Saturday, October 21, 2017

শূন্যস্থান: বাবার না থাকা নিয়ে সাশা সেগানের বক্তব্য



যখন কোনো রেস্টুরেন্টের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়, যখন কোনো চায়ের কাপ ভেঙ্গে যায়, যখন জীবনে কোনো পরিবর্তন ঘটে – তা যত ছোটো পরিবর্তনই হোক না কেন, মা সবসময় একটা কথাই বলে – ” এই কসমসে, পরিবর্তনের হাত থেকে কোনো নিস্তার নেই।”

কোনো কোনো পরিবর্তন বজ্রের মত দ্রুতগতিতে আসে। বাকিগুলোর প্রভাব স্পষ্ট হতে অনেকটুকু সময় লেগে যায়। যখন কোনো নক্ষত্র মারা যায়, সেটার অনুপস্থিতির ঢেউ ব্রহ্মাণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে আলোর গতিতে। আলোর গতি জিনিসটাকে অসম্ভব রকম দ্রুত মনে হয়, কিন্তু মহাশূন্যের ব্যাপক দূরত্বের কথা চিন্তা করলে সেটাও আসলে ততটা গতিময় থাকে না। দূর থেকে মৃত নক্ষত্রকেও উজ্জ্বল দেখা যায়, আসলে ওরা হারিয়ে গেছে সেই কবেই।

Sunday, October 15, 2017

কানাডার ‘ফল্’ - গুলফাম জান্নাত চমক



ইংরেজি শব্দ ‘ফল্’ এর প্রতিশব্দ টা কি হবে? হেমন্ত? দেশের হেমন্তে তো এক অন্য  ধরণের আনন্দ মিশে আছে। কানাডা তে এই ‘ফল্’ নিয়ে কিছুটা হৈচৈ চোখে পরে। আমার মনেই পড়ে না দেশ এ আমরা হেমন্ত নিয়ে কতোটা উৎসবী ছিলাম। বরং আমাদের বর্ষা , বসন্ত অনেক বেশী উৎসবী। আমাদের এক বৈশাখী আয়োজোনই তো পুরা পৃথিবীটাকে তাক লাগিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। পৃথিবীর আর কোন দেশ তার নিজস্ব সংস্কৃতিতে এত ধূমধাম করে বর্ষ বরন করে বলে আমার জানা নেই ।
আমার ‘ফল্’ দেখায় ফিরে আসি। বন্ধুরা মিলে একবার টরণ্টো শহর থেকে বেশ উত্তর এ মাশকোকা নামের এক জায়গায়  কটেজ এ চলে গেলাম। আয়োজন করে কানাডার ‘ফল্’ দেখার পালা। শুক্রবার কাজ শেষে পাঁচ বন্ধু-যুগল এর যাত্রা। অনেক আগে থেকেই অনলাইন এ কটেজ ভাঁড়া করে রাখা ছিল। পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় গভীর রাত। কারণ  অন্ধকার  গহীন বনের ভিতরে গাড়ীর হেড লাইট চারদিককে কেমন ঘুটঘুটে করে দিচ্ছিল। অনেক নাটকীয় যাত্রা শেষ এ কটেজ এর দেখা মিলল ।
ভোরে ঘুম ভাঙতেই দেখি লাল টুকটুকে রঙ্গের দোতলা  কাঠের বাড়িটি সবুজ পানির বিশাল লেক এর উপর দাঁড়িয়ে আছে। আর চারদিকে ধরে যাওয়া গাছের রঙ বনের মাঝে পুরো আবহকে  কেমন যেন স্বপ্নপূরী মনে হচ্ছিলো। রাতে ভুলেও ধারণা হয়নি এই গহীন বনে কেউ এত মুগ্ধকর  আয়জন করে রাখতে পারে।
আশেপাশে ঘুরে ফিরে ঘরে এসে টেবিলে খাবারের  আয়োজন দেখে স্বপ্নপূরীর আবহটা একেবারেই উধাও। খাবাররের বাড়াবাড়ি আয়োজন যাত্রার উদ্দেশ্য কে অনেকটাই হার মানিয়ে দেয়। এক বন্ধু তো (যার কী না রান্নায় তার স্ত্রীর সাথে হাত দেয়ার খূব বেশী  সুনাম নেই ! )  মহা আয়োজন করে সবাইকে  ‘ সি  ফূড’ রান্না  করে খাওয়ালো। আরেক  বন্ধুবর এর বাড়বীকিউ ও গ্রিল করার প্রস্তুতি দেখে আমি রীতিমত ভড়কে গেলাম। তার বাড়বীকিউ করার জন্য স্পেশাল এপ্রন এর পকেটে সব দরকারি চামচ জাতীয় জিনিস রাখা! বিশ্ববিখ্যাত ‘শেফ’ দের আয়জন হয়তো এমনি হয় (যদিও এই ভদ্রলোক এর সেই সম্ভাবনা নেই, উনি এখনো পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার)।
বেলা বাড়ার সাথেই শুরু হল ঘরের নিচের পানিতে মাছ ধড়ার প্রস্তুতি। আমার ধারনাই ছিল না মাছ ধরার জন্য লাইসেন্স লাগতে পারে! ভাগ্যিস আমাদের দেশে এমন নিয়ম নাই! তাহলে ছোট ছোট ছেলেরা খালে বিল এ যখন তখন মাছ ধরত কি করে ? মাছ ধরার ছিপ ও যে এত ধরনের হতে পারে! সবচাইতে অবাক হলাম প্লাস্টিক এর কেঁচো থেকে শুরু করে সব ধরণের পোকা মাকড় ও ছোট মাছ দেখে। কোনটিতে কি মাছ ধরা পড়বে তা রীতি মত গবেষণা করে তৈরি করা। যা হোক, এত আয়জনের পরও দিন শেষে এই আধুনিক জেলেদের বরফ দিয়ে সাজানো কুলার বক্স এ তেমন মাছের দেখা পাওয়া গেল না!
এখানেই শেষ নয়। আমার এক বন্ধুবর নিজেকে গ্রামের ছেলে দাবী করে কটেজের ডক এ সাজিয়ে রাখা ছোট প্লাস্টিকের  বোট (এইগুলি কে আমার কখনই নৌকা মনে হয় না) নিয়ে বেরিয়ে পরল। সম্ভবত পারদর্শিতা দেখানোর লোভেই বেচারা সাধ্যমত দূরে চলে গেল। কিন্তু সমস্যাটা শুরু হয় কিছুক্ষণ পর। ধরা পরল বেচারা  স্রোতের বিপরীতে পেরে উঠছেন না, বিশাল লেক এর মাঝে আটকে গেছেন। আরেক বন্ধু বোট নিয়ে  তাকে উদ্ধারএ যাত্রা শুরু করল। কিন্তু  আটককে পরা বোট থেকে অন্য  বোট এ
উঠতে যেয়ে ঠান্ডা (রীতিমত হিমশিতল) পানিতে বেচারার পতন ! কিছুটা হাসাহাসির পরই (এমন দৃশ্যে না হেসে পারা যায় ?) সবার মুখে এক ভয়ের ছায়া ! এখানে নাকি বেশি  ঠান্ডায় ‘হাইপোথারমিয়া’ হয়ে যায়!  মুখে  কেউ কিছু না বললেও ‘হাইপোথারমিয়া’ র ভয় থেকেও বুয়েট  স্টুডেন্ট এর সাথে পানির বৈরিতা’র অজানা ভয়টা আরও বেশী তাড়া করেছিলো সেদিন !  আমাদের সেই বন্ধুবর (বাড়বীকিউ ‘শেফ’)  কিভাবে যেন বোটের সাথে বোট বেঁধে সে যাত্রায় তাকে উদ্ধার করলো। কোন দুর্ঘটনা বা মাছ ছাড়াই এ ‘মাছ ধরা  উৎসব’ শেষ হল ।
সন্ধা হতেই শুরু হল গেইম এর  প্রস্তুতি। কেন জানি এই ধরণের বড়দের বসে বসে বুদ্ধির  খেলা গুলি কে  আমার ‘খেলা’ মনে হয় না। ‘গেইমস’ ই মনে হয়। আমাদের এক বন্ধু যুগল নতুন সব ‘গেইম’ নিয়ে রীতিমত  এস এস সি পরীক্ষা এর প্রস্তুতি থেকেও
বেশী সিরিয়াস ।  এইসব  গেইমস আমার গুরুগম্ভীর অধ্যাপক বরটি কেও   কি করে যেন ছেলেমানুস বানিয়ে আমাকে অবাক করে  দেয়! বন্ধুবর (সেই বাড়বীকিউ ‘শেফ’) মাঝরাতে এই  গহীন বনের মাঝে তার গানের সব  আধুনিক  ইন্সট্রুমেনট  নিয়ে  নিখুঁত আয়জোন করেও কেন জানি  চুপচাপ বসে থাকে। কোন এক অজানা কারনে তার আর গান গাওয়া হয় না।
পরের দিন ভোরে এইবার আমরা ফল্ দেখতে বের হই এলগনকুইন ন্যাশনাল পার্কে। শুধু চোখ ভরে দেখার জন্য  একটা উঁচু  টাওয়ার  তৈরি আছে পাহাড়ের চূড়ায়। উঁচু চূড়ায় দাঁড়িয়ে  বনের সব গাছের পাতায় শুধু  হলুদ আর লাল রঙ এর খেলা দেখে চোখ  কি ভীষণ ভাবেই  না চমকে  যায়। আমার ধারনাই ছিল না গাছের সবুজ পাতা  শুধু নিজের রঙ পরিবর্তন  করে প্রকৃতিকে এমন  বিচিত্র রূপ  ধরাতে পারে। আমি বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারি না, চোখ ধরে যায়।  চুপিসারে নীচে নেমে আসি। মাটির ছোট পথ  (হাইকিং লেন) ধরে রঙিন বনের মাঝে একা একা  হাটতে থাকি । এত উৎসব এর মাঝে  ও কেন জানি আমি  আরও বেশী পরিচিত আনন্দ এর সৃতি খুজে বেড়াই। আমার পরিবার এর সবার সাথে দেশের রাঙ্গামাটি তে বেড়ানোর আনন্দ কোত্থেকে যেন  উকি ঝুকি দেয়। তাকে পাত্তা না দিয়ে ইংরেজি শব্ধ  ‘ফল্’  এর প্রতিশব্দ টা খুজতে থাকি। হেমন্ত? হেমন্ত এর আকাশ কী এতটাই বিষন্ন ?  ঝরে যাওয়া লাল পাতাগুলি  মন উদাস করে আমার  হাটার সমান্তরালে কীভাবে যেন উড়ে ঊড়ে চলে ।  ‘ফল্’ এর রঙ্গিন ঝরা পাতার এই  আনমনে উড়ে চলা, গুমট বাতাসের  এই আবহ কি আসলে দেশ থেকে, প্রিয়জনদের থেকে অনেক দূর এ থাকা এক প্রবাসীর  অতি যতনে লালিত সেই  গভীর দীর্ঘশ্বাস?

গুলফাম জান্নাত চমক
টরণ্টো, কানাডা


Saturday, October 7, 2017

প্রবাল দ্বীপের হাতছানি - রাকিব কিশোর



বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে চারপাশের নীল পানিকে পাড়া-প্রতিবেশী বানিয়ে যে প্রবাল দ্বীপের বসবাস, সেটাই কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘রুপালি দ্বীপ’, প্রবাল দ্বীপ। পুবের এলোমেলো পাহাড় আর পশ্চিমের নীল সাগরের মাঝখানে তার বাস। নারকেল জিঞ্জিরা নামেও ডাকা হয় এ দ্বীপটিকে।
নীল সাগরের সাদা বালু আর টুকটুকে লাল কাঁকড়া দেখার টানে ছুটে গেছি স্বপ্নদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। সঙ্গে ছিলেন সারাক্ষণ হাসতে থাকা আরমান ভাই, হাসাতে থাকা রকি ভাই, চুপ মেরে থাকা অলি ভাই আর শাহেদ।
ছোট এই দ্বীপটা চাইলে হেঁটেই তিন ঘণ্টার মধ্যে পুরোটা ঘুরে বেড়ানো সম্ভব। তাই যাঁরা সকালে গিয়ে বিকেলেই ফেরত আসেন, তাঁরা কোনো মজাই পান না, এখানকার আসল মজা লুকিয়ে আছে বিকেল আর রাতগুলোয়। বিকেলবেলায় ভাটার টানে যখন সমুদ্রের পানি স্কুল ছুটির মতো সৈকত থেকে হুড়হাড় করে পালিয়ে যেতে থাকে, তখন প্রবালের খাঁজে খাঁজে হাঁটুপানিতে আটকে পড়ে রংধনু রঙের ছোট ছোট অনেক মাছের দল। শেষ বিকেলের এই মাছ দেখা সময়টা কাটতে না কাটতেই চলে আসে তারাভরা রাত। জোছনা এসে জড়িয়ে ধরে চিকচিকে বালুর সারা গা, নিথর কেয়াবনে শাঁ শাঁ করে ছুটে যায় ব্যস্ত বাতাস, সাগরের ফেনা আছড়ে পড়ে রুক্ষ প্রবালের গায়ে।
চাঁদের আলো গায়ে মাখা এই রুপালি দ্বীপে যিনি একবার জোছনা দেখেছেন, তিনি জেনেছেন পূর্ণিমা কী জিনিস, চাঁদের হাসি কাকে বলে!
সেন্ট মার্টিনে খুব ভোরে সূয্যিমামা জাগার আগেই প্রাতর্ভ্রমণে বের হয় লাল কাঁকড়ার দল। তাদের নিজ পায়ে করা শিল্পকর্ম দেখলে আর কোন শিল্পীর কাজ মনে ধরবেনা আপনার।
সেন্ট মার্টিনে গিয়েছিলাম দুটো কাজের জন্য। দেখা আর খাওয়া। বাংলাদেশের আর সব আনাচকানাচে গিয়ে খাওয়া নিয়ে বাছবিচার করলেও, সেখানে গিয়ে আমরা উদরপূর্তির বিষয়টায় রীতিমতো উদার হয়ে যাই। সারা দিন ছেঁড়া দ্বীপে টইটই করে ঘুরে পেটে রাক্ষুসে ক্ষুধা নিয়ে সন্ধ্যার সময় ফিরলাম বাজারে। উদ্দেশ্য, মাছের বারবিকিউ খাব। মাছ দেখে চক্ষু চড়কগাছ। কী বিশাল একেকটা! দোকানির প্লেটে শুয়ে আমাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে দেড়-দুই কেজি ওজনের রূপচাঁদা, টেকচাঁদা, কালাচাঁদা আর কোরালগুলো। চকচক করতে থাকা মাছগুলোর দিকে লোভনীয় দৃষ্টি ঢেলে দাম জানতে চাইলাম, ব্যাপক দর-কষাকষি শেষে দুটি বিশাল আকারের মাছ কিনলাম ৮৫০ টাকা দিয়ে, জীবনের সেরা বারবিকিউ খেলাম সেদিন। ফোলা পেট নিয়ে ঢুলতে ঢুলতে যখন সাগরের কিনারে এসে পা ডুবিয়ে দাঁড়ালাম, তখন ভরা পূর্ণিমার চাঁদকেও আড়াল করে দিল উত্তর-দক্ষিণে সোজা চলে যাওয়া দুধসাদা ছায়াপথ। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাঁদের আলোয় নাচতে থাকা বঙ্গোপসাগর জানান দিল, দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর একটায় কী নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ানো যায়।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বাস যায়। সেখান থেকে সকাল সাড়ে নয়টায় জাহাজ ছেড়ে যায় সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে। নাফ নদী পেরিয়ে তিন ঘণ্টা পর আপনি পৌঁছে যাবেন নারকেলের দ্বীপে। থাকা-খাওয়ার জন্য বেশ কিছু হোটেল আছে। যদি মাছের বারবিকিউ খেতে চান, তাহলে দোকান থেকে সরাসরি না কিনে একটু হেঁটে চলে যান মাছের আড়তে, বড় বড় মাছ পাবেন, পাবেন শুঁটকিও। হোটেলগুলোয় আপনার পছন্দমতো রেঁধে দেবে মাছ। এখানে বিকাল তিনটার পর সবকিছু পাবেন অর্ধেক দামে। আরেকটা কথা, এখানে গেলে অবশ্যই এক রাত থাকবেন। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রাত আপনার জন্য লুকিয়ে রেখেছে জল-পাথরের এই রুপালি দ্বীপটা।

Wednesday, October 4, 2017

Tuesday, October 3, 2017

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সূত্রপাত














পৃথিবীতে ঘাড়ত্যাড়া মানুষের কখনও অভাব হয়নি। যুগে যুগে মহান মহান সব ঘাড়ত্যাড়াগণ জন্ম নিয়ে পৃথিবীটাকে ধন্য করে দিয়েছেন। উপরে যে ভদ্রলোককে দেখছেন, তিনি তাঁদেরই একজন। ভদ্রলোকের নাম রিচার্ড ফিলিপ ফাইনম্যান। পৃথিবীর ইতিহাসের বাঘা বাঘা কয়েকজন পদার্থবিজ্ঞানীদের একজন। তিনি পদার্থবিজ্ঞানে দুইবার নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার যখন পুরষ্কারটি পান তখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। এক সাংবাদিক তাঁকে কল দিয়ে ডেকে তুলে সুসংবাদটি দেয়। তখন ফাইনম্যান বলেছিলেন ‘আমি যদি তৃতীয়বারের মতো পুরষ্কার পাই তাহলে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। এই সংবাদের চেয়ে আমার কাছে ঘুম বেশী গুরুত্বপূর্ণ!’ যা হোক, পুরস্কার গ্রহণ করার পর সাংবাদিকরা যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করে, তিনি ঠিক কী কারণে নোবেল পুরষ্কার পেলেন তখন তিনি উদাস গলায় জবাব দিয়েছিলেন ‘যদি আমি জিনিসটা সাধারণ জনগণকে এতো সহজে বুঝাতে পারতাম তাহলে নিশ্চয় এটার জন্য নোবেল পুরষ্কার পেতাম না!’
ফাইনম্যানের কর্মক্ষেত্র ছিল কোয়ান্টাম মেকানিক্স। এই বিষয়ে পৃথিবীর সেরা কয়েকজন হবার পরও তিনি একবার বলেছিলেন – ‘আমি দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি, কোয়ান্টাম মেকানিক্স আসলে কেউ বোঝে না!’

Monday, October 2, 2017

দি নেকলেস-গাই ডি মোপাসাঁর




তিন দিনের ব্যবহৃত টেবিল-ক্লথে ঢাকা গোল-টেবিলে বসে যখন মেয়েটির স্বামী খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে স্যুপের বাটির ঢাকনা খুলতে খুলতে বলছিল, “আহা! স্কচ স্যুপ! এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে?”, মেয়েটি সেসময় তাঁর স্বামীর মুখোমুখী বসে স্বপ্নের জাল বুনছিল রুচিকর খাবারের, ঝলমলে রুপোর বাসন-কোসনের, দেয়াল জুড়ে সাজানো রেশমি কাপড়ের ক্যনাভাসে আঁকা প্রাচীন লোক-গাঁথা, মায়াময় অরণ্যের রূপকথার সব পাখি; সে কল্পনায় জমকালো পাত্রে সুস্বাদু সব খাবার পরিবেশন করছিল, গুন গুন করে গান গাইছিল, যেন কেউ ট্রাউট মাছের গোলাপি মাংস কিংবা তিতিরের ডানা খেতে খেতে রহস্যময় মিষ্টি হাসি নিয়ে তাঁর দিকে তাঁকিয়ে আছে।

মেয়েটির ভালো কোনো পোশাক নেই, গহনা নেই, নাহ! কিছুই নেই। অথচ সে এই জিনিসগুলোকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসত; সে অনুভব করত, এ সবের জন্যই যেন তাঁকে বানানো হয়েছে। সে চাইত খুব সুখী হতে, চাইত ঈর্ষার পাত্রী হতে, অন্যের কাছে পরম আকাঙ্খিত, মনোহারিনী হয়ে থাকতে।

ঘাড়ত্যাড়া দুই থিওরির কথা



প্রকৃতি বরারবরই খুব দুষ্টু প্রজাতির। সে নিজের অন্দরমহল কাউকে দেখতে দিতে রাজি হয় না। এবং এগুলো কোনো চটিগল্পের লাইনও না, মহাবিশ্ব নিয়ে লিখার চেষ্টা করছি আর কী! যা হোক, তারপরেও প্রকৃতির এই গোপন ভাণ্ডারে পৃথিবীর সেরা সেরা সব মেধা যুগ যুগ ধরে বাংলা সিনেমার ভিলেন স্টাইলে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে। এসব হামলা থেকে বাঁচার জন্য প্রকৃতিও নানারকম ছলনায় ভুলিয়েছে এসব মেধাবীদের। যেমন ধরা যাক স্যার আইজ্যাক নিউটনের কথা। এই ভদ্রলোক প্রথম মানুষ প্রকৃতি যার প্রেমে পড়েছিলো। আর ব্রিটিশরা কখনোই সুবিধার প্রাণী ছিলো না, প্রেমের সুযোগে ভদ্রলোক প্রকৃতির অন্দরমহল দেখে ফেলেন অনেকখানি। ১৬৬৫ সালে ইউরোপে প্লেগের প্রকোপ দেখা দেয়। তখন স্যার আইজাক নিউটন কেমব্রিজের ছাত্র। কেমব্রিজ কর্তৃপক্ষ প্লেগের ভয়ে বাধ্য হয়ে ভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা করে। এবং টানা দুইবছর ভার্সিটি বন্ধ থাকে। আর বিশ্বাস হোক বা না হোক, মাত্র এই দুই বছরের মধ্যে তিনি তাঁর জীবনের সব গবেষণাগুলো করে ফেলেন যেগুলো আমরা ক্লাস সিক্স থেকে পিএইচডি লেভেল পর্যন্ত ফিজিক্স আর ম্যাথে পড়ি! তখন তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ২৫! আগেই বলেছি ব্রিটিশরা সুবিধার জাতি না, তাই মাত্র দুই বছর পরেই তিনি প্রকৃতির উপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, বাকি জীবন তিনি অপব্যায় করেছেন আলকেমি নামক এক ছদ্মবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে। এই মানুষটি আরও চেষ্টা চালিয়ে গেলে প্রকৃতি হয়তো তার অন্দরমহলের সবকিছুই দিয়ে দিত বাধ্য হয়ে, কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য তা হয়নি। প্রকৃতি সফলভাবে তার ইজ্জত বাঁচাতে সক্ষম হয় সে যাত্রায়।

Sunday, October 1, 2017

দুধভাতে উৎপাত- আখতারুজ্জামান ইলিয়াস



একটু বেলা হলে বৃষ্টি ধরে এলো। তবে আবুল মাস্টারের উত্তরপাড়ার জমিতে পাট কাটা শুরু হয়েছে, শালার মাস্টার আজ আসবে না। ইস্কুলে গেলে জুত করে ভেলায় চাপা যায়। ইস্কুলের নিচে এবাদত মুন্সির বড় ভেলাটা বাঁধাই রয়েছে, লগির ১২-১৪টা ঠেলা দিলেই একেবারে ধলেশ্বরীর তীর। সাড়ে ১০টার লঞ্চে উঠে কাপড়ের গাঁটের ওপর বসে থাকা প্যাসেঞ্জারদের সামনে সুর করে ‘মা ফাতেমা কাইন্দা বলে বাপ কোথায় আমার/হায়রে নবীজির এন্তেকালে দুনিয়া জারজার’ গাইতে গাইতে বাঁ পাটা খুঁড়িয়ে হাঁটলে দুই-আড়াই টাকা জোগাড় করা এমন কিছু নয়। তারপর রামেশ্বরদী ঘাটে নেমে কদম আলীর দোকানে বসে চায়ে ভিজিয়ে বনরুটি খাও, পেয়ারা খাও, গাব খাও, পয়সা থাকলে চাই কি মেঘনা সিগ্রেটও একটা জুটে যায়। ১টা ৫০-এর লঞ্চে বাড়ি ফিরলে মায়ের সাধ্য কী ধরে যে ছেলে তার আধখানা পেটে জামিনের বন্দোবস্ত করে এসেছে।


কিন্তু ওদিকে আকাশ থামে তো জয়নাবের পাড়া ফাটানোর বিরতি নেই। এই মিনিট দশেক হলো একটু জিরান দিয়েছে। এটাই সুযোগ, জয়নাব ফের শুরু করলে তাকে বোঝানো যাবে না। ঝাঁপ তুলে উঠানের কোণে মানকচুর ঝোপ থেকে বড় দেখে একটা মানপাতা ছিঁড়ে মাথার ওপর ধরে এক হাতে স্লেট ও মলাট-ছেঁড়া ধারাপাত নিয়ে ওহিদুল্লা পা বাড়াল। অমনি অনেকক্ষণ একটানা চ্যাঁচানোর পর ক্লান্তিতে হাঁপাতে-থাকা জয়নাব কাতরায়, ‘ওইদুল্লা! ইস্কুলে যাইস না!’

‘আইজ আমাগো পরীক্ষা। না গেলে মাস্টারে মারবো!’

আল মাহমুদ এর গল্প জলবেশ্যা









পেঁয়াজ আর রসুনের মরশুমে লালপুর হাটের চারপাশের গ্রামগুলোতেও পেঁয়াজ রসুনের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। হাটের দুমাইল দূর থেকেও বাতাসে কাঁচা পেঁয়াজের ঝাঁঝালো গন্ধটা বেপারিদের নাকে এসে লাগে। গন্ধটা তখন আর শুধু পেঁয়াজের গন্ধ থাকে না। রসুনেরও একটা অহংকারী গন্ধ আছে, যা বাতাসে পেঁয়াজের গন্ধের সাথে মিশে বাতাসকে স্বাদযুক্ত করে তোলে।

এ ধরণের কাঁচা মশলার মরশুমে শুধু যে বাজার আর বাতাসেই গন্ধটা ছড়িয়ে পড়ে তা নয়। হাটের চারপাশের এলাকার মানুষের শরীরেও এ গন্ধটা থাকে। কথা বললে তাদের মুখ থেকেও পেঁয়াজ-রসুনের গন্ধ বেরোয়। তাদের ঘামে, বগলের নিচের চুলের গন্ধটা এমন তীব্র হয়ে ওঠে যে, কোনো লোক যে পেঁয়াজ-রসুনের ব্যবসা করে না, তার পক্ষে এ পরিবেশ তিষ্টানো দায়।