয়াছেন যে, কবি নজরুলের প্রয়োজন মিটাইবার ভার পশ্চিম ও পূর্ব উভয় বঙ্গের গভর্ণমেন্টেরই লওয়া কর্তব্য। এ মন্তব্যের যৌক্তিকতায়ও কাহারও সন্দেহ থাকিতে পারে না; কারণ কবি নজরুল উভয় বঙ্গেরই শ্রদ্ধার পাত্র হইলেও তিনি বর্দ্ধমান জেলার অধিবাসী ও পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক। তাঁহাকে সাহায্য দানের ব্যবস্থা করিতে পশ্চিমবঙ্গ গভর্ণমেন্ট যে কার্পণ্য করিবেন না তাহাতে আমাদের কোন সন্দেহ নাই। দুই বঙ্গের গভর্ণমেন্টের এই বিষয়ে পরামর্শ করিয়া ব্যবস্থা করা কর্তব্য এবং কবি নজরুলের বর্ত্তমান অবস্থা সম্বন্ধে আমরা যাহা জানি তাহাতে বলিতে পারি যে, এ বিষয়ে কিছুমাত্র বিলম্ব হওয়া বাঞ্ছনীয় নহে। জনাব হাবিবুল্লাহ্ বাহার ঐ বিষয়ে নিজেই উদ্যোগী হইয়াছেন, এ সংবাদে আমরা আনন্দিত হইয়াছি।’
১৯ নভেম্বরের আজাদ পত্রিকা থেকে জানা যায়, দেশভাগের আগে নজরুলকে দেওয়া মাসিক ২০০ রুপির সাহিত্যিক ভাতা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে পূর্ববাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তান সরকার। একই সংবাদে আরও উল্লেখ ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারও পুনরায় আগের ভাতা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করছে। একই সংবাদ ভারতীয় দৈনিক যুগান্তরের ২০ নভেম্বর সংখ্যায়ও প্রকাশ পায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরবর্তী সময়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, নজরুলের বৃত্তি বন্ধ করার কোনো অভিপ্রায়ই তাদের কোনো দিন হয়নি।
এরপর থেকে দুই দেশই নিয়মিত ভাতা দিতে থাকে কবিকে। তবে ১৩৫৯ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসের মাসিক প্রবাসীতে প্রকাশিত খবর থেকে এ তথ্য পাওয়া যায় যে বিষয়টি নিয়মিত হতে কিছু সময় লেগেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান সরকার ১৯৫০-এর সেপ্টেম্বর থেকে ’৫২-এর জুন অব্দি কবিকে প্রতি মাসে ভাতা পরিশোধ না করে একসঙ্গে দিয়েছিল। কলকাতায় পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশন অফিস থেকে তাঁকে এই ভাতা প্রদান করা হতো। দুই সরকারের ভাতার পাশাপাশি নজরুলের সাহায্যের জন্য উভয় বাংলায় কিছু কিছু বেসরকারি উদ্যোগের কথা জানা যায়। যেমন ১৩৫৮ সালের আষাঢ় সংখ্যা মাসিক প্রবাসী থেকে জানা যাচ্ছে:
‘এই বাঙালী কবির (কাজী নজরুল ইসলাম) ৫৩ বৎসর পূর্ণ হইয়াছে। তদুপলক্ষে নানা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান উৎসব করিয়াছেন। ‘ইন্টার ন্যাশনাল ফ্রেন্ডস লীগ’ স্থির করিয়াছেন যে তাহারা চিকিৎসার জন্য এক বৎসরের মধ্যে ২০০০০ টাকা তুলিবেন। ত্রিশ বৎসর পূর্বে যে কবি বঙ্গীয় সাহিত্য জগৎকে মুগ্ধ করেন তিনি আজ চলৎশক্তিহীন। বাকশক্তিও বিলুপ্ত।...আজ কবির চিকিৎসা উভয় রাষ্ট্রের দায়। তাহা সমাজের দায়।’
দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের ’৫১-এর ২৭ জুনের চিঠি থেকে জানা যাচ্ছে, ‘নজরুল এইড কমিটি’ দিনাজপুরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নজরুলের চিকিৎসার জন্য ১০৮৯ টাকা আট আনা সংগ্রহ করেছিল (প্রথম আলো, ২০ মে ২০১৬)।
’৬৫-এর সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে। ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রদত্ত কবির ভাতা বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকে। তবে ’৬৬-এর মে মাস থেকে তা আবার চালু হয়। এ সময় পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাওয়া সাহিত্যিক ভাতা বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে তিন শ টাকায় উন্নীত হয়েছিল।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে শুরু হয় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। এ সময় কলকাতার পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনের সবাই বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত আওয়ামী লীগের সাপ্তাহিক জয়বাংলাসূত্রে জানা যায়, কবিকে দেওয়া পূর্ব পাকিস্তানের সাহিত্যিক ভাতা তখন আবারও বন্ধ ছিল। এ জয়বাংলার ২৭ আগস্ট সংখ্যায় লেখা হয়েছে:
‘কবি নজরুল দেশভাগের পর পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩৫০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছিলেন। কিন্তু বিগত মার্চ মাস থেকে বাঙলাদেশে স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত কবি পাকিস্তান সরকারের ভাতা পাননি। তাঁর ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
একই সংবাদে এ-ও উল্লেখ ছিল, কবিপুত্র কাজী সব্যসাচী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সাহায্যের আবেদন করেছেন। ওই তারিখের যুগান্তর থেকে জানা যায়, ২৫ আগস্ট প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা এক জরুরি বৈঠকে নজরুলকে মাসিক ৩৫০ টাকা হিসাবে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংবাদে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকারের জনৈক মুখপাত্র আজ বলেন যে, বিদ্রোহী কবির প্রতি বাংলাদেশের অধিবাসীদের প্রগাঢ় ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার নিদর্শনরূপেই এই ভাতা মঞ্জুর করা হয়েছে।’ এ ছাড়া ৫ সেপ্টেম্বরের যুগান্তর জানাচ্ছে, কবিকে মাসিক ভাতা দিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর কলকাতার বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হোসেন আলী কবির বাড়িতে যান। মার্চ থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ভাতার মোট ২১০০ টাকা তিনি দিয়ে আসেন কবি পরিবারকে। এ সময় হোসেন আলী পত্রিকাকে জানান, ‘আমাদের সামর্থ্য অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। তবু আমরা আবার কাজী নজরুলকে তাঁর আকাঙ্ক্ষিত রাজ্যে অধিষ্ঠিত করব। যেখানে তাঁর কবিতা “চির উন্নত” অবস্থায় বিরাজিত থাকবে।’
বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হলো ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর। কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে নতুন ভাবনা দেখা দিল বাংলাদেশে। ১৯৭২-এর ৩০ জানুয়ারি নাম উল্লেখ না করে জনৈক ব্যক্তি ঢাকার দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভারে একটি চিঠি লেখেন। সেখানে তিনি বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় নজরুলের গান আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জোগাত অথচ কবিকে এ পর্যন্ত যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়নি। তিনি কবির আগামী জন্মদিনে (২৫ মে) হেলিকপ্টারযোগে তাঁকে কলকাতা থেকে ঢাকায় এনে বীরোচিত সংবর্ধনার পাশাপাশি নজরুলকে বাংলাদেশের সম্মানিত নাগরিকত্ব দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
২০ ফেব্রুয়ারি নজরুলের দুই পুত্র আসেন বাংলাদেশ সফরে। এ সময় কোথাও কোথাও চাউর হয়, কবিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন তাঁরা। পরে ১ মার্চ দৈনিক বাংলা লেখে, ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নজরুল একাডেমীর অনুষ্ঠানে কবি আবদুল কাদের নজরুলের সাহায্যার্থে তহবিল গঠনের প্রস্তাব রেখেছেন। তবে এসবের মধ্যেই শুরু কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে আনার তোড়জোড়।
২৪ মে ১৯৭২। ঢাকায় এসে পৌঁছালেন অসুস্থ নজরুল। ওই দিন বেলা তিনটের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখতে এলেন তাঁকে। সেখান থেকে ফিরে গিয়েই কবির জন্য এক হাজার টাকা করে সরকার থেকে মাসিক ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর পরিবারের বসবাসের জন্য বাড়ি এবং তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিল সরকার। বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় বাকি জীবন কিছুটা নির্ঝঞ্ঝাটে কাটে নজরুলের। আর ১৯৭২ সালেই ঘোষণা দেওয়া হলো তিনি আমাদের ‘জাতীয় কবি’। কিন্তু জাতীয় কবির উপাধি পেলেও তখনো নজরুল পাননি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব, তাঁকে নাগরিকত্ব দেওয়া হলো ১৯৭৬-এর জানুয়ারিতে। এর কয়েক দিন বাদে মারা গেলেন তিনি—২৯ আগস্ট ১৯৭৬।
তবে নজরুল এখনো সজীব, সপ্রাণ। আমাদের জীবনযাপনের ভেতরেই আছেন তিনি।
উৎস ঃ এখানে ক্লিক করুন ...
0 comments:
Post a Comment